খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয়

সুপ্রিয় পাঠক, খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয় জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয়। 

তাহলে চলুন বন্ধুরা আর সময় নষ্ট না করে আমরা জেনে নেই যে খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয় এবং রাতে কালোজিরা খেলে কি হয়।

প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত:

খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয় বিষয়টি জানার আগে আমরা জানবো প্রতিদিন কতটুকু বা কি পরিমান কালোজিরা খাওয়া উচিত। প্রত্যেকদিন সকালবেলা সকালের নাস্তা করার আগে এক চিমটি পরিমাণ (১ থেকে ২ গ্রাম) কালোজিরা খেলে শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 

আরো পড়ুন: খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা কি জেনে রাখুন

প্রতিদিন সকালে এক চিমটি কালোজিরা এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে অনেক উপকার হয়। প্রতিদিন দুইবার কালোজিরার ভর্তা গরম ভাতের সঙ্গে এবং রং চা এর সাথে শুকনো কালোজিরা মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে অনেক ভালো উপকার পাওয়া যায় এবং এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়। 

তবে যারা নিয়মিত কালোজিরা খাচ্ছেন তারা অতিরিক্ত পরিমাণ কালোজিরা খাবেন না ।নির্দিষ্ট পরিমাণ খাওয়া উচিত। বেশি পরিমাণ খেলে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কালোজিরা হচ্ছে মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ।

তবে আপনার শরীরের কন্ডিশন বা শারীরিক অসুস্থতার উপর ভিত্তি করে প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-

হজম শক্তি ও কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে-আপনার হজম শক্তি এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা ঠিক রাখতে কালোজিরার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই হজমশক্তি ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সকালে খালি পেটে এক কাপ দুধের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। 

এছাড়া এক চামচ কালোজিরা তেলের সাথে এক চা চামচ খাটি মধু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খেলে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

স্মরণশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে- এক কাপ রং চায় এর সঙ্গে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার করে নিয়মিত খেলে আপনার দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে এবং এটিতে মেধা বিকাশের জন্য কাজ করবে। কালোজিরা যেহেতু একটি অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান ,তাই মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে- মাথা ব্যথা দূর করার জন্য হাফ চা চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোভাবে লাগাতে পারেন এবং এক চা চামচ কালোজিরা তেল এর সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার করে খেলে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে মাথা ব্যথা কমে যাবে।

সর্দি কমাতে- ১ চা চামচ কালোজিরা তেল এবং এক কাপ রং চা এর সাথে মিশিয়ে দৈনিক তিনবার খেতে হবে এবং মাথা ও ঘাড়ে মালিশ করতে হবে। এক চা চামচ কালোজিরা তেলের সঙ্গে দুই চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি, কাশি ইত্যাদি দূর হয়ে যাবে।

বাতের ব্যথায়- বাতের ব্যথা দূরীকরণের জন্য আপনি নিয়মিত এক চা চামচ কালোজিরা এবং সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার করে খেলে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে উপকার পাবেন।

হার্টের সমস্যার ক্ষেত্রে- এক চা চামচ কালোজিরার গুড়া এর সাথে এক কাপ দুধ মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার খেলে হার্টের সমস্যার জন্য উপকার পাওয়া যাবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে- হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আপনি এক চা চামচ কালোজিরার তেল এবং সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দুই থেকে তিন দিন খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

শ্বাসকষ্টের জন্য-শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি উপশম করার লক্ষ্যে প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন খালি পেটে সকালে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 

অনিয়মিত পিরিয়ডের ক্ষেত্রে-এক চা চামচ কালোজিরা তেল এক কাপ কাঁচা হলুদের রসের সাথে মিশিয়ে দৈনিক তিনবার করে খেলে মাসিকের ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

বুকের দুধ বাড়াতে-যে সকল নারীদের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে না তাদের ক্ষেত্রে মায়েরা প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে ৫ থেকে ১০ গ্রাম কালোজিরা পিষিয়ে গুঁড়া করে দুধের সঙ্গে খেলে 10 থেকে 12 দিনের মধ্যে দুধের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

আমাশয় নিরাময়ে-আমাশয় দূর করতে কালোজিরা বেশ উপকারী।এক চা চামচ কালোজিরা তেল এর সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন তিনবার করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। 

যৌন সমস্যায়- নারী পুরুষের যৌন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এক চা চামচ মাখন, এক চা চামচ জাইতুন তেল এবং এক চা চামচ কালোজিরা ও মধু সহ দৈনিক তিনবার চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

মধুর সাথে কালোজিরা খেলে কি হয়:

খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয় বিষয়টি জানার আগে আমরা জানবো মধুর সাথে কালোজিরা খেলে কি হয়। মধু সবসময় আমাদের দেহের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন খনিজ। যেমন- পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও প্রোটিন রয়েছে। 

আরো পড়ুন: সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি জেনে নিন

তবে মধুতে কোন কোলেস্টেরল নেই এজন্য মোটামুটি সবাই নিশ্চিন্তে এটা খেতে পারেন। কালোজিরাতে নানা ধরনের পুষ্টি রয়েছে ও উপকারী উপাদান রয়েছে। কালোজিরা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কালোজিরার তেল আমাদের শরীরে জন্য অনেক উপকারী। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন।


  • কালোজিরা ও মধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কালোজিরা ডায়াবেটিস অক্রান্ত রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দেয় ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • কালোজিরার সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে লো ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি করে স্বাভাবিক করে তোলে এর পাশাপাশি দেহের কোলেস্ট্রল স্বাভাবিক রাখে। 
  • দেহের রক্ত সঞ্চালন ঠিক মত হওয়ার জন্য নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খাওয়া যেতে পারে। এতে করে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কালোজিরা ভূমিকা অনস্বীকার্য।নিয়মিত কালোজিরার ভর্তা খেলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যার সমাধান হয়। 
  • প্রতিদিন নিয়মিত কালোজিরা ও মধু মিশ্রিত করে খাওয়ালে শিশুর দ্রুত দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়া কালোজিরা শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • মধু এবং কালোজিরা একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়। 
  • মধু প্রাকৃতিকভাবে এনার্জি বাড়ায় আর কালোজিরা বাড়ায় মেটাবলিজম। তাই এই দুই উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ হয় এবং বাড়তি মেদ কমে যায়।
  • নিয়মিত মধু ও কালোজিরা খেলে বাতের ব্যথা বা দীর্ঘমেয়াদী অন্যান্য ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। 

প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়:

খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয় বিষয়টি আলোচনা করার আগে আমি আরো একটা বিষয় শেয়ার করতে চাই সেটা হল প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কোন ক্ষতি হয় কিনা। কালোজিরা নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের যেমন উপকার হয়। 

তেমনি অধিক পরিমাণ খেলেও নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। আসলে প্রত্যেকটা জিনিসই আমাদের নিয়ম মাফিক স্বাভাবিক পরিমাণ খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া উচিত নয়।আসুন তাহলে আমরা জেনে নেই প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা নিম্নরূপ- 

দীর্ঘদিন কালোজিরা খাওয়ার ফলে বিভিন্ন অপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে ত্বকের প্রদাহ, পাকস্থলীর সংকোচন,বুক জ্বালাপোড়া ও বমি বমি ভাব হতে পারে। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন তিন মাসের বেশি সময় ধরে কালোজিরা সেবন করে যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে উল্লেখিত সমস্যা গুলো হতে পারে। এবং এছাড়াও গর্ভবতী মহিলার অকাল গর্ভপাতের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শরীরের ত্বক জ্বালাপোড়া-আপনার যদি এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে বেশি পরিমাণ কালোজিরা খেলে বা বেশি পরিমাণ কালোজিরা তেল শরীরে মাখলে এলার্জির সমস্যা আরো বেশি হতে পারে এবং ত্বক জ্বালাপোড়া করতে পারে। 

বুক জ্বালাপোড়া- অধিক পরিমাণ কালোজিরা খেলে পেটে অস্বস্তি অনুভব হওয়ার ফলে বুকে জ্বালাপোড়া করতে পারে।

কিডনির সমস্যা- অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে বা কালোজিরা না ভেজে কাঁচা অবস্থায় খেলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে করে শরীরের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি শরীরের ভিতরে অর্থাৎ কিডনিতে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডায়রিয়ার সমস্যা-তিন মাসের অধিক সময় ধরে কাঁচা কালোজিরা পানির সাথে মিশিয়ে অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে। 

অকালে গর্ভপাত-খালি পেটে বেশি পরিমাণ কালোজিরা মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে গর্ভবতী মহিলাদের অকালে গর্ভপাত হতে পারে।

পেটে ব্যথা অনুভব-অতিরিক্ত কালোজিরা বা সরাসরি কাঁচা চিবিয়ে খেলে পেটে ব্যথা, পেট ফোলা ভাব অর্থাৎ পাকস্থলীর সংকোচন এর মত সমস্যা হতে পারে।

সুতরাং অতিরিক্ত কাঁচা কালোজিরা না খেয়ে দিনে সাধারণত ১ থেকে ২ চামচ বা 5 থেকে 10 গ্রাম কালোজিরা খেলে নিরাপদ হিসেবে ধরে নেয়া হয়।

রাতে কালোজিরা খেলে কি হয়: 

এ পর্যায়ে আমরা কালোজিরা রাতের বেলায় খেলে কি হয় এবং এর পাশাপাশি খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয় তা আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব। কালোজিরা আসলে কখন খাওয়া উচিত। রাতের বেলায়, নাকি দুপুরে, নাকি খালি পেটে সকালে। এটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে থাকেন। কালোজিরা আপনি যেকোনো সময় খেতে পারেন। 

তবে খালি পেটে কাঁচা কালোজিরা না খাওয়াই ভালো। এতে আপনার পেটের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি এটা আগে ভেজে নিয়ে তারপর খেলে ভালো হয়। রাতের বেলায় খাবারের পরে কালোজিরা খেলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। পেট ফোলা ভাব এবং পেটের অন্যান্য সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

রাতের বেলায় কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাস্ট্রিক এবং আমাশয় নিরাময় হবে,চুল পড়া কমে যাবে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যাবে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে, এলার্জির সমস্যার সমাধান হবে, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায় এবং কালোজিরার তেল মাথায় ব্যবহার করলে মাথাব্যথা কমে যাবে। 

রাতে অল্প পরিমান কালোজিরার সাথে একটি পেঁয়াজ ও দুই চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে আপনার শরীরে সতেজ হয়ে যাবে এবং দুর্বল শরীর সবলে ফিরে আসবে এবং হজমের সমস্যা সমাধানে 1 থেকে 2 চা চামচ কালোজিরা বেটে খেলে হজম শক্তি বেড়ে যাবে। সেই সাথে পেট ফোলা ভাব কমে যাবে।

খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয়: 

এ পর্যায়ে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব যে খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে কালোজিরা হচ্ছে সকল (মৃত্যু ব্যতীত)রোগের মহা ঔষধ। কালোজিরা নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের উপকার হয়ে থাকে। সকালে খালি পেটে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ। যা শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। কালোজিরা নিয়মিত খাওয়ার ফলে সর্দি ,কাশি, জ্বর, মাথা ব্যথা ও অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কালোজিরাতে বহুগুণ পুষ্টি ও উপকারী উপাদান রয়েছে। কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাসের ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আরো পড়ুন: লিভার ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে মানুষ জানতে চোখ রাখুন

এছাড়া কালোজিরা তেল আমাদের শরীরে নানা ধরনের উপকার করে থাকে। কালোজিরার মধ্যে বিভিন্ন উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে আমিষ ২১ শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ বা ভেষজ তেল চর্বি 35 শতাংশ এবং এছাড়াও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। এক গ্রাম কালোজিরাতে পুষ্টি উপাদান হলো প্রোটিন 

২০৮ মাইক্রো গ্রাম, ভিটামিন বি ১  ১৫মাইক্রো গ্রাম,  নিয়াছিন ৫৭ মাইক্রগ্রাম, ক্যালসিয়াম 1.85 মাইক্রগ্রাম, আয়রন ১০৫ মাইক্রগ্রাম, ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম, কপার ১৮ মাইক্রগ্রাম, জিংক ৬০ মাইক্রগ্রাম। কালোজিরার অন্যান্য উপাদানের মধ্যে আরো রয়েছে নাইজেলোন, থাইমোকিলন, লিনোলিক অ্যাসিড, অলিক এসিড, ফসফেট, লোহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, 

পটাশিয়াম, আয়রন, লিংক, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি টু,ভিটামিন সি ছাড়াও জিবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদান। যা আমাদের শরীরে বহুবিধ উপকার করে থাকে। এছাড়া কালোজিরা আয়ুর্বেদিক, ইউনানী, কবিরাজি, চিকিৎসার রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যাপক ব্যবহার হলেও মসলা হিসেবে রান্নাবান্নার ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

কালোজিরা হৃদরোগের ঝুকি কমায়-হৃদ রোগের ঝুকি কমানোর জন্য কালোজিরা বিশেষ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। কালোজিরাতে রয়েছে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যা হৃদ যন্ত্র কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে যার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে-প্রতিদিন নিয়মিত সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী হতে পারে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীল বৃদ্ধি করতে এবং শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা রক্তের মধ্যে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে দারুণভবে কাজ করে।

কালোজিরা ওজন কমায়-শরীরের অতিরিক্ত মেদ, ভুড়ি এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কালোজিরা ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরাতে থাকা বিভিন্ন উপাদান গুলি শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং চর্বি ঝরাতে সহায়তা করে। বিশেষ করে আপনি যদি মেদ, ভুঁড়ি কমাতে চান তাহলে সকালে নিয়মিত কালোজিরা খেতে পারেন।

কালোজিরা হজমে সহায়ক-পেটের বিভিন্ন গোলযোগ বা হজমের ক্ষেত্রে কালোজিরার ভূমিকা অনস্বীকার্য। পেটের গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, এসিডিটি ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে কালোজিরা বেশ সহায়ক। কালোজিরাতে থাকা ফাইবার এবং অন্যান্য উপাদান হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পরিপাক তন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

চুল এবং ত্বকের যত্নে-কালোজিরা কেবল শরীরের ভেতরের দিকের সমস্যার সমাধান করে না, বরং শরীরের বাহ্যিক দিক যেমন ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কালোজিরার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। কালোজিরার তেল চুল পড়া কমিয়ে দেয় এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে-মানুষের জীবনে সবচেয়ে মারাত্মক রোগ ক্যান্সার প্রতিরোধেও কালোজিরা কার্যকারী ভূমিকা রাখে।একটি গবেষণায় দেখা গেছে কালোজিরাতে থাকা থাইমোকুইনন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষমতা রয়েছে। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কালোজিরার উপাদান গুলি বিশেষভাবে কার্যকর।

কালোজিরা মানসিক চাপ কমায়-কালোজিরাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান যা মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে। কালোজিরা আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র কে শক্তিশালী করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য বা মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া ভালো।

কালোজিরা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমায়-কালোজিরা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা সমাধানে বিশেষ উপকারী। এটি এজমা এবং ব্রংকাইটিসের মতো শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমিয়ে দিতে সহায়তা করে এবং নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং শ্বাসতন্ত্র সুস্থ থাকে।

মাথাব্যথায় কালোজিরা-মাথা ব্যথা দূর করতেও কালোজিরা বিশেষ ভূমিকা রাখে। আপনার যদি মাথাব্যথা হয়ে থাকে তাহলে কালোজিরার তেল মাথায়, কপালে, কানের উভয় পাশ দিয়া প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার কালোজিরার তেল মালিশ করলে মাথা ব্যাথা সহ কপাল ব্যথা ভালো হয়ে যায়।

কালোজিরা সর্দি কাশি দূর করে-এক চা চামচ কালোজিরার তেল এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে আপনার সর্দি ,কাশি কমে যাবে। এক কাপ লাল চায়ের সঙ্গে আধা চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার হবে। এছাড়া এক চা চামচ কালোজিরা এবং ৩ চা চামচ মধু ও ২ চা চামচ তুলসী পাতার রস মিশ্রিত করে, মিশ্রণটি খেলে জ্বর, সর্দি, কাশি ,মাথা ব্যথা অনেক কমে যাবে।

অনিয়মিত পিরিয়ড-যাদের মাসিক ঠিকমতো হয় না বা অনিয়মিত হয় তাদের ক্ষেত্রে এক কাপ কাঁচা হলুদের রস এক কাপ চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক তিনবার করে নিয়মিত সেবন করলে তা সহজেই ঠিক হয়ে যায়।

দাঁতের ব্যথা নিরাময়-দাঁতের ব্যথা নিরাময় করার জন্য কালোজিরা বেশ উপকারী।একটু কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যথা অনেক কমে যাবে। এবং সেই সাথে জিহবা, দাঁতের মাড়ি জীবাণু ধ্বংস হয়ে যাবে।

চর্ম রোগের ক্ষেত্রে-আপনার যদি চর্মরোগ থেকে থাকে তাহলে কোন ঘা বা ক্ষতস্থানে বা অক্রান্ত স্থানে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল এবং সমপরিমাণ মধু মিশ্রিত করে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার সেবন করলে তা সেরে যাবে।

কালোজিরা সরণ শক্তি বৃদ্ধি করে- কালোজিরা স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দারুন ভূমিকা রাখে। এক চা চামচ কমলার রস অথবা এক কাপ রং চায়ের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে প্রত্যেকদিন দুই থেকে তিনবার নিয়মিত সেবন করলে দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে। 

এবং কালোজিরা মেধা বিকাশের জন্য অনেক কাজ করে। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে কালোজিরা ব্যাপক কার্যকারী ভূমিকা রাখে। নিয়মিত এটা খেলে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। যার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

কালোজিরা বাতের ব্যথা সারায়- আপনার যদি বাতের সমস্যা থাকে বা বাতের ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে যেখানে বাতের ব্যথা সেই জায়গায় পরিষ্কার করে কালোজিরার তেল দিয়ে মালিশ করুন। এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল বা সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার সেবন করলে বাতের ব্যথা অনেকটাই কমে যেতে পারে।

কালোজিরা অর্শ রোগ নিরাময়-যাদের অর্শ রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ১চা চামচ মাখন এবং সমপরিমাণ তিলের তেল, এক চা চামচ কালোজিরার তেল সহ প্রতিদিন খালি পেটে সেবন করলে তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই অর্শ রোগ থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

কালোজিরা মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে-যে সমস্ত মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ থাকে না তাদের মহা ঔষধ হিসেবে কালোজিরা সেবন করা যেতে পারে। দুগ্ধ দানকারী মায়েরা প্রতিরাতে পাঁচ থেকে দশ গ্রাম কালোজিরা বেটে নিয়ে দুধের সাথে খেলে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। ( এভাবে ১২ থেকে ১৫ দিনে খেলে কাজ হবে) অথবা ভাতের সঙ্গে কালোজিরা ভর্তা করে খেলেও উপকার হবে।

কালোজিরা যৌন শক্তি বাড়ায়-নারী পুরুষের যৌনশক্তির ক্ষেত্রে কালোজিরা ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারের সাথে খেলে জৈব শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে আপনি এক চা চামচ মাখন, এক চা চামচ যাইতুন তেল এবং সমপরিমাণ কালোজিরা তেল ও মধু সহ প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার সেবন করুন। তাহলে দেখবেন চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।

কালোজিরা কিডনির পাথর দূর করে-কিডনি পাথর দূর করতে কালোজিরা ব্যাপক কার্যকরী উপাদান ২০০ গ্রাম কালোজিরা এবং সমপরিমাণ খাঁটি মধুর সাথে ২০০ গ্রাম কালোজিরা মিশিয়ে দুই চা চামচ মিশ্রণ আধা কাপ গরম পানিতে ভালো করে মিশিয়ে প্রতিদিন তিন থেকে চারবার ১২ থেকে ১৫  ফোটা করে পান করলে কিডনির পাথর নিরাময় হতে পারে।

উল্লেখিত বিভিন্ন ভিন্ন রোগ সারানো ছাড়াও আরো অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে কালোজিরা ব্যাপক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। উল্লেখিত অসুখ-বিসুখ সারানোর জন্য বা অন্যান্য যে কোন অসুখ সারানোর জন্য আপনি নিয়ম করে কালোজিরা খেতে পারেন। তবে তার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কালোজিরা সেবন করলে আরো ভালো হয়। 

আর একটা কথা স্মরণ রাখতে হবে সেটা হলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য কালোজিরা খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ তাতে বিভিন্ন অসুবিধা ছাড়াও অকালে গর্ভপাত হতে পারে এবং দুই বছরের নিচে অর্থাৎ দুই বছরের কম বয়সের শিশুদের কালোজিরা খাওয়া উচিত নয়।

শেষ কথা-খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয়:

সুপ্রিয় পাঠক, আপনাদের সুবিধার্থে খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার হয় তা উপরের অংশে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করার মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য অনেক  ফল প্রসু হবে। তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ুন। 

এবং শেয়ার ও কমেন্টস এর মাধ্যমে অন্যান্য ব্যক্তিদের কেউ জানিয়ে দিন। যেন তারাও এই পোস্টটি পড়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারেন। এতক্ষণ ধরে আমার এই পোষ্টের সঙ্গে ধৈর্য সহকারে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url