হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কি তা জেনে রাখুন
হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কি ? তা কি আপনি জানার জন্য গুগলে সার্চ করছেন ? তাহলে একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন ।আজ আমি আলোচনার মাধ্যমে আপনাদেরকে জানিয়ে দেব হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কি বা কি করা দরকার।
চলুন তাহলে পাঠক বন্ধু, আর দেরি না করে শুরু করা যাক হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কি বা কি কি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা আমরা জেনে নেই।
বুকে ব্যথা হলে কি করবেন:
হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আমার এই পোস্টের সঙ্গেই থাকুন। বুকের ব্যথা হচ্ছে একটি সাধারণ অথবা জটিল সমস্যা। প্রায় প্রত্যেকটা মানুষেরই কোন না কোন সময় বুকের ব্যথা হচ্ছে। বুকে ব্যথা আস্তে আস্তে জটিল আকার ধারণ করে। কারো কারো কঠিন পরিশ্রম করলে বুকে ব্যথা হয়।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বর হলে মানুষ কি মারা যায়
হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কি কি তা জানতে আর্টিকেলটি আরো পড়ুন। অত্যন্ত পরিশ্রমের কারণে যদি বুকে ব্যথা হয় তাহলে এটি কোন মারাত্মক সমস্যা নয়। আবার কারো কারো ঘুম কম হলে বুকে ব্যথা হয়। আবার ঠান্ডা লাগার কারণে বুকে কফ জমলে বুকে ব্যথা হতে পারে। আবার অনেক সময় গ্যাস্টিকের সমস্যা থাকলে বুকে ব্যথা হতে পারে।বুকের ব্যথা জটিল আকার ধারণ করার সাথে সাথে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- যখন বুকের ব্যথা অস্বাভাবিক মনে হবে। তখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া উচিত। যদি দেরি করেন তাহলে বড় ধরনের ঝুঁকি থাকে। বুকে ব্যথার কিছু কিছু কারণ হৃদরোগের ক্ষতি হতে পারে।
- বুকে ব্যথার উপর গুরুত্ব না দিলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকতে পারে। চিকিৎসকরা বলেন হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে রোগীকে রেস্ট করতে হবে। শুয়ে বসে থাকতে হবে। কোন কাজ করা বা হাঁটা চলা যাবে না।
- বুকে ব্যাথা হলে একটা ইসিজি করা ভালো ।কারণ হাটের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকলে তা জীবনের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি হতে পারে ।
- হার্ট এ্যাটাক যদি বড় হয় তাহলে গোল্ডেন আওয়ার এর মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে গেলেই রোগীর মৃত্যু থেকে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনায় বেশি।
- চিকিৎসকরা বলেন বুকের একদম মাঝখানে যদি ব্যথা হয় এবং আস্তে আস্তে দুই বাহু চোয়ালে ব্যথা করতে থাকে এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হতে পারে। তাহলে হাটের সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। তাই ব্যথা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে দ্রুত গতিতে যেতে হবে।
- বুকে ব্যথা হলে এসপিরিন বা ডিসপিরিন300mg জাতীয ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
- যদি বুকে ব্যথা হয় তাহলে নাইটোগ্লিসারিন নামক একটি স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।রোগী বসা অবস্থায় জিহবা উঁচু করে মুখের ভিতর স্প্রে করলে ব্যথা কমে যাবে। তবে দ্রুত গতিতে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
- চিকিৎসকের নিকট যাওয়ার সাথে সাথে তার খুব দ্রুত একটা পরীক্ষা করাতে হয়। এরপর একটি ই সি জি করাতে হবে। তার সাথে টপোনিন ও রক্তে শর্করার পরীক্ষা করাতে হবে।
- তবে বুকের ব্যাথা হলেই যে সঙ্গে সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়। বিষয়টা এমন নয় ।এটা একটা উপসর্গ। আর যদি গুরুতর ব্যথা হয় এবং ব্যথা যদি না কমে তাহলে রোগীর মারাত্মক অবস্থা আকার ধারণ করতে পারে এবং বুঝে নিতে হবে যে হার্ট এটাক হয়ে গেছে।
- একবার যদি হার্ট অ্যাটাক হয় তাহলে আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন রোগীর জীবন যাপনের নানা ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়মিত ভালো মতো ফলোয়াফ করতে হবে।
- চিকিৎসকদের মতে, বুকে ব্যথা হলে কোন টেনশন বা আতঙ্কিত হবেন না ।শান্ত থাকতে হবে। শান্ত থাকলে বুকের ব্যথায় সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারবেন।
- তৈলাক্ত খাবার বা ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করতে হবে। অথবা যেসব খাবার খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা বেড়ে যায় সেগুলো খাওয়া বাদ দিতে হবে।
- আলসারের কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে। তাই আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে। যদি আলসার ধরা পড়ে তাহলে আলসারের চিকিৎসা করলে বুকের ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
- অ্যাজমা জনিত সমস্যার কারণে বুকে ব্যাথা হতে পারে। তাই ভেজা বা স্যাঁতসেতে, নোংরা পরিবেশে ও কলকারখানার ধোঁয়া স্থানে বসবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অ্যাজমার জন্য আলাদা চিকিৎসা নিতে হবে।তাহলে বুকে ব্যথা থাকবে না।
- কি কি কারনে অথবা কি জন্য বুকে ব্যথা হচ্ছে আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে একজন অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট গিয়ে পরামর্শ নিন।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম, বুকে আঘাত লাগা ,মানসিক চাপ ,অতিরিক্ত চিন্তা ,টেনশন, ডিপ্রেশন এর কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে। তাই এগুলো বিষয় থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট থেকে পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বুকে ব্যথা সবচেয়ে ভালো ওষুধ কোনটি:
হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কি এবং এর ঔষধ কোনটি ভালো তা আমাদের জানা দরকার। তাহলে আসুন বুকে ব্যাথার সবচেয়ে ভালো ওষুধ কোনটি আমরা জেনে নেই।
- এনজাইনা(Angyna) -এই ওষুধটি বুকের ব্যথা উপশম করতে পারে। আবার নাইট্রেট বড়ি বা স্প্রে দ্রুত বুক ব্যথার কাজ করে। রক্তনালী গুলি প্রশস্ত এবং শিথিল করে।
- নিফেটলল50mg/20mg- ট্যাবলেট বুকে ব্যথা হলে চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে এটি খাওয়া যেতে পারে। এনজাইনা হচ্ছে বুকে অস্বস্তি বা বুকে ব্যথা রোধ করা অ্যান্টি প্লাটিলেট ঔষধ।
- থ্রম্বলাইটিক(Thrombolytic) ঔষধ- এটি হার্ট অ্যাটাকে ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধটি ধমনীর জমাট বাধা রক্তকে গলিয়ে দেয়।
- ওরাল নাইট্রেট(Oral Nitrate)-ডাইনাইট্রেডস এর এনজাইন আক্রমণ প্রতিরোধ করার ব্যাপারে এই ওষুধ টি কাজ করে। নাইট্রো গ্লিসারিন স্কিন প্যাচেস।এগুলো এনজাইনা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি নিয়মিত ব্যবহারে এ সমস্ত প্যাচ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে পারে।
২৪ ঘন্টা ধরে এক নাগারে ব্যবহার করলে কয়েক ঘন্টা খুলে রাখা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ/ হার্টের ব্যথার লক্ষণ:
হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কি সেটা তো আমরা জানতে পারলাম। এবার হার্টের ব্যথার লক্ষণ কি কি বা হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলো কি ধরনের তা আমাদের জানা দরকার। যেহেতু বুকের ব্যথা থেকেই হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটে। তাই হার্টের লক্ষণগুলো আমাদের জানা জরুরী ।
আরো পড়ুন: মহিলাদের হাঁটু ব্যথার কারণ কি কি এবং এর প্রতিকার সমূহ জানুন
হার্ট অ্যাটাকের কিছু লক্ষণ আছে লক্ষণ গুলো যে কোন একটি দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
- হৃদযন্ত্র বা হাটে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালী যদি বন্ধ হয়ে যায়। এবং এর ফলে রক্ত যদি হাটে যেতে না পারে। তাহলে হাটের মাংসপেশিতে প্রয়োজন মাফিক অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। আর তখনোই হার্ট অ্যাটাক হয়।
- চিকিৎসকরা বলেন, হার্ট অ্যাটাকের কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলে সময়মতো চিকিৎসা না করলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
- বুকের মাঝখানে ব্যথা- হার্ট অ্যাটাকের প্রথম উপসর্গই হচ্ছে বুকে ব্যথা।বুকের ডানে বা বামে ব্যথা হবে না। একেবারে বুকের মাঝখানে ব্যথা হবে।
- হাত ও ঘাড় ব্যথা- হার্ট এ্যাটাকের আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে হাত ও ঘাড় ব্যথা হবে। ব্যথা যখন ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়বে তখন মনে হবে কোন ব্যক্তি গলার মাংসপেশী খুব জোরে চেপে ধরেছে।
- পেটে ব্যথা- বুকে প্রচন্ড ব্যথা পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথা কে অনেকেই গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বলে থাকে,।হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা পেটে হলে সেটি খুবই তীব্র হবে এবং পেটে খুবই জ্বালাপোড়া হবে।
- কাশি ও শ্বাসকষ্ট- হার্টের আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে শ্বাসকষ্ট শুরু হবে ।এবং তার সাথে কাশি হবে। হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা যদি জরুরী ভিত্তিতে না দেওয়া হয়।তাহলে হার্ট আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে ফুসফুসে পানি জমে কাশি ও শাঁস কষ্ট হয়।
- শরীর ঘেমে যাবে-যদি বুক ব্যথার সাথে সাথে শরীর প্রচন্ড ঘাম হয়। তাহলে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ।দেরি না করে চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।
- অজ্ঞান হওয়া- বুকে ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। তখন বুঝতে হবে হাটের সমস্যা। এটাও হার্ট অ্যাটাকের একটি লক্ষণ।
- বমি হওয়া- হার্ট এ্যাটাকের আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে বমি বমি ভাব বা বোমি হওয়া। বমি হলে তার সাথে যদি বুকে ব্যথা থাকে তাহলে হার্ট এ্যাটাকের উপসর্গ বা লক্ষণ হতে পারে।ঞ
- অন্তত এক মাস আগে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দেয়। হৃদপিন্ডে রক্ত চলাচল বন্ধ, শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল ,মানসিক চাপ, বুকের মাঝে চেপে ধরা ব্যথা ,শরীর ভারী হওয়া, জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।
উল্লেখিত হার্ট অ্যাটাকের যেকোনো একটি লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত গতিতে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করতে হবে। চিকিৎসকের মতে, হাসপাতালে নেওয়ার পর রোগীর রক্ত পাতলা করার জন্য ওষুধ দিতে হবে। সেই সাথে রক্তনালী হাটে সরবরাহ করে সেটিকে আরো প্রসারিত করার জন্য এক ধরনের ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। এটা দিলে রোগীর জীবন বেঁচে যেতে পারে।
শেষ কথা- হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কি:
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে আমি এই কথা বলেন ইতি টানবো যে হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় বুকে ব্যথা মানেই হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের কারণ বা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। তাই উপরে উল্লেখিত যেকোনো একটি সমস্যা ধরা পড়লে সাথে সাথে অবহেলা না করে হাসপাতালে ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরো পড়ুন: মাথা ব্যথার কারণ প্রতিকার চিকিৎসা ও এর ওষুধ সম্পর্কে জেনে নিন
নইলে রোগীর জীবন নাও বাঁচতে পারে। তাই পোস্টটি পড়ে আপনি যদি কোন উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে মন্তব্য করুন এবং অন্যদেরকে পড়ার জন্য সহযোগিতা বা উৎসাহিত করুন।যেন তারাও এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url