নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সমূহ জানুন

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আপনি যদি নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সমূহ জানতে চান।তাহলে আমার এই পোস্টের সঙ্গে থেকে এটি পড়লে নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সমূহ জানতে পারবেন।


কেননা আজ আমি শুধু মাত্র নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সমূহ সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য হাজির হয়েছি। 

নাক ডাকার কারণ : 

নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সমূহ জানতে প্রথমে  নাক ডাকার কারণ কি কি তা আমাদের সবারই জানা দরকার। নাক ডাকা এমন একটি বিরক্তিকর সমস্যা যা শুধু মাত্র নিজের জন্যই অসুবিধা নয়। আশেপাশে যারা থাকেন তাদের জন্যও আরো বড় ধরনের অসুবিধা বা বিরক্তি করার বিষয়। 

আরো পড়ুন :দাঁতের পোকা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানুন

পুরুষ মহিলা এমনকি শিশুদের এই সমস্যা থাকতে পারে এবং শীতকালে একটি আরো বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। নাক ডাকার কারণ গুলো নিম্নে উল্লেখ করলাম-

  • নাক থেকে ফুসফুস পর্যন্ত যে বাতাস প্রবাহ হয় কোন কারনে এই বাতাস প্রবাহ হতে বাধাগ্রস্ত হয়। তখন ঘুমের সময় নাক ডাকা শুরু হয়। 
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হলে  অনেক মানুষ নাক ডাকেন। শরীরের চর্বি ,মেদ -ভুঁড়ি বৃদ্ধি পেলে শরীরের ওজন বাড়ে।তাই ওজন বাড়লে নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ে। 
  • নাকের ভিতর বিভিন্ন সমস্যা যেমন- নাকের হাড় বাঁকা ,নাকের ভিতর যদি পলিপ থাকে, নাকে মাংস বেশী বা বৃদ্ধি হলে নাক ডাকতে পারে।
  •  অতিরিক্ত চর্বি জমার ফলে মুখের ভিতর জায়গা কমে গেলে নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে।
  • যদি শ্বাসনালিতে বিভিন্ন ধরনের টিউমার হয়। সেই কারণে নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে।
  • জিহবার নিচে যদি টিউমার হয় তাহলে নাক ডাকতে পারে।
  • গলায় টিউমার অথবা বড় ধরনের টনসিল থাকলে ঘুমের সময় নাক ডাকতে পারে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের টিউমার থাকে। চিকিৎসকরা একে এডিনয়েড বলে থাকে। সেই এডিনয়েড যদি বড় আকারের থাকে তাহলে বাচ্চাদেরও ঘুমের সময় নাক ডাকে।
  • নাকের ভিতর এলার্জি থাকলে নাক ডাকতে পারে। 
  • জন্মগত বা বংশগত কারণেও কারো কারো নাক ডাকার মত সমস্যা হয়ে থাকে।
  • শ্বাসতন্ত্র সরু হলে বা চোয়ালে সমস্যা থাকলে ঘুমের সময় নাক ডাকতে পারে।
  • কোন কোন সময় চিত হয়ে ঘুমালে জিভ পিছনে চলে গিয়ে শ্বাসনালী বন্ধ করে দিলে নাক ডাকতে পারে।
  • ধূমপান, অতিরিক্ত মধ্যপান, অ্যালকোহল ,বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবনের কারণে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। 

নাক ডাকার প্রতিকারের বা সমাধানের ঘরোয়া উপায়:

নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সমূহ আরো জানুন । এবং সেই সাথে আমরা বলতে পারি নাক ডাকা রোগটি হচেছ অনেক খারাপ রোগ। কারণ নাক ডাকা শুধু নিজেরই সমস্যা নয় ।আশেপাশে বা ঐ বিছানায় যারা ঘুমায় তাদের আরো বেশি সমস্যা হয়। যেমন নাক ডাকা রোগী নাক ডাকছেন আর ঘুমাচ্ছেন কিন্তু তার পাশে বা ঔ বিছানায় যদি অন্য কেউ ঘুমানোর জন্য থাকে তাহলে তার অনেক বিরক্ত লাগে।


এবং ঐ ব্যক্তির ঘুম হয় না বা হলেও বিরক্তের কারণে আবার ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই নাক ডাকা সমাধানের বিশেষ ঘরোয়া টিপস নিচে উল্লেখ করিলাম-

  • ঘুমানোর সময় আপনার যদি নাক ডাকে তাহলে চিৎ হয়ে না শুয়ে যেকোনো এক পাশে কাত হয়ে ঘুমাবেন। তাহলে নাক ঢাকা অনেক কম হবে। কারণ কাত হয়ে ঘুমালে নাকের বাতাস চলাচলের পথটি খুলে যায়। সেজন্য শব্দ অনেক কম হয়।
  • আপনার যদি নাক ডাকার সমস্যা থাকে তাহলে অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। যত ওজন বাড়বে  নাক ডাকার সমস্যা তত বৃদ্ধি পাবে। তাই অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেললে নাক ডাকার সমস্যা কমে যাবে।
  • ধূমপান, মদ্যপান, অ্যালকোহল সহ যেকোন মাদকদ্রব্য কে না বলতে হবে ।শ্বাসনালীতে জটিলতা হয় ধূমপানের ফলে। ধূমপান বাদ দিলে শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা দূর হয়।তাই নাক ডাকা কমে যায়।
  • নাক ডাকা কমাতে উঁচু বালিশে ঘুমালে নাক ডাকা কমে যেতে পারে। উঁচু বালিশে মাথা রেখে ঘুমালে নাক ডাকা কিছুটা সুফল পাওয়া যাবে। 
  • নাক ডাকা রোধ করার জন্য বা দূর করার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানি কম খেলে শরীরের পানির ঘাটতি হয়। তখন নাক ডাকার সমস্যা হয়। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে শরীরে অন্যান্য উপকার হবে এবং শরীর হাইড্রেটেড থাকে। ফলে নাক ডাকার কিছুটা উপকার হতে পারে ।
  • অলিভ অয়েল তেল প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এক ফোঁটা করে দুই নাকে দিলে নাক ডাকা কমে যাবে ।নাকের ভিতরের অংশ এই তেলে পরিষ্কার করার ফলে নাক ডাকা কমে যায়।
  •  পুদিনা পাতার রস, দারচিনি  ও রসুন পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে কুলকুচি করলে নাক ডাকার সমস্যা কমে যাবে।
  •  নাক ডাকার সমস্যা সমাধানে ঘি সামান্য গরম করে সহনশীল অবস্থায় সামান্য একটু ঘি দুই নাকে দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
  •  রাতে ঘুমানোর আগে চা -কফি না খাওয়াই ভালো। এতে নাক ডাকার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  •  কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মসলাযুক্ত খাবার  নাক ডাকার সাথে সম্পর্ক আছে। বেশি পরিমাণে মসলাযুক্ত খাবার খেলে বেশি মাত্রায় পাকস্থলীতে এসিডের প্রতিক্রিয়া শুরু হতে পারে ।তাই তরকারিতে বা অন্যান্য খাবার রান্নায় মসলার পরিমাণ কম খেলে নাক ডাকা কমে যেতে পারে।

নাক ডাকা রোগের ঝুঁকি:

নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপাসমূহ জানতে গেলে নাক ডাকার ঝুঁকি সম্পর্কে জানার ইচ্ছা জাগে। চলুন তাহলে নাক ডাকার সমস্যা থাকলে কি ধরনের ঝুঁকি হতে পারে তা জেনে নেই। অনেকেই বলেন নাক ডাকা মানে হচ্ছে একটি সুখের নিদ্রা কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। চিকিৎসকরা বলেন, নাক ডাকা হচ্ছে একটি রোগ এবং এটি মারাত্মক রোগের উপসর্গ। নাক ডাকার কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে ।যেমন=


  • যাদের নাক টাকার সমস্যা রয়েছে তাদের শরীরে অক্সিজেন কমে যায়। ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে। হয়তোবা ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হতেও পারে।
  • নাক ডাকার সমস্যা থাকলে মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে ব্রেন স্টক হতে পারে।
  • মাথাব্যথা সহ শরীর ক্লান্ত, বিরক্তি ও অল্পতেই রেগে যেতে পারেন এই নাক ডাকার সমস্যার কারণে।
  • নাক ডাকার মত সমস্যা থাকলে ঘুম অনেক কম হয় তখন শরীরের অন্যান্য বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

তাই আপনাদের যদি নাক ডাকার মত কোন সমস্যা থেকে থাকে। তাহলে ঘরোয়া উপায় গুলো (উপরে উল্লেখিত) অবলম্বন করলে সমস্যা সমাধান হয়ে যেতে পারে। আর যদি নাক ডাকার সমস্যার সমাধান না হয়। তাহলে নিম্নোক্ত ঔষধ ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে পারেন।

নাক ডাকা দূর করার ঔষধ ও চিকিৎসা:

নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায় নমূহ জানতে আমার এই আর্টিকেলের সঙ্গেই থাকুন এবং জানুন নাক ডাকা বন্ধের ঔষধ ও চিকিৎসা কি কি। নাক ডাকার একটি অন্যতম প্রধান ওষুধ হচ্ছে অ্যাটোমক্সিটাইন(Atomoxetine)। প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নাক ডাকার জন্য এই ওষুধটি খুবই ভালো কাজ করছে।আর একটি ওষুধ নাক ডাকার বন্ধের জন্য আবিষ্কার হয়েছে। সেটি হচ্ছে এডি ১০৯ ।

যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নির্মাতা কোম্পানিএ্যাপনিমেডের গবেষকরা নাক ডাকা বন্ধের এই ওষুধটি উদ্ভাবন করেন ।চিকিৎসকরা বলেন এ ডি ১০৯ এই ওষুধটি নাক ডাকা রোগীদের জন্য সহজ নিরাপদ এবং কার্যকরী একটি সমাধান।ওষুধ টি শ্বাস নালি কে সক্রিয় রেখে বায়ু চলাচলের পথ খোলা রাখে। রাতে ঘুমানোর আগে এটি সেবন করলে নাক ডাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

তখন সার্জরির আর প্রয়োজন হবে না। নাক ডাকা বন্ধের জন্য উপরোক্ত ঔষধ গুলো চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে সেবন করা উচিত। তারপরেও যদি নাক ডাকা বন্ধ না হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে নাক সার্জারির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এটি তেমন জটিল অপারেশন নয়। চিকিৎসক নাকের পরীক্ষা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবেন। তারপরে তিনি সার্জারির ব্যবস্থা নিয়ে তারপর সার্জারি করে দিবেন।

এবং কিছু ঔষধ সরকারের পর খাওয়া লাগতে পারে সেটা ডাক্তার সাহেব প্রেসক্রিপশন করে দিবেন সেই মোতাবেক ওষুধ খেলে তারপর নাক সুস্থ হয়ে আপনার সুন্দর নতুন জীবন যাত্রা শুরু হয়ে  যাবে।


উপসংহার- নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায়:


বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে আমি এ কথা বলে শেষ করবো যে নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সমূহ উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আসলে নাক ডাকা একটি বিরক্তিকর রোগ যে ব্যাক্তি নাক ডাকে তারও অসুবিধা এবং আশেপাশে যারা থাকে তারা আরো অনেক বিরাট হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি আমার এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়ে থাকেন।


আরো পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বর হলে মানুষ কি মারা যায়


তাহলে নাক ডাকা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং যদি কোন উপকার পেয়ে থাকেন তাহলে কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করুন এবং শেয়ার করে অন্যান্য ব্যক্তিদের কেও জানিয়ে দিন যেন তারাও নাক ডাকা সম্পর্কে উপকৃত হতে পারেন। ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url