ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো জানতে চোখ রাখুন

সম্মানিত পাঠক বন্ধুরা,ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো ? বিষয়টি জানতে আর্টিকেলটি পড়ুন। আজ আমি ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো এবং ব্রেন টিউমারের মাথাব্যথা কেমন হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।

তাই আপনি যদি না জেনে থাকেন যে ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো  বা ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবেন তাহলে আমার এই আর্টিকেলের উপর চোখ রাখতে পারেন। আসুন তাহলে শুরু করা যাক ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো বা ব্রেন টিউমারের লক্ষণ গুলো কি কি জেনে নেই।

ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো ? 

টিউমার এমন একটা জটিল রোগ যা যেকোনো বয়সে হতে পারে। টিউমার রোগের চিকিৎসা অনেকখানি জটিল এবং কোন কোন সময় চিকিৎসা করেও দেখা যায় যে কাঙ্ক্ষিত অথবা ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। ক্ষেত্রবিশেষে এ রোগের চিকিৎসা ব্যয় বহুল হয়ে থাকে। 

আরো পড়ুন : মাথা ব্যাথার কারণ ,প্রতিকার, চিকিৎসা ও এর ঔষধ সম্পর্কে জেনে নিন

টিউমার হচ্ছে শরীরের যেকোন স্থানে বা যে কোন অঙ্গে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হওয়াকে বুঝায়। ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকার মত ফোলা ভাব দেখা দিলে সেটাকে টিউমার বলা হয়।যেমন -শরীরের যেকোন স্থানে ফুলে ওঠা। এই ফুলে ওঠা ছোট বড় হতে পারে।

এই ফোলার উপরে আঙ্গুল দিয়ে হালকা চাপ দিলে কোন কোন টিউমার নরম অথবা শক্ত অনুভূত হয়। মস্তিষ্কে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে ভিতরে বা মাথার খুলির ভিতরে হলে সেটা কে চিকিৎসকদের ভাষায় ব্রেন টিউমার বলা হয়। এই ব্রেন টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। 

বিনাইন বা নিরীহ টিউমার যা ক্যান্সার নয় এবং ম্যালিগন্যান্ট বা খারাপ ধরনের টিউমার যা ক্যান্সার জাতীয় টিউমার। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্রেন টিউমারের উৎপত্তি মস্তিষ্ক থেকে হয়। এগুলোকে প্রাইমারি ব্রেন টিউমার বলে।আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় শরীরের যেকোনো স্থানের টিউমার থেকে ব্রেনে ছড়িয়ে পড়ে। 

তখন এটাকে সেকেন্ডারি ব্রেন টিউমার বলা হয়। চিকিৎসকদের মতে ব্রেন টিউমারের লক্ষণ নানা ধরনের হতে পারে এর প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাথা ব্যথা রোগী যখন বিশ্রামে থাকে তখন মাথা ব্যথা কম হয় আর যখন পরিশ্রম করে তখন মাথা ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে। চিকিৎসকদের মতে, নিম্নে উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনি মনে করবেন যে আপনার ব্রেন টিউমার  হয়েছে। লক্ষণগুলো হল-

  • টিউমারের প্রধান লক্ষণ হল মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা বা চোখে কম দেখা। তবে মাথা ব্যাথা হলেই যে টিউমার তা কিন্তু নয়। সাধারণ মাথাব্যথা মানুষের প্রায় হয়েই থাকে যা নরমাল ওষুধ খেলেই তা সেরে যায়। সাধারণ মাথাব্যথা ১% কম কারণ হলো ব্রেন টিউমার।
  • আপনার যদি প্রতিদিন সাধারণত খুব ভোরে মাথা ব্যাথা শুরু হয় এবং তার সাথে শরীরে বা হাতে-পায়ে বা অন্য কোন অঙ্গে খিচুনি শুরু হয়ে সারা শরীরে খিচুনি ছড়িয়ে পড়ে ।তাহলে বুঝবেন আপনার ব্রেন টিউমারের জন্য মাথাব্যথা হচ্ছে।
  • আপনার ব্রেন টিউমার হলে বুঝবেন দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং রোগীর বা আপনার ব্রেনের সামনের অংশে টিউমার হলে রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে যায় এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে।
  • রোগীর যেদিকে টিউমার তার উল্টো দিকে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে, যদি মটর এরিয়ায় টিউমার হয়। 
  • মস্তিষ্কে খুলির নিচে টিউমার যদি হয় তখন রোগী হাঁটাহাঁটি করার সময় পড়ে যেতে পারেন অথবা ভারসাম্য হারিয়ে যেতে পারে। কানে ঠিক মতো শুনতে পাবেন না এবং কথা অস্পষ্ট হতে পারে।
  • আপনি যখন শুয়ে থাকেন তখন মানসিক চাপ আরো বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে টিউমারের ব্যথা আরো বাড়তে পারে। 
  • শিশুর যদি ব্রেন টিউমার হয় তাহলে শিশুর বমি বমি ভাব এবং বমি হয়তো অসুস্থতার সাধারণ কারণ হতে পারে ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রে এলে এমন দেখা দিতে পারে। 
  • ঘুম না হওয়া বা ঘুম কম হওয়া বাচ্চার একটি অন্যতম ব্রেন টিউমারের লক্ষণ। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আপনার শিশুকে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে।
  • ব্রেন টিউমার যদি অধিক পরিমাণ বড় হয়ে যায় তাহলে রোগীর হঠাৎ করে মৃত্যু হতে পারে।

উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে যে আপনার ব্রেন টিউমার হয়েছে। তখন খুব তাড়াতাড়ি নিউরো মেডিসিন বা নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট শরণাপন্ন হতে হবে ।সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনাকে ব্রেনের সিটি স্ক্যান এবং এম আর আই , ইসিজি ইত্যাদি পরীক্ষা করাতে পারেন।

ব্রেন টিউমারের মাথাব্যথা কেমন হয়?

ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো অথবা এর লক্ষণ কি তা উপরে আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম। এ পর্যায়ে ব্রেন টিউমারের মাথাব্যথা কি ধরনের হয়। সেটা নিয়ে আলোচনা করব। চিকিৎসকদের মতে ,ব্রেন টিউমারের জন্য মাথা ব্যথা হলে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের মাথার ব্যথা হয়ে থাকে। 

আরো পড়ুন: বুকে ব্যথা মানে কি হৃদরোগের লক্ষণ জেনে নিন

খুব ভোরবেলা অথবা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলে মাথাব্যথা বেশি হয়। টিউমারের জন্য যদি মাথাব্যথা হয় তাহলে সে মাথাব্যথা সব সময় থাকে ।অল্প অল্প হালকা হালকা ব্যথা বা মাঝারি ধরণের পুরো মাথায় ব্যথা হয় এবং সেইসাথে বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে। এবং হাঁচি অথবা কাশি দিলে মাথাব্যথা আরো বেড়ে যায়। 

আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা বা লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে। তাহলে দেরি না করে নিউরো মেডিসিন চিকিৎসকের বা নিউরো সার্জারি বিশেষজ্ঞের নিকট চিকিৎসা নিন।

ব্রেন টিউমার হলে কি ভাল হয় ?

ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো ? উপরের লক্ষণ বা সমস্যাগুলো দেখা দিলে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছেন অথবা ব্রেন টিউমার হতে চলেছে। এখন প্রশ্ন হল ব্রেন টিউমার কি ভালো করা সম্ভব? চিকিৎসকদের মধ্যে ব্রেন টিউমার চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। আপনার মস্তিষ্কে যদি টিউমার হয়। 

তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই। ব্রেন টিউমারের লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নিলে এ রোগ ভালো হয়ে যাবে। মস্তিষ্কে যদি টিউমার হয়ে থাকে তাহলে এ ধরনের রোগের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে মেডিকেল চিকিৎসা, সার্জারি ,রেডিওথেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি দেওয়া যেতে পারে।

তবে ব্রেন টিউমারের মূল বা প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে সার্জারি করা। কিন্তু কিছু টিউমার আছে অল্প বা কম যা ওষুধের মাধ্যমে পুরোপুরি ভালো করা সম্ভব। তবে চিকিৎসক যদি পরীক্ষা করে দেখেন যে অপারেশন করতে হবে। তাহলে দেরি না করে অপারেশন করে নেওয়ায়  সবচেয়ে ভালো। 

কিছু কিছু টিউমার আছে যেগুলো মস্তিষ্কের মূল জায়গা থেকে আলাদা থাকে। এদের চতুর্দিকে পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এ ধরনের টিউমার পুরোপুরি কেটে ফেলা সম্ভব। কিন্তু মস্তিষ্কের মূল জায়গায় যদি টিউমার থাকে ।সেক্ষেত্রে অস্ত্র পচার করে পুরো টিউমার কেটে ফেলা সম্ভব হবে না।এক্ষেত্রে টিউমার আংশিকভাবে কেটে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে।

টিউমার অপারেশন না করলে কি হয়: 

কেউ যদি প্রশ্ন করেন যে ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো ? এর উত্তরে বলা যায় যে উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো আপনি ভালো করে পড়লে বুঝতে পারবেন এবং এই লক্ষণগুলো আপনার শরীরে যদি অনুভূত হয়। তাহলে বুঝবেন যে আপনার ব্রেন টিউমার হয়েছে।ব্রেন টিউমারের জন্য সার্জারি হল একটি কার্যকরী চিকিৎসা। 

তবে চিকিৎসক রোগীকে আগে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।যেমন- এম আর আই, সিটি স্ক্যান, ইসিজি ইত্যাদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন যে রোগীকে অপারেশন করা অথবা সার্জারি করা যাবে কিনা। যদি সার্জারির প্রয়োজন হয় তাহলে দেরি না করে সার্জারি করে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো হবে। 

আর যদি চিকিৎসক বলেন যে সার্জারির প্রয়োজন নেই ।ওষুধ এর মাধ্যমে এই ব্রেন টিউমার ভালো হয়ে যাবে । তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ খেতে হবে। এক্ষেত্রে রোগীর টিউমারের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নিবেন। অনেক সময় হতে পারে চিকিৎসক টিউমারটি পুরোপুরি 

অপারেশন করবেন অথবা মস্তিষ্কের সংবেদনশীল অঞ্চলের কাছে আংশিকভাবে অপসারণ করতে পারেন অথবা টিউমারের সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করবেন। মোটকথা হল রোগীর মস্তিষ্কের টিউমারের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক অপারেশন করতে পারেন। আবার যদি অপারেশন করার প্রয়োজন না হয় 

তাহলে আপনাকে চিকিৎসক ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। তবে চিকিৎসকরা বলেন টিউমার যদি অপারেশনের প্রয়োজন হয় তাহলে যদি অপারেশন না করা হয় সেই টিউমারটি ভবিষ্যতে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। তাই আপনার যদি কোন টিউমার থাকে ব্রেন টিউমার হোক আর শরীরের যে কোন টিউমার হোক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনাকে সামনের দিকে এগোতে হবে।

শেষ কথা -ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝব:

বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে আমি এ কথা বলে শেষ করব যে যেহেতু টিউমার হল একটি জটিল রোগ। সেহেতু আপনার যদি উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং যেকোনো টিউমার হলে অথবা মস্তিষ্কের টিউমার হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করুন। 

আরো পড়ুন: চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত জেনে নিন 

উপরে উল্লেখিত ব্রেন টিউমার হলে কিভাবে বুঝবো  লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আপনি কোন চিন্তা না করে সরাসরি নিউরো মেডিসিন অথবা নিউরো সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করুন। চিকিৎসকরা যদি অপারেশনের প্রয়োজন মনে করেন তাহলে অপারেশন করবেন অথবা যদি অপারেশন এর প্রয়োজন না হয়। তাহলে ওষুধ সেবনের পরামর্শ সহ অন্যান্য সতর্কতামূলক পরামর্শ দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url