দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি জেনে নিন

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কি জানতে চান দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি? তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব যে দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি। 

তাই আসুন পাঠক বন্ধুরা আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে আমরা আলোচনা করি দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি।

খালি পেটে দারুচিনি খেলে কি হয়

দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি তা জানার আগে আমরা জেনে নেব যে খালি পেটে দারুচিনি খেলে কি হয়। দারুচিনি হচ্ছে চিরহরিৎ এক প্রকার গাছের ছাল বা বাকল এবং এই বাকল থেকে প্রাপ্ত মসলা হয়। যা আমরা তরকারিতে বা রান্নাবান্নার কাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। 

আরো পড়ুন: খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা কি জেনে রাখুন

দারুচিনি শ্রীলংকা, মায়ানমার, দক্ষিণ আমেরিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ বিভিন্ন দেশে চাষ হচ্ছে। দারুচিনি শুকনো গাছের ছাল সম্বলিত বাদামি রং এর একটি সূক্ষ্ম সুগন্ধি যুক্ত একটি উষ্ণ মিষ্টি জাতীয় গাছের ছাল। দারুচিনি থেকে তরকারি থেকে পানিয় হতে বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ নিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং কোন কোন জায়গায় বেকারি পণ্যগুলোতে জনপ্রিয় ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

এটি খাবার, চায়ের সঙ্গে এবং ওষুধে ব্যবহারের জন্য বাকলের টুকরো থেকে অপরিহার্য তেল পাওয়া যায়। এছাড়া দারুচিনি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রান্নাবান্নার সুবিধার জন্যে ব্যবহার করা ছাড়াও আমাদের শারীরিক বিভিন্ন ধরনের রোগের সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যাপকভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

দারুচিনি মসলার উৎস হিসাবে বিভিন্ন প্রজাতির চাষ করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে চাইনিজ ক্যাশিয়া, ভিয়েতনামি বা সাইগন দারুচিনি, ইন্দোনেশিয়ান দারুচিনি এবং মালাবার দারুচিনি। খালি পেটে দারুচিনি খেলে কি হয়-

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে- বিশেষজ্ঞদের মতে দারুচিনি দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ইহা দেহের হজম কারক  এনজাইম গুলোকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে এই পানি হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেট ফোলা, গ্যাস্টিকের সমস্যা কমিয়ে দেয়।

দারুচিনি ওজন কমায়- বিশেষজ্ঞদের মতে দারুচিনি মেশানো পানি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।  দারুচিনি পানি খেলে খাবারের অতিরিক্ত ক্যালরি পুড়িয়ে বিপাকক্রিয়ার গতি বাড়াতে সহায়তা করে।  

শরীরের প্রদাহ বা ব্যথা কমায়-দারুচিনিতে  প্রদাহ রোধি উপাদান থাকার কারণে দারুচিনি মেশানো পানি খেলে শরীরের ভিতরে জ্বালা যন্ত্রণা ও অন্যান্য ব্যথা কমে যায় এবং আর্থাইটিসের মতো রোগসহ শরীরের বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তি এবং ব্যথা কমে যায়।

মানসিক টেনশন দূর করে-দারুচিনিতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা এটি মেশানো পানি খেলে মানসিক চাপ দূর হয়। শরীরের কোষ কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। এবং এই দারুচিনি মেশানো পানি খেলে দীর্ঘস্থায়ী রোগ উপশম হয় এবং সার্বিকভাবে মন মানসিকতা ভালো থাকে। 

হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে-প্রতিদিন নিয়মিত দারুচিনি মেশানো পানি খেলে নিকৃষ্ট কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইটস/শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে দেয় এবং এটি শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দারুচিনি মিশ্রিত পানি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে- দারুচিনিতে জীবাণু নাশক উপাদান থাকার কারণে আমাদের শরীরে ইনফেকশন বা সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়।খালি পেটে দারুচিনি মেশানো পানি খেলে শরীরকে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ব্রেন ভালো রাখে-দারুচিনি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকারিতার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ু ক্ষয়জনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন নিয়মিত দারুচিনির পানি খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

ত্বকের জন্য উপকারী- অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের মতে দারুচিনির প্রদাহ রোধি এবং জীবাণু নাশক উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। এই দুটি উপাদানের কারণে ত্বকে ব্রণ উঠতে বাধার সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত দারুচিনি মেশানো পানি পান করলে ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং ত্বকের সমস্যার সমাধান হয়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমায়-মহিলাদের মাসিকের ব্যথা কমাতে দারুচিনি দারুণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত দারুচিনি পানি খেলে নারীদের প্রজনন ও হরমোন জনিত পলিসিস্টিক ওভারি সিনডোমের কেন্দ্রের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ কমিয়ে দিতে পারে।

দারুচিনি খেলে কি ক্ষতি হয়:

দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি তা জানার পূর্বে আমরা জানবো যে এটা খেলে কি ক্ষতি হয়। দারুচিনি অত্যন্ত সুস্বাদু মশলা।অসাধারণ স্বাদের জন্য সারা বিশ্বে এটি বেশ কদর রয়েছে। এর মধ্যে নানা ধরনের ওষুধি গুনা গুন থাকা সত্ত্বেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

রক্ত পাতলা করে- দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যারা ওষুধ সেবন করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এটা না খাওয়াই উত্তম। দারুচিনিতে থাকা যৌগ গুলি ডায়াবেটিসের ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে যা ডায়াবটিস রোগীদের জন্য বিপদ সংকেত হতে পারে।

আরো পড়ুন: সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি জেনে নিন 

গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্ষতিকারক-দারুচিনি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য না খাওয়াই ভালো কারণ এটা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। গর্ভবতী মহিলারা অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে জরায়ু সংকোচনের কারণ হতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলারা এটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো কারণ এটি খেলে অকালে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


ফুসফুসের সমস্যা-দারুচিনিতে রয়েছে কোমোরিন নামক উপাদান যা লিভারের জন্য ক্ষতিকারক। এটি নিয়মিত খেলে লিভারের সম্পর্কিত জটিলতার লক্ষণ গুলি আরো জটিল করে তুলতে পারে। যারা লিভারের সমস্যা এবং জন্ডিসে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে দারুচিনি খাওয়া উচিত নয়।

মুখের আলসারের সমস্যা-অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে যাদের মুখে আলসার রয়েছে তাদের আরো বেশি সমস্যা হয়ে যেতে পারে। এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে এলার্জির সমস্যাও বাড়তে পারে।

অস্ত্রপচার-যাদের শরীরে অস্ত্রপচার করা হয়েছে বা অস্ত্রপচার হবে তাদের ক্ষেত্রে দারুচিনি খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি খেলে ক্ষতস্থানে সমস্যা হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা: 

এ পর্যায়ে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করব দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি। দারুচিনি রান্নাবান্নার খেতে ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হলেও এর মধ্যে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে রয়েছে সোডিয়াম,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন,ভিটামিন সি, আয়রন, 

ভিটামিন বি৬, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, সুগার, ক্যালোরি, এন্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান। প্রতি 100 গ্রাম দারুচিনিতে রয়েছে পানি ১০.৫৮ গ্রাম, এনার্জি ২৪৭ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন ৩.৯৯ গ্রাম,ফ্যাট ১.২৪ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৮০.৫৯ গ্রাম ও শর্করা ২১৭ গ্রাম। 

দারুচিনি মসলা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে রান্নাবান্নার কাজে খাবারে সুন্দর সুগন্ধ নিয়ে আসে এবং খাবারের স্বাদ হয় চমৎকার।এছাড়া দারুচিনিতে প্রচুর পরিমাণে ওষুধি গুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

দারুচিনির উপকারিতা-

দারুচিনি ওজন কমায়- দারুচিনি পানি নিয়মিত খেলে আপনার অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ওজন কমাতে ব্যাপক কাজ করে। খালি পেটে নিয়মিত দারুচিনি পানি খেলে বিপাকে প্রভাব ফেলে, মেদ, ভুঁড়ি কমায় এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। ফলে শরীরের ওজন কমে যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে- নিয়মিত দারুচিনি খাওয়ার ফলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দারুচিনির সম্পূরক ডায়াবেটিস রোগীর হিমোগ্লোবিন এ ১ সি এর মাত্রা এবং উপবাসে রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে কাজ করে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে-নিয়মিত দারুচিনি খাওয়ার ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। দারুচিনি ট্রাইগ্লিসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এতে ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কম হয় ও হৃদপিন্ডের উপর চাপ কমিয়ে দেয়।

হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়-দারুচিনি নিয়মিত খেলে কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষমতা হৃদ ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। নিয়মিত দারুচিনি পানি পানে হৃদ স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে-দারুচিনিতে রয়েছে প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী উপাদান যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দারুণভাবে কাজ করে। দারুচিনি পানি নিয়মিত পান করলে শারীরিক অসুস্থতা ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। নিয়মিত খালি পেটে দারুচিনি মেশানো পানি খেলে শরীরকে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

বিষাক্ত উপাদান বহির্গত-দারুচিনিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে এবং শরীরকে ফ্রি রেডিকেল এর কারণে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে- দারুচিনি দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ইহা দেহের হজম কারক এনজাইম গুলোকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে এই পানি হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেট ফোলা, গ্যাস্টিকের সমস্যা এবং বমি বমি ভাব কমিয়ে দেয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে-এক গবেষণায় জানা গেছে নিয়মিত দারুচিনি পানি খেলে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ফেলতে সহায়তা করে। দারুচিনির নির্যাস ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বেশ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের শরীরের কোষের বৃদ্ধি হওয়াকে প্রতিরোধ করে এবং টিউমারে রক্তনালি তৈরি করে। 

আন্টি ইনফ্লামেটরি-দারুচিনিতে আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকার কারণে আপনার শরীরকে সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে ব্যাপক কার্যকারী ভূমিকা রাখে এবং টিস্যুর ক্ষতি মেরামত করতে সাহায্য করে। এছাড়া মানসিক অবসাদ দূর হয়।

শরীরের প্রদাহ কমায়-দারুচিনিতে রয়েছে প্রদাহরোধী উপাদান যা নিয়মিত দারুচিনি পানি খেলে শরীরের ভিতরে জ্বালা-যন্ত্রণা ও ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে এবং আর্থাইটিসের মতো রোগ সহ শরীরের নানা ধরনের অস্বস্তি কমিয়ে দিতে ব্যাপকভাবে কার্যকরী।

মস্তিষ্ক ভালো থাকে-নিয়মিত দারুচিনি পানি পান করার ফলে মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। এটি স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত জনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং নিয়মিত দারুচিনি মিশানো পানি খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

ত্বকের স্বাস্থ্যে ভালো থাকে-দারুচিনিতে প্রদাহরোধী ও জীবনু নাশক উপাদান থাকার কারণে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে। এই দুটি উপাদানের কারণে মুখের ব্রণ উঠতে বাধার সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দারুচিনি মেশানো পানি নিয়মিত পান করলে শরীরের ত্বক ভালো থাকে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমায়- দারুচিনি মেশানো পানি নিয়মিত পান করার ফলে মহিলাদের মাসিকের সময় যে ব্যথা হয় সেই ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং নারীদের প্রজনন ও হরমোন জনিত পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের বিভিন্ন লক্ষণ কমিয়ে দেয়।

ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণ -দারুচিনিতে জীবাণু নাশক উপাদান থাকার ফলে এটি নিয়মিত খেলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া দারুচিনি মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ব্যাপকভাবে কার্যকরী।

সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে-দারুচিনিতে রয়েছে পলিফেনল নামক উদ্ভিদ যৌগ যার প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে।ভ এর ফলে নিয়মিত দারুচিনি খেলে শরীর সুস্থ থাকে এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমতে থাকে দারুচিনি এর মধ্যে অনেক ঔষধি গুন থাকার ফলে এটি নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে।

মন ভালো থাকে- দারুচিনির সুগন্ধ প্রত্যেকটা মানুষের মেজাজ খারাপ থাকলেও এক টুকরো দারুচিনি মুখে দিলে তা মুহূর্তের মধ্যেই মেজাজ ভালো হয়ে যায়। দারুচিনি মানুষের মানসিক অবসাদ কমিয়ে শরীর এবং মন দুটিকেই ভালো রাখতে সহায়তা করে।

ঠান্ডা কাশি উপশম করে-নিয়মিত দারুচিনি পানি খাওয়ার ফলে শরীরের সর্দি কাশি কমে যায় এবং ঠান্ডা লাগার মত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। 

দাঁতের ব্যথার রোধ করে-নিয়মিত দারুচিনি পানি খাওয়ার ফলে দাঁতে যদি কোন ব্যথা থেকে থাকে তা কমাতে সহায়তা করে এবং অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ সহ অন্যান্য দাঁতের সমস্যা দূর করতে কাজ করে এই দারুচিনি।

যক্ষা রোগ কমায়-দারুচিনি নিয়মিত খাওয়ার ফলে যক্ষা রোগ কমে যেতে পারে এবং শরীরে কোথাও রক্তক্ষরণ হলে ক্ষতস্থানে দারুচিনি ব্যবহার করলে রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া চর্ম সমস্যা যেমন চুলকানি, এলার্জি, ফোঁড়া সারাতে এটি বেশ উপকারী। মধু ও দারুচিনি মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়-নিয়মিত দারুচিনি পানি খাওয়ার ফলে চোখের দৃষ্টি শক্তি বেড়ে যেতে পারে। আমরা অনেকেই আছি যারা চোখে ঝাপসা দেখি বা কম দেখি তাদের ক্ষেত্রে দারুচিনির তেল চোখের উপরের পাতায় লাগালে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

মানসিক টেনশন দূর করে-দারুচিনিতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা এটি মেশানো পানি খেলে মানসিক চাপ দূর হয়। শরীরের কোষ কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। এবং এই দারুচিনি মেশানো পানি খেলে দীর্ঘস্থায়ী রোগ উপশম হয় এবং সার্বিকভাবে মন মানসিকতা ভালো থাকে। 

দারুচিনি কিভাবে বানাবেন বা খাবেন-প্রথমে আপনি দারুচিনি গুঁড়ো করে নিবেন। তারপর এক চিমটি দারুচিনির গুঁড়ো এক গ্লাস ফুটানো পানিতে মিশিয়ে নিন। তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে চামচ দিয়ে ধীরে ধীরে নেড়ে গুলিয়ে নিন। তাহলেই হয়ে গেল দারুচিনি পানি তৈরী। এই দারুচিনির পানি আপনি গরম অবস্থায় খেয়ে নিতে পারেন অথবা হালকা গরম বা ঠান্ডা করেও খেতে পারেন। 

এছাড়া দারুচিনি গুড়া করে খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে অথবা চায়ের সঙ্গে  মিশিয়েও খাওয়া যায়।এতে দারুন উপকার হয়।

দারুচিনির অপকারিতা-

দারুচিনি অত্যন্ত সুস্বাদু মশলা।অসাধারণ স্বাদের জন্য সারা বিশ্বে এটির বেশ কদর রয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। দারুচিনির মধ্যে নানা ধরনের ওষুধি গুনাগুন থাকা সত্ত্বেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

রক্ত পাতলা করে- দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যারা ওষুধ সেবন করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এটা না খাওয়াই উত্তম। দারুচিনিতে থাকা যৌগ গুলি ডায়াবেটিসের ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদ সংকেত হতে পারে।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্ষতিকর-দারুচিনি গর্ভবতী মহি দুলাদের জন্য না খাওয়াই ভালো কারণ এটা খেলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। গর্ভবতী মহিলারা অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে জরায়ু সংকোচনের কারণ হতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলারা এটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো কারণ এটি খেলে অকালে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফুসফুসের সমস্যা-দারুচিনিতে রয়েছে কোমোরিন নামক উপাদান যা লিভারের জন্য ক্ষতিকারক। এটি নিয়মিত খেলে লিভারের সম্পর্কিত জটিলতার লক্ষণ গুলি আরো জটিল করে তুলতে পারে। যারা লিভারের সমস্যা এবং জন্ডিসে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে দারুচিনি খাওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

মুখের আলসারের সমস্যা-অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে যাদের মুখে আলসার রয়েছে তাদের আরো বেশি সমস্যা হয়ে যেতে পারে। এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে এলার্জির সমস্যাও বাড়তে পারে। তাই এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

অস্ত্রপচার- যাদের শরীরে অস্ত্রপচার করা হয়েছে বা অস্ত্রপচার করা হবে তাদের ক্ষেত্রে দারুচিনি খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি খেলে ক্ষতস্থানে সমস্যা হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। দারুচিনি রক্তকে পাতলা করে সেজন্য আপনি যদি কোন অস্ত্রপ্রচার করাতে যাচ্ছেন অথবা সাম্প্রতি কোন অস্ত্রপ্রচার করিয়েছেন সে ক্ষেত্রে দারুচিনি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

লিভারের ক্ষতি- যেকোনো জিনিস অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি হতে পারে।দারুচিনির মধ্যে কুমারীন নামক একটা উপাদান রয়েছে যা বেশি মাত্রায় খেলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। যে সমস্ত ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত ওষুধ খান তাদের ক্ষেত্রে দারুচিনি না খাওয়াই ভালো।

পাকস্থলীর জলুনি- দারুচিনিতে একটা স্বাভাবিক উষ্ণতাদায়ক প্রভাব থাকার কারণে প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে এটি বেশি গ্রহণ করলে পাকস্থলীতে জলুনির সৃষ্টি হতে পারে।

আরো পড়ুন: খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয়

ত্বকের জ্বালা যন্ত্রণা-অমিশ্রিত দারুচিনি তেল হল একটা পরিচিত ত্বক জলনকারী উপাদান। তাই আপনার শরীরে এটা লাগাবার আগে আপনাকে একটা প্যাচ পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।

সতর্কীকরণ- অনেকেই আছেন যারা খালি পেটে দারুচিনি পানি পান করে বিপাক বাড়িয়ে দ্রুত ওজন কমাতে পারে।আবার অনেকের ক্ষেত্রে হজম জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে আপনি প্রথমবারের মতো অল্প পরিমাণে দারুচিনির পানি পান করে দেহের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা টেস্ট করতে হবে। তাই সপ্তাহে দুই একবার পান করে দেখতে হবে শরীরে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা মানানসই হচ্ছে কিনা।

শেষ কথা-দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা:

সুপ্রিয় পাঠক, আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে আমি এই কথা বলে শেষ করে দেবো যে আপনাদের সুবিধার্থে দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি তা আমি সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়েছেন। পোস্টটি যদি পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য এটি ফলপ্রসু হবে। 

তাই পোস্টটি আপনি পড়া সহ শেয়ার এবং কমেন্টস এর মাধ্যমে অন্যান্য ব্যক্তিদের কেউ পড়ার জন্য সহযোগিতা করুন। যেন তারাও পোস্টটি পড়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়ার জন্য এবং পোষ্টের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url