সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি জেনে নিন

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কি জানতে চান সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি। তাহলে একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব যে সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি। 

তাই আসুন পাঠক বন্ধুরা আর সময় নষ্ট না করে আমরা জেনে নেই যে সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি।

রাতে আদা খেলে কি হয়:

সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি সেগুলো জানার আগে আমরা জানবো যে রাতে আদা খেলে কি হয়। আদা হচ্ছে বহুল ব্যবহৃত একপ্রকার মসলা যা রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। রাতে আদা খেলে ঘুমের উন্নতি, পাচন প্রক্রিয়ার সহায়তা, ওজন কমানো, এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করে দেয় এই আদা। আদাতে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান এবং এতে রয়েছে অনেক ধরনের ভিটামিন ও খনিজ। 

আরো পড়ুন: নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি  জানলে অবাক হবেন

যেমন- ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ই , ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন ইত্যাদি। এছাড়াও আদাতে রয়েছে  জিঞ্জারল নামক একটি সক্রিয় যৌগ যা প্রদাহ কমাতে এবং বিভিন্ন রোগের উপশমে দারুণ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। রাতে আদা খেলে কি কি সুবিধা হয় তা নিম্নে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করলাম-

হজমের সমস্যায় সহায়তা-রাতে যারা পেট ভরে ভাত অথবা অন্যদের কোন খাবার খান তাদের জন্য রাতে আদা খাওয়া অনেকটাই উপকারী হতে পারে যাতে আধা খেলে হজমের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যায় আদা হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত এনজাইমের উৎপাদন কে উজ্জীবিত করে যা খাবার সহজেই হজম করতে সাহায্য করে। 

রাতে বেশি পরিমাণ খাবার খেলে অনেক সময় হজমের সমস্যা হতে পারে বা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।আদার হজম শক্তি উন্নত করার ক্ষমতা খাবার হজম কে দ্রুততর করে এবং হজম জনিত অস্বস্তি থেকে রক্ষা করে।

আদা বমি ভাব দূর করে-রাতে আদা খাওয়ার অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে আদা বমি বমি ভাব দূর করে এবং গ্যাস প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আদা পাচনতন্ত্রকে শান্ত করে এবং গ্যাস অথবা বমি বমি ভাব থেকে রক্ষা করে। 

আদা প্রদাহ কমায়-আদাতে রয়েছে সক্রিয় যৌগ, জিঞ্জারল যা প্রদাহ কমানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। রাতের বেলায় আদা খেলে শরীরের বিভিন্ন ব্যথা, প্রদাহ কমে যায়। আপনার যদি জয়েন্টে ব্যথা বা আর্থাইটিসের কারণে কোন অস্বস্তি অনুভব করেন, তাহলে আপনার জন্য আদা একটি প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী হিসেবে কাজ করবে।

আদা ওজন কমায়-আপনার যদি ওজন অত্যাধিক বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনি ওজন কমানোর জন্য রাতের বেলায় আদা খেতে পারেন। রাতে আদা খেলে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। এটি শরীরের মেদ, চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে যা শরীর থেকে বাড়তি চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

আদা ঘুমের জন্য সহায়ক-আপনার যদি কোন কারণে রাতে ঘুম কম হয় তাহলে আপনি আদা খেতে পারেন। অনেকের মধ্যে দেখা যায় যে রাতে বদ হজমের কারণে ভালো ঘুম হয় না। আদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান মানসিক চাপ কমায় এবং মন এবং শরীরকে প্রশান্ত করে যা স্বাভাবিক ভাবে ঘুমের জন্য কার্যকর সহায়ক।

আদা জীবাণু এবং ভাইরাস রোধ করে-রাতে আদা খেলে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ফ্লু, ঠান্ডা বা সংক্রমনের বিরুদ্ধে শরীর কে রক্ষা করে। আদার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিভাইরাল গুণাবলী আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের জীবাণু এবং ভাইরাস থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যাপক সহায়তা করে।

আদা রক্তে শর্করার মাত্রা করে-রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনি রাতে আদা খেতে পারেন যা ডায়বেটিসের জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আদা হাটের স্বাস্থ্য রক্ষা করে-কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করতে আদা আমাদের শরীরে ব্যাপকভাবে কাজ করে যা হৃদরোগের রোগী কমাতে সাহায্য করে। রাতে আদা খেলে রক্তের চাপ স্বাভাবিক থাকে এবং হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।

ঠান্ডা ও সর্দি কাশির ক্ষেত্রে আদা-রাতের বেলায় আদা খেলে আপনার শরীরে সর্দি কাশি এবং ফ্লু এর মত কোন সমস্যা থাকলে এটি প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। রাতে আধা খেলে শরীরকে গরম রাখতে সহায়তা করে এবং শ্বাসনালীর সংক্রমণ বা ঠান্ডা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শীতের সময় আদা খেলে আপনার সর্দি কাশি এবং গলায় খুসখুসে ভাব অনেকটাই কমে যাবে। 

এছাড়া আপনি চায়ের সাথে আদা মিশ্রণ করে রাতের বেলায় খেতে পারেন। রাতের খাবারের পরে এক কাপ আদা চা আপনি যদি পান করেন তাহলে আপনার হজম শক্তি এবং শরীরকে শিথিল করে দিবে। এতে ঘুমের মান উন্নত করে এবং মনকে প্রশান্ত রাখে।

রাতে ঠান্ডা ও সর্দির সমস্যা প্রতিরোধ করতে আপনি আদা ও মধু মিশ্রিত গরম পানি পান করতে পারেন। এতে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়। 

রাতের বেলায় আপনার সর্দি কাশি গলায় খুসখুসে বা ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে আদা মিশিয়ে খেলে তা অনেক উপকার পাওয়া যাবে। 

আদা খেলে কি কি রোগ ভালো হয়:

সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা জানতে আমারা জেনে নেব যে আদা খেলে কি কি রোগ ভালো হয়। আদা হচ্ছে বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ। বিভিন্ন প্রকার রোগ ভালো করতে আদা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: আদাতে রয়েছে ভিটামিন বি ৬ এবং ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন নিয়মিত আদা খেলে দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে এবং অন্যান্য অসুখ যেমন সর্দি কাশি ফ্লু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং আদা শ্বাসতন্ত্রের ক্রিয়াকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন: কমলার খোসা দিয়ে কি কি কাজ হয় জানলে অবাক হবেন

আদা হজমে সাহায্য করে-আদার মধ্যে জিঞ্জেলর এবং শোগা ওলের মত যৌগ থাকার কারণে হজমকারী এনজাম গুলির উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেয়। যার ফলে খাবার সহজেই দ্রুত হজম হয় এবং বদহজম প্রতিরোধ করতে ও পেট ফোলা দূর করতে আদা ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও আদার কার্যকারিতা অনস্বীকার্য।

আদা গ্যাস কমাতে সাহায্য করে-আদা পাচক এনজাইম উৎপাদন উজ্জীবিত করে। এই এনজাইম গুলি যথাক্রমে কার্বোহাইড্রেট,ফ্যাট এবং প্রোটিনের ভাঙ্গন প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে খাদ্য সম্পুর্ণ রূপে হজম হয়ে যায় যা খাদ্য থেকে গ্যাস উৎপাদনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় এবং এনজাইম গ্যাস কে ভেঙ্গে বের করে দিতে সাহায্য করে।

আদা বমি ভাব কমায়-আদা খাওয়ার অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে আদা বমি বমি ভাব দূর করে এবং গ্যাস প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আদা পাচনতন্ত্রকে শান্ত করে এবং গ্যাস অথবা বমি বমি ভাব থেকে রক্ষা করে। 

আদা স্নায়ুতন্ত্র কে শান্ত রাখে-আদা স্নায়ুতন্ত্রের উপর একটি শান্ত প্রভাব ফেলে যা স্ট্রেস সম্পর্কিত হজম সংক্রান্ত সমস্যা গুলো কমাতে এবং স্নায়ুতন্ত্রের শিথিলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

আদা এন্টি ইনফ্লেমেটরি প্রভাব ফেলে-আদার মধ্যে থাকা আন্টি ইনফ্লামেটরি যৌগ যা পাচনতন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।

আদা কার্ডিওভাস্কুলার রোগ প্রতিরোধ-নিয়মিত আদা খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 

আদা ওজন কমায়-নিয়মিত আদা খেলে আপনার ক্ষুধা কমানো সহ শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বা অতিরিক্ত ওজন কমে যেতে পারে।

আদা ত্বকের সমস্যা রোধ করে-আদার মধ্যে জিঞ্জেরল থাকার কারণে ত্বকের খসখসে ভাব প্রশমিত করে এবং একজিমা সহ ত্বকের অন্যান্য অবস্থার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া আদাতে এই জিঞ্জেরল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে কাঁচা আদা ব্রণ এবং ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে।

আদা আমাশয়, পেট ফাঁপা, পেট ব্যাথা, হাঁপানি,ফুসফুসে রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে-আপনার যদি পেট ব্যাথা, পেট ফাঁপা,আমাশয় থেকে থাকে তাহলে খাবারের পর এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ আদার রস মিশিয়ে খেলে আমাশয়, পেট ব্যথা,পেট ফাঁপা দূর হয়ে যাবে। 

হাঁপানি এবং ফুসফুসের সমস্যা থাকলে প্রতিদিন দুই বেলা এক চা চামচ করে আদার রস লেবুর রস, মধু, এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মত করে খেলে উল্লেখিত রোগ গুলো থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

আদা কাশি কমায়-কাশি এবং কফ এর সমস্যা থাকলে প্রতিদিন দুই বেলা এক চা চামচ করে আদার রস লেবুর রস, মধু, এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মত করে খেলে কাশি এবং কফ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

কাঁচা আদা খেলে কি হয়: 

এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব কাঁচা আদা খেলে কি হয় এবং এর পাশাপাশি সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি তা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব। কাঁচা আদা খেলে বাতের ব্যথা দূর হয়ে যায়, সর্দি কাশিতে উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা আদা খেলে আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। 


কাঁচা আদা দাঁতের মধ্যে থাকা জীবানু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আদা রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এর পাশাপাশি চায়ের সঙ্গে আদা ব্যবহার করা হয়। আদা কাঁচা খাওয়া যেতে পারে।

  • কাঁচা আদা খেলে গলা ব্যথা দূর হয়ে যায় 
  • কাঁচা আদা খেলে সর্দি কাশি দূর হয়ে যায় 
  • বাতের ব্যথা দূর করতে আপনি কাঁচা আদা খেতে পারেন 
  • কাঁচা আদা নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 
  • আপনার যদি বমি বমি ভাব লেগে থাকে তাহলে কাঁচা আদা খেলে তা সেটা দূর হয়ে যাবে।

এছাড়া আপনি চায়ের সাথে আদা মিশ্রণ করে খেতে পারেন। রাতের খাবারের পরে এক কাপ আদা চা আপনি যদি পান করেন তাহলে আপনার হজম শক্তি এবং শরীরকে শিথিল করে দিবে। এতে ঘুমের মান উন্নত করে এবং মনকে প্রশান্ত রাখে রাতে ঠান্ডা ও সর্দির সমস্যা প্রতিরোধ করতে আপনি আদা ও মধু মিশ্রিত গরম পানি পান করতে পারেন। 

এতে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়। রাতের বেলায় আপনার সর্দি কাশি গলায় খুসখুসে বা ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে আদা মিশিয়ে খেলে তা অনেক উপকার পাওয়া যাবে। 

সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা: 

এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি। আদা হচ্ছে সকল রোগ নিরাময়ের এক দুর্দান্ত উপাদান। এটি মূলত রান্নাবান্নার কাজে রান্নার স্বাদ বাড়াতে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি এই আদার মধ্যে অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলেন, আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। 

আরো পড়ুন: কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি-কাঁচা আম খাওয়ার নিয়ম

আদার মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ৬,ভিটামিন সি ও ই, আন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও আন্টি- ইনফ্লামেটরি উপাদান সহ ইত্যাদি নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরের অনেক উপকার হয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আদার মধ্যে রয়েছে-

  • ক্যালরি-৮৯ কিলো ক্যালরি 
  • লিপিড-0.8 গ্রাম 
  • সম্পৃক্ত চর্বি-0.2 গ্রাম
  • সোডিয়াম- 13 মিলিগ্রাম 
  • পটাশিয়াম-৪১৫ মিলিগ্রাম 
  • সর্করা-১৮ গ্রাম 
  • খাদ্য আঁশ-২ গ্রাম 
  • চিনি-১.৭ গ্রাম 
  • প্রোটিন-১.৮ গ্রাম। 
  • ভিটামিন-সি ৫ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম-১৬ মিলিগ্রাম 
  • আয়রন-০.৬মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন -বি৬ ০.২ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম-43 মিলিগ্রাম

খালি পেটে আদা খেলে যে সব উপকার পাওয়া যাবে-

  • সকালে খালি পেটে আদা খেলে সারাদিনের পানি শূন্যতার ঝুঁকি কম থাকে। 
  • সকালের আদা খাওয়াতে আপনার ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। 
  • শরীরের কোন এক জায়গায় ব্যাথা হলে আদা জল পান করলে কিছুটা হলেও কষ্ট দূর হবে।

আদা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়- আমাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে এসিডের সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে নিয়মিত আদা খেলে অ্যাসিডের সমস্যা কমিয়ে দিতে পারে। অ্যাসিডিটির সমস্যার কারণে অনেকেই নিয়মিত ওষুধ সেবন করে থাকে। কিন্তু নিয়মিত ওষুধ সেবন লিভার বা কিডনির সমস্যা হতে পারে। তাই গ্যাস্টিকের ওষুধ হিসাবে আদা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে এ ধরনের সমস্যা সমাধান হয়ে যেতে পারে। 

আদা প্রদাহ দূর করে-আদাতে রয়েছে সক্রিয় যৌগ, জিঞ্জারল যা প্রদাহ কমানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন সকাল বেলায় আদা খেলে শরীরের বিভিন্ন ব্যথা, প্রদাহ কমে যায়। আপনার যদি জয়েন্টে ব্যথা বা আর্থাইটিসের কারণে কোন অস্বস্তি অনুভব করেন, তাহলে আপনার জন্য আদা একটি প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী হিসেবে কাজ করবে।

আদা ওজন কমাতে সহায়ক- খালি পেটে আদা পানি খেলে শরীরের বিপাকীয় বেড়ে যায়। ফলে সারাদিন স্বাভাবিক পরিমাণ কাজ করার সময়ও ক্যালোরি পুড়ে যায়। যা দ্রুত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে।

আদা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়-খালি পেটে আদা খাওয়ার অন্যতম উপকার হচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে। খালি পেটে আদা পানি খেলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তে শর্করার বৃদ্ধি রোধ করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত আদা খাওয়া খুবই উপকারী। 

আদা ত্বকের জন্য উপকারী- প্রতিদিন নিয়মিত আদা পানি খেলে শরীরের ময়লা ও টকসিন দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের ফুসকুড়ি, ব্রণ কমাতে এই আদা দারুণভবে সহায়তা করে। এছাড়া নিয়মিত আদা জল খেলে রক্তকে স্বাভাবিকভাবে বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

আদা পেটের জন্য উপকারী- নিয়মিত খালি পেটে আদা পানি খেলে হজম শক্তি বেড়ে যায়। ফলে এ আদা বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফোলা ভাব, বমি, ডায়রিয়া এবং বমি বমি ভাব দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আদা, কোলেস্টেরল কমাতেও কাজ করে। যার কারণে এটি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে-আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আদা দারুণভাবে কাজ করে। আদাতের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লেমেটরি যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দারুণভাবে সহায়তা করে এবং সেই সাথে আমাদের শরীরকে অসুস্থতার সাথে লড়াই করে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 

আদা প্রাকৃতিক ব্যথা দূর করে-আদাতে এন্টি ইনফ্লেমেটরি থাকার কারণে মাসিকের ব্যথা এবং বেশি ব্যথা সহ ব্যথা উপশম করতে কাজ করে।

আদা রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে-প্রতিদিন নিয়মিত সকালে আদা খেলে আপনার শরীরের রক্ত সঠিকভাবে সঞ্চালন করতে সাহায্য করবে এবং রক্তকে উন্নত করতে সহায়তা করে। সুতরাং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত সকালে খালি পেটে আদার রস খাওয়ার অভ্যাস করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

আদা বমি বমি ভাব দূর করে- আপনার যদি বমি হয় বা বমি বমি ভাব হয়ে থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আদা পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

আদা কোলেস্টেরল দূর করে-কোলেস্টেরল হলো রক্তের ভিতরে থাকা এক প্রকার মোম জাতীয় পদার্থ। এই উপাদান যখন বেশি হয়ে যায় তখন তা রক্তনালীর ভিতরে জমে যায়। সেই কারণে রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিকভাবে সঞ্চালন হতে পারে না। ফলে হার্টের সমস্যা সহ অন্যান্য সমস্যা হয়ে যায়। সুতরাং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে আপনি প্রতিদিন সকালে নিয়মিত আদা পানি খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যাবে।

আদা কাশি কমায়-কাশি এবং কফ এর সমস্যা থাকলে প্রতিদিন দুই বেলা এক চা চামচ করে আদার রস লেবুর রস, মধু, এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মত করে খেলে কাশি এবং কফ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রতিদিন নিয়মিত আদা খেলে গলার খুসখুসে কাশি এবং সর্দি দূর হয়ে যায়।

আদা ত্বকের সমস্যা রোধ করে-আদার মধ্যে জিঞ্জেরল থাকার কারণে ত্বকের খসখসে ভাব প্রশমিত করে এবং একজিমা সহ ত্বকের অন্যান্য অবস্থার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া আদাতে এই জিঞ্জেরল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে কাঁচা আদা ব্রণ এবং ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে।

সকালে কিভাবে আদাজল তৈরি করবেন এবং খাবেন-

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি খালি পেটে এক গ্লাস পানি পান করা অনেক ভালো এরপর আপনি আদা জল খেতে পারেন। 

আদা জল তৈরি করার জন্য একটি পাত্রে এক গ্লাস পানি চুলার উপরে দিন এবং এর মধ্যে এক ইঞ্চি পরিমাণ আদা খোসা  ছাড়িয়ে থেঁতলে অথবা কুচি কুচি করে নিন। এরপর পানি ফুটতে থাকলে এরমধ্যে থেতলানো আদা দিয়ে দিন।তারপর চুলা নিভিয়ে পাত্রটি নামিয়ে ফেলুন। কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ মিনিট ঢেকে রাখুন। তারপর একটু গরম থাকতে থাকতেই খেয়ে নিন। আদা জল খাওয়ার আধা ঘন্টা পর সকালের নাস্তা খেতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুস্টি। এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ এবং আন্টি অক্সিডেন্ট। নিয়মিত আদা খেলে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। আপনি যদি সকালে খালি পেটে নিয়মিত আদা বানিয়ে খেতে পারেন তাহলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। তাই উপকার পেতে চাইলে আপনি প্রতিদিন নিয়মিত খালি পেটে আদা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

শেষ কথা-সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা: 

সুপ্রিয় পাঠক, আপনাদের সুবিধার্থে সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং আদা খেলে কি কি অসুখ ভালো হয় বা আদতে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে তা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি পোস্টটি আপনার জন্য অনেক উপকারে আসবে। তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের কেউ পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন। 

কারণ পোস্টটি পড়ে যেন অন্যান্য ব্যক্তিরাও উপকৃত হতে পারেন। তাই শেয়ার এবং কমেন্টস এর মাধ্যমে অন্যান্য ব্যক্তিদের কেউ পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন। এতক্ষণ ধরে আমার এই পোষ্টের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url