এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় সমূহ জেনে নিন
প্রিয় পাঠক বন্ধু, আপনি কি এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় সমূহ সম্পর্কে জানার জন্য গুগলে বা youtube এ সার্চ করছেন ? তাহলে একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন।আজ আমি আলোচনা করব এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় সমূহ সম্পর্কে।
চলুন তাহলে শুরু করা যাক এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
এলার্জি কি -কাকে বলে:
এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় জানার আগে এলার্জি কি তা আমাদের জানা দরকার।এলার্জি এমন একটি রোগ যা আমাদের শরীরের যেকোনো স্থানে হঠাৎ করে চুলকানি আরম্ভ হয়। পরে ঐ জায়গাতে ফুসকুড়ি ধরনের উঠতে দেখতে পাওয়া যায়। এলার্জি চুলকানি দূর করার তার আগে আমাদের জানা দরকার এলার্জি কি। অ্যালার্জি হচ্ছে একটি এলার্জি জনিত রোগ।
আরো পড়ুন :কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে জানুন
ইংরেজি পরিভাষায় Allergy এলার্জি বলতে কোন পরিবেশে অবস্থিত কতগুলি বস্তুর উপস্থিতিতে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা তন্ত্রের অতি সংবেদনশীলতার কারণে সৃষ্ট কতগুলো তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে বোঝায়।সাধারণ ভাষায় এলার্জি বলতে আমাদের শরীর চুলকানিকে বুঝায়।
চুলকানির কারনে শরীরে লাল চাকা চাকা বা ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা যায়। যেমন-গোসল করে উঠলে শরীর চুলকানো তারপর আবার ভালো হয়ে যায়, শরীর ঘেমে গেলে তারপর ফ্যানের বাতাস লাগালে শরীরে চুলকানি শুরু হয় এবং তার সাথে কারো কারো শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
এটাই হচ্ছে এলার্জি। এই বস্তুগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে না।এটাকেই সাধারণত এলার্জি বলা হয়ে থাকে। এর লক্ষণ গুলো হচ্ছে চোখ লাল হওয়া, ফুসকুড়ি তার সাথে চুলকানি, নাক দিয়ে সব সময় পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়া, খাবার সহ্য না হওয়া, সাধারণ ক্ষতিকর নয় এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে এলার্জি বলা হয়।
এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়:
অ্যালার্জি চুলকানি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে এলার্জি চুলকানি দূর করা যায় তা আমাদের জানা দরকার। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে শরীরের এলার্জি চুলকানি দূর করা যায়।
- বাহিরে কোথাও গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন।এতে ধুলাবালি, ময়লা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
- সকালে ব্যায়াম করতে বাসা থেকে বের হলে নাক, মুখ মাথা সহ ঢেকে বের হওয়ার চেষ্টা করুন। এতে বাহিরের তাপমাত্রার সাথে এডজাস্ট হতে সুবিধা হবে।
- শীতে ঠান্ডা মেঝেতে খালি পায়ে চলাফেরা করবেন না। কারন শীতে ঘরের মেঝে খুব ঠান্ডা থাকে। তাই শীতকালে মেঝেতে খালি পায়ে হাঁটলে খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ-আপনার শরীরে যদি এলর্জি দেখা দেয় তাহলে পুরো শরীরে র্যাশ দেখা দিতে পারে। সুতরাং খুব দ্রুত একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- পুষ্টিকর খাবার-প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যেমন ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন- লেবু, কামলা, মাল্টা, জাম্বুরা, পেয়ারা ,কাঁচা মরিচ ,স্ট্রবেরি ইত্যাদি খেতে হবে এবং তার সাথে নিয়মিত তাজা শাকসবজি খেলে এলার্জি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
- হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো সমস্যা থাকলে বাজারে একাধিক কার্যকরী ওষুধ পাওয়া যায়। সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তা সেবন করা যেতে পারে।
- শীতকালে বেশি বেশি গরম ও মোটা কাপড় ব্যবহার করুন। যাতে ঠান্ডা না লাগে।
- ময়লাযুক্ত পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন।পোশাক ঘেমে গেলে বা ময়লা হলে তা ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
- ময়লা, আবর্জনা, নোংরা জাতীয় কোন কিছু নাড়াচাড়া বা ঘাটাঘাটি করা থেকে বিরত থাকুন এবং জঙ্গলের মধ্যে যাবেন না ঝোপ ঝাড়ে যাবেন না।
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার- এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে দুই চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও সামান্য মধু মিশিয়ে প্রতিদিন নিয়মিত এক থেকে দুইবার পান করুন। দেখবেন আপনার এলার্জি কমে গেছে।
- মধু- দুই টেবিল চামচ খাঁটি মধু একটু পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন এক থেকে দুইবার খেলে এলার্জি দূর হবে।
- আদা- আদা দিয়ে চা তৈরি করে তার সাথে একটু খাঁটি মধু মিশিয়ে প্রতিদিন নিয়মিত গান করলে এলার্জি কমে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভেজোস উপাদান দিয়ে তা তৈরি করে খেলে আপনাদের এলার্জি কমতে পারে।
- পরিষ্কার-সব সময় বিছানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ময়লাযুক্ত ধুলাবালি যুক্ত বিছানায় ঘুমানো যাবে না। শুধু বিছানা নয় আপনার শরীরসহ ,ঘরবাড়ি আশেপাশে সব কিছুই পরিষ্কার থাকা ভালো।
- আপেল সিডার ভিনেগার- এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে তুলা দিয়ে চুলকানির জায়গায় প্রতিদিন দুইবার লাগালে ত্বকের এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
- নারিকেল তেল-নারিকেল তেল ব্যবহারে আপনার স্কিনের এলার্জি কমে যেতে পারে। এতে রয়েছে মহেশজারাইজিং। যা এলার্জি দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। নারকেল তেল হালকা কুসুম কুসুম গরম করে এলার্জি স্থানে গরম তেলটি মাখুন ।তাহলে আপনার ত্বক এর এলার্জি ভালো হয়ে যাবে।
- অ্যালোভেরা জেল- ত্বকের এলার্জি থেকে মুক্তি পাবার মূল উপায় হচ্ছে অ্যালোভেরা জেল। ত্বকে এলার্জি বা চুলকানি থাকলে এলোভেরা জেল ব্যবহারে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাজা অ্যালোভেরা কেটে ত্বকে লাগাতে পারেন অথবা এলোভেরা জেল ত্বকে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তাহলে দেখা যাবে এলার্জির সমস্যা অনেক কমে গেছে।
- ব্রেকিং সোডা-এলার্জি ভালো করতে ব্রেকিং সোডা খুব সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। কারণ এটি ত্বকে পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সামান্য পানিতে এক চামচ সোডা মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এবং যেখানে এলার্জি সেখানে লাগান। তারপর 10 থেকে 12 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।প্রতিদিন নিয়মিত এটি তিন থেকে চার বার ব্যবহার করলে এনার্জি কমে যাবে।
- এলার্জি বস্তু ত্যাগ-এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার ভালো উপায় হল যে বস্তুতে এলার্জি রয়েছে তা এড়িয়ে চলা। যেমন- ধাতব অলংকার , কোন রাসায়নিক ডিটারজেন্ট, সাবান, পারফিউম, গাছ, ফুল, সিন্থেটিক কাপড়, বাসন কুশন, কাপড় চোপড় থেকে বিরত থাকুন।
- ত্বকে প্রদাহ বা এলার্জি হলে সেটি কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ এন্টিহিস্টামিন স্টেরয়েড মলম, ক্যালামিন লোশন ইত্যাদি ব্যবহারে এলার্জি কমে যাবে।
- লাল হয়ে যাওয়া ফুসকুড়ি এলার্জি বা চুলকানির ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে কিছুটা আরাম পাওয়া যাবে।
- প্রসাধন সামগ্রীতে এলার্জি থাকলে রাসায়নিক যুক্ত প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার বাদ দিতে হবে।
এলার্জি দূরিকরনের ঔষধ:
এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় সমূহ জানতে আমাদের এলার্জির ঔষধের নাম গুলো জানা থাকা দরকার। আমাদের দেশের বাজারে এলার্জির অনেক ঔষধ আছে। এলার্জির ঔষধের সাধারণ ধারণা হলো এন্টিহিস্টামাইন। এন্টিহিস্টামাইন গুলো হিষ্টামিনের ক্রিয়াকে ব্লক করে কাজ করে। যা একটি রাসায়নিক যা শরীরে এলার্জির প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে।
আরো পড়ুন: সামনের দাঁত ফাঁকা থাকলে কি হয়
- এন্টিহিস্টামিনের মধ্যে রয়েছে এ্যালাটোল সেটিরিজিন এটি সিজনাল এবং পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস এলার্জিজনিত এজমা এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। ফেক্স-120(ফেক্সোফেনাডিন) এটি মৌসুমী ও সারা বছরের এলার্জিক রাইনাইটিস চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- লোরা- 10 - (লোরাটাডিন) এই ওষুধটি সিজনাল ও পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস এবং ক্রনিক ইডিওপ্যাথিক আর্টিকেরিয়া এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া স্কিন এলার্জির কিছু মলম আছে চাইলে আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
- কাটিকোস্টেরয়েড ক্রিম-এই ক্রিমটি প্রদাহ এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। এন্টিহিস্টামিন ক্রিম চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। ক্যালসিনিয়াম ননিয়ামিন ক্রিম চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে কাজ করে।
এলার্জি দূর করার চিকিৎসা :
এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় সমূহ সম্পর্কে জানতে ওষুধ ও চিকিৎসার কোন জুড়ি নেই। উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করেও যদি আপনার এলার্জি চুলকানি না কমে, যদি আরো বেশি হয় তাহলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট গিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। চিকিৎসক আপনার রক্ত পরীক্ষা করে,
এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর চিকিৎসক আপনাকে ঔষুধ ব্যবহার করতে বলবেন। ওষুধের পাশাপাশি এলার্জি ভ্যাকসিন দেওয়া লাগতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোতে এই পদ্ধতির চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। এটাই হচ্ছে এলার্জির রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
বর্তমানে এলার্জিজনিত রোগের ভ্যাকসিন সহ উন্নত চিকিৎসা আমাদের দেশেই হচ্ছে। তাই আপনি দুশ্চিন্তা না করে আপনার যদি এলার্জি সহ চর্ম রোগ থেকে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করে আপনার এলার্জি চিরতরে ধ্বংস করে একটি নতুন উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন।
এলার্জি হলে কি কি খাওয়া যাবেনা:
এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে আমার এই পোস্টের সাথে আরও থাকুন। এবার আমি এলার্জি হলে কি কি খাওয়া যাবেনা তা এখন উল্লেখ করবো। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক এলার্জি হলে বা এলার্জি চুলকানি থাকলে কি কি খাওয়া যাবে না।
আরো পড়ুন: নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সমূহ জানুন
এলার্জি হলে চিংড়ি মাছ, কাঁকড়া, ডিম, চিনাবাদাম, গম ,গরুর দুধ, মসুরের ডাল, টমেটো, বেগুন, আনারস, কলা, গাজর, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, যেমন- সালমান, টোনা, ম্যাক্রোলে ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছ খেলে এলার্জি হতে পারে বা এনার্জি থাকলে এগুলো খেলে আরো এলার্জি বাড়তে পারে।
এছাড়া ইলিশ মাছ, কবুতরের মাংস, হাঁসের মাংস ,তামাকজাত দ্রব্য ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কচু, রসুন, পেঁয়াজ, পুঁইশাক ইত্যাদি এলার্জি বা চুলকানি থাকলে এই খাবারগুলো না খাওয়াই ভালো।
শেষ কথা- এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায়:
পরিশেষে এ কথা বলে শেষ করবো যে এলার্জি চুলকানি দূর করার যে পন্থা গুলো রয়েছে সেগুলো উল্লেখ করেছি। আশা করছি পোস্টটি পড়লে এলার্জি সংক্রান্ত বিষয়ে আপনি অনেক উপকৃত হতে পারবেন। তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং অন্যান্যদেরকেও পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন।
এলার্জি সংক্রান্ত বিষয় যদি কোন ভুল ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে শেয়ার করতে পারেন। আর যদি কোন উপদেশমূলক আপনার কথা থেকে থাকে তাহলেও কমেন্টস করতে পারেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url