দুর্বল হার্ট সবল করার উপায়-হার্টের ব্লক দূর করার ব্যায়াম
প্রিয় পাঠক, দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় সম্পর্কে জানতে আমার এই আর্টিকেলের উপরে চোখ রাখুন। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব যে দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় কি এবং এই সাথে হার্টের ব্লক দূর করার ব্যায়াম সম্পর্কেও আলোচনা করব।
আসুন তাহলে পাঠক বন্ধু দেরি না করে শুরু করা যাক দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় কি কি সে সম্পর্কে জেনে নেই।
হার্ট অ্যাটাক করলে কি মানুষ মারা যায়:
দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে আমাদের কে আগে জানতে হবে হার্ট অ্যাটাক করলে রোগী অথবা মানুষ মারা যায় নাকি বেঁচে থাকে। হার্ট মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা রক্ত সরবরাহ করে এবং পুরো শরীরটাকে সুস্থ সবল করে রাখে।
আরো পড়ুন: ব্রেস্ট ক্যান্সার কি নিরাময় যোগ্য- ব্রেস্ট ক্যান্সার কি ভালো হয়
হার্ট ছাড়া মানুষ কখনোই বাঁচতে পারে না। তাই হার্টের উপরে আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। হার্ট হল একটি পেশীবহুল অঙ্গ যা সমস্ত প্রাণীর মধ্যে থাকে।এই হার্ট রক্তনালী গুলোর মাধ্যমে আমাদের পুরো শরীরে রক্ত সরবরাহ করে থাকে এবং সরবরাহ করা রক্ত শরীরে অক্সিজেন এবং পুষ্টি বহন করে।
হার্টের যে রক্ত নালী রয়েছে সেই রক্তনালী যদি ব্লক হয় তখন যে রোগ হয় সেটিকে বলা হয় হার্ট অ্যাটাক। হার্ট বা হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরের বক্ষ গহবরের বামদিকে দুই ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থিত একটি তিন কোণার মত ফাঁপা অঙ্গ।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে ,হার্ট অ্যাটাকের কিছু কিছু উপসর্গ রয়েছে
যেগুলো দেখা দিলে দ্রুত গতিতে বা সময় মত চিকিৎসা না নিলে রোগীর খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ব থেকেই যে অসুস্থ হবে এমন নয়। হঠাৎ করেই যে কোন মানুষের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আমাদের দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ হার্ট অ্যাটাক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের (বিবিএস) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে আমাদের দেশে মোট মৃত্যুর ১৮% মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগের কারণে। চিকিৎসকরা আরো বলেন, তামাক সেবনের ফলে ওবিসিটি বেড়ে যাওয়া, লবণ বেশি খাওয়া এবং বায়ু দূষণের কারণে দেশে হৃদরোগ বাড়ছে এবং সেই সাথে হৃদরোগে মৃত্যুর হারও বাড়ছে।
চিকিৎসকরা আরো বলেন, আগে বয়স্ক লোকেরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কিন্তু বর্তমানে অল্প বয়সেও বা তরুণেরাও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। এমনকি শিশুরাও হৃদরোগে মারা যাচ্ছে। তাই নিয়মিত হার্ট চেকআপ করার ব্যাপারে জোর পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসকরা।
কারণ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। সুতরাং আপনার যদি বুকে ব্যথা হয় এবং এর জন্য যদি মানুসিক চাপ অনুভূত হয় অথবা যে কোন কাজ করার সময় ব্যথা বাড়ে, ঘাম হয় ,বমি হয় এবং এর সাথে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাহলে বুঝবেন যে আপনার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তখন অপেক্ষা না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
হার্ট অ্যাটাকে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার প্রায় ৩% যেখানে গ্রামের তুলনায় শহরে ৩.৫০% মৃত্যুর হার বেশি। চিকিৎসকদের মতে, সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করছে হৃদরোগের কারণে। উপরোক্ত আলোচনা মাধ্যমে এটাই স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে হৃদরোগ হলে অথবা হার্ট অ্যাটাক করলে মানুষ মারা যায়।
তবে হার্ট অ্যাটাক শুরু হওয়ার আগেই অথবা অল্প অল্প যখন লক্ষণ বোঝা যায় তখন চিকিৎসা নিলে আর কোনো ঝুঁকি থাকে না ।তাই যেহেতু হার্ট অ্যাটাকের বুকে ব্যথা হচ্ছে প্রধান কারণ তাই বুকে ব্যথা শুরু হওয়া মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং মাঝে মাঝেই পরীক্ষা করতে হবে যে আপনার শরীরে হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা হতে পারে কিনা।
চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক তখন আপনাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। যদি হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের সমস্যা থাকে তাহলে ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন এবং ওষুধ সেবন করে যদি নিরাময় না হয়। তাহলে চিকিৎসক আপনাকে ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে পারেন।তাহলে আপনি ভালো হয়ে যাবেন।
হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ-আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনার হার্ট ব্লক হয়ে গেছে তার কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ নিম্নে উল্লেখ করলাম। এই লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়া মাত্রই আপনি দেরি না করে দ্রুত গতিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। নইলে বড় ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। লক্ষণগুলো হল-
- হার্ট ব্লক হওয়ার প্রধান লক্ষণ হল বুকে ব্যথা।বুকের দুই পাশে, ডান পাশে এবং বাম পাশে ব্যথা অনুভব করা। ব্যথাটি হচ্ছে চাপ ধরে থাকার মত ব্যথা। বুকে জ্বালাপোড়া হতে পারে ।কিন্তু বুকের সব ব্যথার মানেই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ নয়।
- আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে বুকে ব্যথা খুব একটা করবে না তবে বুক ধড়ফড় করতে পারে।
- ঘাড়ের বাম সাইডে অথবা গাড়ির মাঝখানে ব্যথা হতে পারে এবং এই ব্যথা চোয়ালের দিকেও যেতে পারে।
- অল্প পরিশ্রম করলেই শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে যাবে, মাথা ঘুরতে পারে সেই সাথে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট দেখা যেতে পারে এবং শরীর প্রচন্ড ঘেমে যাবে সেই ঘাম হবে ঠান্ডা।
- বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব হওয়া।
উল্লেখিত হার্ট ব্লকের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দেরি না করে খুব দ্রুত গতিতে অভিজ্ঞ সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট শরণাপন্ন হোন। যদি দেরি করেন তাহলে বড় ধরনের ঝুঁকির সম্ভাবনা থেকে যাবে।
হার্টের ব্লক দূর করার ব্যায়াম:
দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে হার্টে ব্লক হলে দূর করার জন্য যে ব্যায়াম রয়েছে সেগুলো আমাদের জানা দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো হৃদপিণ্ড। এই হৃদপিণ্ড ঠিকমতো কাজ না করলে আমাদের শরীরে রক্ত ঠিকমত সরবরাহ হবে না। ফলে রোগ ব্যাধির আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
আরো পড়ুন: জরায়ু ক্যান্সার হলে কি মানুষ মারা যায় জানতে চোখ রাখুন
তাই আগেভাগেই সাবধান হতে বলছেন এই বিশেষজ্ঞরা। হার্টের ব্লক জনিত রোগ কমানোর ক্ষেত্রে ব্যায়াম হচ্ছে একটি প্রথম বা প্রধান উপায়। হার্টের ব্লক দূর করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য এবং রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে সাহায্য করে।এই ব্যায়ামগুলো হচ্ছে-
হাঁটাহাটি করা-প্রতিদিন নিয়মিত নির্দিষ্ট দূরত্বে হাঁটলে বা হাঁটাহাটি করলে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য উন্নতি করে। প্রতিদিন নিয়মিত ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট মধ্যম গতিতে হাঁটুন। তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন হৃদয়ের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। যদি অতিরিক্ত ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্ট মনে হয় তাহলে এগুলো এড়াতে ধীরগতিতে হাঁটুন।
বাই সাইকেল চালানো -সাইক্লিং একটি হার্ট অ্যাটাকের হৃদ পিণ্ড কে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম হতে পারে যা আপনার হার্টের কাজকর্ম করতে সুবিধা করে দেয়। প্রতিদিন নিয়মিত ২৫ থেকে ৩০ মিনিট করে বাইসাইকেল চালালে হৃদয়ের রক্তচাপ কমিয়ে যাবে এবং মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
সাঁতার কাটা- সুইমিং করা বা সাঁতার কাটা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য একটি উত্তম ব্যায়াম। সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ বার ত্রিশ মিনিট করে সাঁতার কাটলে হৃদয়ের কাজের দক্ষতা বেড়ে যায় এবং শরীরের জয়েন্টের উপর চাপ কমায়। তাই আপনি যদি সাঁতার জেনে থাকেন তাহলে আপনার নিকটস্থ পুকুরে এইভাবে সাঁতার কাটতে পারেন।
আর যদি সাঁতার না জেনে থাকেন তাহলে আগে সাঁতার কাটা শিখবেন। তারপরে সাঁতার কাটবেন। নইলে পুকুরে যদি বেশি পানি থাকে তাহলে ডুবে যেতে পারেন।
যোগব্যায়াম-যখন আপনি ধ্যান করবেন তখন আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে। এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে আপনার ঘরের মেঝেতে অথবা বাগানে অথবা ছাদে অথবা মাঠে যোগ অনুশীলন করলে মানসিক শান্তি, হৃদয়ের স্থিরতা , রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
যোগব্যায়াম করলে হার্ট সচল রাখতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমায়,মন ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে।
নিয়মিত খেলাধুলা করা- প্রতিদিন নিয়মিত খেলাধুলা করতে পারলে শরীর এবং মন দুটোই ভালো থাকে। হার্টের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে ।যেমন- ক্রিকেট খেলা, ভলিবল খেলা, বাস্কেটবল খেলা, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল খেলা ইত্যাদি নিয়মিত খেলা করলে হার্টের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফিট থাকবে।
দড়ি লাফানো- দড়ি লাফানো ব্যায়াম করলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ঝরে যায় বা ক্যালোরি বার্ন হয়। তাই এই ব্যায়াম হার্টকে সুস্থ রাখতে অনেক বেশি উপকারী।
নাচ করা-প্রতিদিন নিয়মিত বাজনার তালে তালে নাচ বা ড্যান্স করলে রক্ত সঠিকভাবে পাম্প করে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফিট থাকে।
অ্যারোবিক ব্যায়াম- আরাবিক ব্যায়াম করলে খুব তাড়াতাড়ি শরীর ঘেমে যায় এবং হার্ট ব্লক হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়, ফুসফুসের কার্য ক্ষমতা বেড়ে যায়, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের মাংস বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়।
জগিং লাফ- জগিং লাফ ব্যায়াম করলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি বার্ন হয় এবং হার্ট ভালো থাকে।
দুর্বল হার্ট সবল করার উপায়:
এ পর্যায়ে আমরা দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় সমূহ কি কি। হার্ট আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ করে থাকে। তাই হাটকে সবল ,শক্তিশালী ও সুস্থ রাখতে হাটের উপর গুরুত্ব দেওয়া আমাদের জরুরি।
হার্টের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নিম্নে উল্লেখিত উপায় গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে-
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার-হাট সুস্থ ,সবল রাখতে হলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন। ফল, শাকসবজি ,মাছ, দুধ এবং ডায়েরি পণ্য, বাদাম ও বিনা গাছের বীজ বেশি খাওয়া হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য উপকারী। তৈলাক্ত খাবার, চর্বি জাতীয় খাবার, লবণ, চিনি জাতীয় ইত্যাদি খাবার পরিহার করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করা: নিয়মিত ব্যায়াম করলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফিট থাকে। যেমন- হাঁটাহাঁটি করা, বাইসাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, যোগ ব্যায়াম করা, খেলাধুলা করা, দড়ি লাফানো ,নাচ করা, এরোবিক ব্যায়াম, জগিং লাফ ইত্যাদি ব্যায়াম করে হার্ট কে সবল, সুস্থ রাখা যায়।
মাদককে না বলুন-অতিরিক্ত ধূমপান, মধ্যপান, অ্যালকোহল, তামাকজাত দ্রব্য ইত্যাদি হার্টের স্বাস্থ্য কে জোরালো আঘাত করে এবং হার্টের প্রচন্ড ক্ষতি করে।তাই আপনার হার্ট কে সুস্থ রাখতে এ সমস্ত নেশা জাতীয় যেকোন মাদকদ্রব্য পরিত্যাগ করুন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা- হার্টকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার হার্টের কোন সমস্যা আছে কিনা তা ধরা পড়বে এবং তখন কোন সমস্যা থাকলে চিকিৎসা করে হার্টকে সুস্থ রাখা খুব সহজ হবে।
মানসিক চাপ-দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হার্টের স্বাস্থ্য কে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।মানসিক চাপ যেমন দুশ্চিন্তা, টেনশন হার্টের ব্যাপক ক্ষতি করে। তাই আপনার যেকোন সমস্যার সমাধানের জন্য সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন এবং অন্যান্য রিলেটিভ লোকজনের সাথে পরামর্শ করুন।
সঠিক পরিমাণ ঘুমানো- যথেষ্ট সময় ঘুমানো হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি ঘুম একেবারে কম হয় তাহলে হার্টের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিয়মিত সঠিক পরিমাণ প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। কোন প্রকার রাত জেগে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
খনিজ সমৃদ্ধ খাবার-খনিজ সমৃদ্ধ খাবার হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী ।খনিজ সমৃদ্ধ খাবার যেমন -ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ,ক্যালসিয়াম এবং ফলেট জাতীয় খাবার যেমন- কাঠ বাদাম, বাদাম, পেঁয়াজ, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি খেলে হাটের জন্য উপকার হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ-শরীরে যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে যে কোন অসুখ-বিসুখ এর ক্ষেত্রে সঠিক মত কাজ করে না। অর্থাৎ ডায়াবেটিস থাকলে অন্যান্য অসুখ-বিসুখ সহজে ভালো হয় না। ডায়াবেটিস থাকলে আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।তাই আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
উচ্চ রক্তচাপ-হাই ব্লাড প্রেসার এবং হাই কোলেস্টেরল হার্ট রোগের প্রধান কারণ। এই দুটি অসুখ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্টের তেমন একটা ক্ষতি হয় না। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা- অতিরিক্ত ওজন হার্ট রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অথবা ব্যায়াম করে আপনার ওজন কমিয়ে সঠিক পরিমাণ আপনার দেহের ওজন রাখুন।
নিয়মিত ডায়েট-হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকার সাথে ফল, সবজি ,গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন যেমন মাছ এবং হাঁস মুরগি এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন জল পাই তেল) সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন।
দুর্বল হার্ট কে সবল করার জন্য উপরে উল্লেখিত উপায় গুলো মেনে চলার পরেও আপনার হার্টের সুস্বাস্থ্যের জন্য একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করুন।
সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায়:
দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় সমূহ সম্পর্কে উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে কিভাবে বা কি কি উপায়ে দুর্বল হার্ট সবল করা যায়। এ পর্যায়ে আমরা সার্জারি বা অপারেশন ছাড়াই হার্ট ব্লক কিভাবে খোলা যায় বা হার্ট ব্লক কিভাবে দূর করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
আরো পড়ুন :ফুসফুস ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে- রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ
বিশেষ কিছু নিয়ম অনুসরণ করে আপনি সার্জারি বা অপারেশন ছাড়াই হার্টের ব্লক দূর করতে পারেন বা নিয়মগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে সার্জারি বা অপারেশন ছাড়াই হাতের ব্লক নিরাময় করতে পারেন।সেগুলো হল-
প্রতিদিন ব্যায়াম করা- আপনি যদি হার্টের ব্লক নিরাময় করতে চান তাহলে প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার শরীরে সঠিক পরিমাণে অক্সিজেনের অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে যার কারণে হার্ট হবে সুস্থ এবং স্বাভাবিক। প্রতিদিন নিয়মিত ২ বার সকালে ২৫-৩০ মিনিট এবং বিকালে ২৫-৩০
ব্যায়াম করলে আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো উপকার পাবেন। অনেক ব্যায়াম আছে যেমন- হাঁটাহাটি করা, সাঁতার কাটা,বাইসাইকেল চালানো, খেলাধুলা করা, দড়ি লাফানো, যোগ ব্যায়াম করা, এ্যারোবিক ব্যায়াম, নাচ করা ইত্যাদি।
দুশ্চিন্তা না করা-মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা সার্জারি ছাড়া হাট ব্লক খোলার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনি যদি মানসিক দুশ্চিন্তা না করেন। তাহলে আপনার হার্টের জন্য খুবই উপকার হবে। দুশ্চিন্তা হার্টের সমস্যা কে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই আপনি কোন দুশ্চিন্তা করবেন না বা কোন টেনশন করবেন না।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হার্টের স্বাস্থ্য কে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।মানসিক চাপ যেমন- দুশ্চিন্তা, টেনশন হার্টের ব্যাপক ক্ষতি করে। তাই আপনার যেকোন সমস্যার সমাধানের জন্য সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন এবং অন্যান্য রিলেটিভ লোকজনের সাথে পরামর্শ করুন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এবং পাড়া-প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলুন। সব সময় হাসিখুশি থাকুন।
তাহলে দেখবেন আপনার টেনশন অনেকটাই কমে যাবে এবং সেই সাথে হার্ট ব্লকের জন্য অনেক উপকার হবে।
ধূমপান পরিহার করুন- আমরা সকলেই জানি ধূমপান হল স্বার্থের জন্য মহা ক্ষতিকর। হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়ার পিছনে আর একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো ধূমপান করা। সুতরাং আপনি যদি সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক থেকে মুক্তি পেতে চান এবং আপনার হার্ট কে সুস্থ রাখতে চান তাহলে ধূমপান, অ্যালকোহল, মদ্যপান এবং যেকোন তামাক জাত দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকুন।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ -শরীরের অতিরিক্ত ওজন হচ্ছে হার্টের জন্য একটি খুবই ক্ষতিকর দিক। আপনার ওজন যদি অতিরিক্ত বেশি থাকে তাহলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।। এছাড়া শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেশি হলে শরীরের অন্যান্য সমস্যা অসুখ-বিসুখ আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই আপনার হার্ট কে সুস্থ রাখতে অবশ্যই আপনার দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার- হার্ট ব্লক হওয়ার আর একটি অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া। চর্বিযুক্ত খাবার খেলে খেলে রক্তনালী ব্লক হয়ে যেতে পারে। সেজন্য সবারই উচিত চোর বিযুক্ত খাবার পরিহার করা। ছবি দিতে খাবার বাদ দিলে বা পরিহার করলে সার্জারি ছাড়াই আপনার হার্টের সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।
চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- লাল মাংস, গরু- খাসির মাংস, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়,তৈলাক্ত খাবার, চর্বি জাতীয় খাবার, লবণ, চিনি জাতীয় ইত্যাদি খাবার পরিহার করুন।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার- হার্ট সুস্থ ,সবল রাখতে হলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন। ফল, শাকসবজি ,মাছ, দুধ এবং ডায়েরি পণ্য, বাদাম ও বিনা গাছের বীজ বেশি খাওয়া হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য উপকারী।
ঔষধ সেবন: সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক নিরাময় করার আরেকটি উপায় হচ্ছে ঔষধ সেবন। তবে আপনি ইচ্ছা করে যেকোন ঔষধ খেতে পারবেন না । অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খেলে কোন কোন সময় সমস্যা হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের মাধ্যমে সার্জারি ছাড়াই হার্ট ব্লক নিরাময় করা যেতে পারে।
এছাড়া কিছু ওষুধ আছে যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। নাইট্রোগ্লিসারিন নামক ঔষধ টি আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন ।এটি বুকের সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায় এর ক্ষেত্রে এই ওষুধটি ভালো কাজ করে।
নিয়মিত রক্তচাপ চেক-নিয়মিত ব্লাড প্রেসার চেক করুন। বছরে একবার রক্তের শর্করা এবং চর্বি মেপে দেখুন এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সঠিক পরিমাণ ঘুমান- রাত না জেগে অথবা রাত জেগে কাজ না করে সঠিক পরিমাণ ঘুমান। হার্টকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্তত 8 থেকে 9 ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
কত বছর বয়সে হার্ট ব্লক হয়?
দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় সমূহ সম্পর্কে এবং হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে প্রশ্ন উঠে আসছে যে কত বছর বয়সে হার্ট ব্লক হতে পারে।হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অল্প বয়সেও হার্ট ব্লক হতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা সারা বিশ্বব্যাপী
দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে।জন্মগত হৃদরোগ, রক্তনালী সংগঠন, জিনগত ত্রুটি ইত্যাদি কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।এছাড়া অল্প বয়সে রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি হওয়া এবং অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়া, ধূমপানের অভ্যাস, মানসিক চিন্তা ইত্যাদির কারণে অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
আরো পড়ুন: স্বপ্নদোষ বন্ধ করার ব্যায়াম -স্বপ্নদোষ বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়
বর্তমানে তরুণরা অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আসক্তি, পরিশ্রম না করা, রাত জেগে মোবাইল, কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ অথবা টিভি চালানো,মাদকাসক্তির উপর আসক্তি ইত্যাদির কারণে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ছে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরো বলেন, বর্তমানে হার্ট অ্যাটাক হতে কোন বয়স লাগে না।
যে কোন বয়সে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ হতে পারে। ১৮ বছর থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত যে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন হার্ট এটাকে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর এক গবেষণায় দেখা গেছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৫% এর বেশি বয়স ৫০ বছরের নিচে। দেশের কয়েকটি হাসপাতালে রোগীর উপর
গবেষণা করে দেখা গেছে যে হাসপাতালে ভর্তি আট হাজার রোগীর উপর গবেষণা করা হয়। এতে দেখা যায় হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আট ভাগ রোগীর বয়স ৩০ বছরের কম। প্রতি 100 রোগীর ২৫ জনের বয়স 50 বছরের কম। দিনে দিনে অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের রোগী বেড়েই চলেছে।
চিকিৎসকরা আরো বলেন, ৪০ বছরের নিচে যে সমস্ত রোগীদের হাটের সমস্যা হচ্ছে তাদের মধ্যে তামাক সেবনের কারণেই তারা হার্ট অ্যাটকের শিকার হচ্ছেন।WHO (world health organisation) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, দেশের প্রতিবছর ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।
উপসংহার- দুর্বল হার্ট সবল করার উপায়:
আর্টিকেলের শেষ প্রান্তে এসে আমি এই কথা বলে শেষ করবো যে দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় সহ হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। পোস্টটি আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকলে অনেক উপকার পাবেন।
তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের কেউ পড়ার জন্য কমেন্ট, শেয়ার করে জানিয়ে দিন যেন তারাও হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে কিছু ধারনা নিতে পারেন। এতক্ষন আমার এই পোষ্টের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url