কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে জানুন
আপনি কি কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে তা জানতে চান ? তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। আজ আমি কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে তা বিস্তারিত আলোচনা করব।
আসুন তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নেই।
কানে কম শুনলে করণীয় কি:
কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে বা কানে কম শুনলে করণীয় কি এই বিষয়টি সবারই জানা দরকার। কারণ কান আমাদের এমন একটি সেনসিটিভ অঙ্গ যা সামান্য একটু আঘাত লাগলেই আমাদের বিরাট অসুবিধা হয়ে যায়। তাই কান এবং চোখ এই দুটির উপর আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং এর সাথে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
আরো পড়ুন :চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত জেনে নিন
অনেক মানুষ আছেন যারা জন্ম থেকেই কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগেন।আবার কেউ কেউ অনেক পরে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলেন। আবার কেউ কেউ একেবারেই কানে শুনতে পান না। আবার কোন কোন মানুষ আংশিক শুনতে পান। যাদের জন্ম থেকে শুনতে না পারার সমস্যা তারা ভাষা বা কথাবার্তা ভালো করে শিখতে পারেনা।
কানে ভালো শোনার জন্য শিশুর সচেতন:
কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে তার জন্য শিশুর সচেতনতার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।শিশুর জন্মের পর থেকে সে কানে ঠিকমতো শুনতে পাচ্ছে কিনা তা ভালো করে লক্ষ্য করুন।বাচ্চা যদি ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে তাহলে জোরে কোন শব্দ হলে শিশুটি চমকে উঠবে। অথবা হাত তালির শব্দ হলেও শিশুটি জেগে উঠবে। বাচ্চার জন্মের পর থেকে তিন মাস বয়স পর্যন্ত এইভাবে মাঝে মাঝে কিছু শব্দ করে দেখতে হবে যে শিশুটি ঠিক মতো শুনতে পাচ্ছে কিনা।
চার থেকে আট মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর কানের কাছে জোরে জোরে শব্দ হলে শিশুটি চোখের মনি নাড়ায় ও শব্দের দিকে ঘাড় ঘোরাতে থাকে। এক থেকে দেড় বছর বয়স হলে ২-৩ শব্দের শব্দ বাক্য বলতে পারলে বোঝা যাবে শিশুটির কান বা শ্রবণ তন্ত্র ঠিক আছে। আর যখনই এ ধরনের বিষয়গুলো যদি সঙ্গতিপূর্ণ না থাকে।
তাহলে খুব তাড়াতাড়ি নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে। শিশুর বেড়ে ওঠার সময় তার সাথে সময় দেওয়া বা কথা বলা আদর, যত্ন করা, হাসি দেওয়া উচিত। নইলে শিশুর কান ভালো থাকা সত্ত্বেও শিশুটি ভালো করে কথা বার্তা শিখতে পারবেনা।একজন মা গর্ভাবস্থায় তার শিশুর শ্রবণ তন্ত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণ,
ঔষধ সেবন ইত্যাদি শিশুর বধিরতার ঝুঁকি বৃদ্ধি হতে পারে। পুরোপুরি পরিণত না হলে যদি শিশুর জন্ম হয় তাহলে শিশু বধির বা কানে কম শুনতে পারে। জন্মের সময় নবজাতকের মস্তিষ্কে আঘাত লাগলে জন্মের পর শিশুটি বধির বা কানে আংশিক শোনার সম্ভাবনা থাকে। তাই শিশু অবস্থায় খুবই যত্ন সহকারে শিশুকে মানুষ করতে হবে। যেন কানে কোন প্রকার আঘাত না লাগে।
কানে ভালো শুনতে শব্দ দূষণ থেকে দূরে থাকুন:
কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে এবং কানে অল্প সোনার বা আংশিক শোনা রোধের জন্য অতিরিক্ত শব্দ থেকে দূরে থাকা হচ্ছে কানে ভালো শোনার জন্য একটি অন্যতম প্রধান উপায়। শব্দ দূষণের কারণে কানে শ্রবণের বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।তার পাশাপাশি শরীরে অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে।
তাই শব্দ দূষণ থেকে আপনাকে বা আমাকে অনেক দূরে থাকতে হবে। যেমন- স্যালো মেশিনের শব্দ, ওয়াকমানের উচ্চমাত্রার শব্দ, কোন নির্মাণ কাজে ব্যবহার জনিত যন্ত্রপাতির উচ্চমাত্রার শব্দ, ইঞ্জিন চালিত নৌকার শব্দ,ব্যান্ড সংগীতের যন্ত্রপাতির শব্দ, মোটরগাড়ি, ট্রেন, বিমান, হেলিকপ্টার, বিভিন্ন গাড়ির হর্ন বা ট্রেনের হর্ন, বাঁশির শব্দ ইত্যাদি শব্দ থেকে দূরে থাকলে কানের শ্রবণশক্তি কমে যাবে না।
প্রয়োজন ছাড়া কোন হর্ন বাজানো যাবে না।কোন পেশাগত কারণে কোন উচ্চ শব্দের মধ্যে যদি থাকতে হয় তাহলে ৫ থেকে ৬ ঘন্টার বেশি যেন না হয়। তবে উচ্চ মাত্রার শব্দের মধ্যে যদি আপনি চাকরি বা কোন পেশাদারী কাজ করেন তাহলে এবং উচ্চমাত্রার শব্দের মধ্যে অবস্থান করলে কানে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে পারেন।
এটি ব্যবহারে কানের মধ্যে এ ধরনের কোন শব্দ ঢুকবে না বা ঢোকার সম্ভাবনা থাকে না। অথবা এর বিকল্প হিসেবে তুলা তেলে ভিজিয়ে নিংড়ে নিয়ে আপনি দুই কানে ব্যবহার করতে পারেন।যদি আপনি হেডফোন ব্যবহার করেন তাহলে হেডফোনের শব্দ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকতে হবে আর ২৫ থেকে
৩০ মিনিট পর পর হেডফোন থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক সময় শোনা যায় বজ্রপাতের শব্দের কারণে কারো কারো কানের ক্ষতি হয়েছে। তাই বিদ্যুৎ চমকানোর সময় বা মেঘ ডাকার সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলে শব্দ কম শোনা যাবে।তখন কানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। মাইকের বা সাউন্ড বক্সের শব্দ থেকে দূরে থাকুন বা এগুলো আস্তে আস্তে বাজাতে হবে।
অসুখ বা অন্যান্য সমস্যার জন্য কানে কম শুনলে করণীয়:
কানে যদি প্রচুর পরিমাণে খৈল বা ময়লা থাকে তাহলে কানে কম শোনা যায়। তাই কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে বা কানে খৈল বা ময়লা থাকলে কম শুনলেই সবারই মাঝে মাঝে কান পরিষ্কার করতে হবে। তবে সাবধানে পরিষ্কার করতে হবে। যেন কানের ভিতর কোন আঘাত না লাগে এবং কানের ময়লা যেন খোঁচা লেগে আরো ভিতরের দিকে না যায়।
আরো পড়ুন : দাঁতের পোকা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানুন
কানের ভিতরে ফোঁড়া ,টিউমার, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, হাম, চিকেন পক্স, কানের স্নায়ুর সমস্যা ইত্যাদি সমস্যা থাকলে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। তখন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা করে এ সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে। তাহলে কানে ভালো মতো সোনা যাবে। এছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শ্রবণ শক্তি কমে যেতে থাকে।
তখন প্রয়োজন হলে কানে শোনার যন্ত্র বা মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকলেও কানের শ্রবণ শক্তি কমে যেতে পারে। তাই এ সমস্ত রোগ বা সমস্যা গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখলে কানে কম শোনা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
কানে ঔষধ ব্যবহার ও চিকিৎসা :
কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে বা কানে কম শুনলে কি করা উচিত তা চিকিৎসক আপনাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিবেন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু ওষুধ খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। কারণ কানের মূল সমস্যা না জেনে কিছু ড্রপ আছে সেটা যদি আপনি আপনার ইচ্ছামত ব্যবহার করেন।
তাহলে সাময়িকভাবে আপনি উপশম পাবেন কিন্তু পরবর্তীতে বারবার এটি ব্যবহার করলে কানের ভিতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণ শক্তি কমে যেতে পারে। কানে কম শুনে থাকলে শিশু বা বয়স্ক লোক নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। কানের কোষগুলি কার্যকর থাকলে যদি কানে কম শোনা যায়।
তাহলে আপনি কানে শোনার যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। এমন অনেক যন্ত্র আছে যাহা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তবে স্নায়ু কোষ গুলি যদি কার্যকর না থাকে তাহলে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হতে পারে। জন্ম থেকে বধির মানুষের ক্ষেত্রে অস্ত্রপ্রচারের পরেও আরো চিকিৎসা করতে হয় যা ক্রমে ক্রমে
কানের সমস্যাকে ফিরিয়ে এনে নতুন জীবনযাত্রাকে সুন্দর করে তুলবে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রতিরোধে চিকিৎসার পাশাপাশি টেলিভিশনে কার্টুন ছবি দেখা, গান শোনা, আরো অন্যান্য বিষয় থেকে যেমন গেম খেলা এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া কান পাকা রোগ,কানের পর্দায় ফুটা বা ছিদ্র, কানের
ভিতর পানি, পুজ, রক্ত ইত্যাদির সমস্যার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তা সমাধান করুন।তাহলে শিশুর কানে ভালো শোনা যাবে। ম্যাসের কাঠি, মুরগি বা কবুতরের পালক, কলমের শীষ, কটনবার ইত্যাদি কিছু দিয়ে অযথা বা কান চুলকালে কোন কিছু দিয়ে খোঁচা না মারাই ভালো।
গোসলের সময় কানের ভিতরে যেন পানি না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে কানের চিকিৎসা বা কান পরিষ্কার করা যাবে না।শিশুদের কানে শোনার পরীক্ষা শিশুর জন্মের এক মাস সময়ের মধ্যে ও তিন মাসের মধ্যে রোগ নির্ণয় ও ছয় মাসের মধ্যে চিকিৎসা করাতে হবে। ঘরোয়া উপায়ে
কানের শ্রবণ শক্তিকে ঠিক রাখতে ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি- ১২ যুক্ত খাবার খেলে উপকার হবে। দুধ, ডিম, সামুদ্রিক মাছ পনির ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন কান ভালো রাখার জন্য। পক্ষান্তরে, কানে কম শোনার মত সমস্যা থাকলে এ থেকে মুক্তি পেতে রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কান পরিষ্কার করার ড্রপ:
কানে ভালো না শুনলে কি করতে হবে ?এর জবাবে বলা যায় কান পরিষ্কার করার ড্রপ হচ্ছে একটি কার্যকরী উপাদান ।কানের মধ্যে কোন কাঠি দিয়ে কান পরিষ্কার করা যাবে না। কোনো কোনো চিকিৎসক বলেন কানের ময়লা পরিষ্কার করার দরকার নেই।অল্পস্বল্প ময়লা বা খৈল থাকলে কানের পর্দা কে সুরক্ষিত রাখে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় দেয়াশলাইয়ের কাঠি বা কটনবার দিয়ে কান খোঁচালে কানের ময়লা ভিতরের দিকে আরো চলে যেতে পারে।তাই কিছু কিছু ড্রপ আছে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন -ওটিক এসি প্লাস এয়ার ড্রপ(Oteck AC plus ear dorp) কানের সংক্রমনের জন্য ভালো কাজ করে।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে দুই থেকে তিনবার এক থেকে দুই ফোঁটা ব্যবহার করলে অনেক উপকার হয়।Cexidal কানের ড্রপ, ওটিফ্লক্স এয়ার ড্রপ(Otiflox ear drop)চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কানে কতটুকু ব্যবহার করা উচিত তা জেনে নিয়ে ব্যবহার করাই ভালো।
কানের ব্যথার দূর করার ঘরোয়া উপায়:
আপনার কানে যদি কোন কারণে ব্যথা হয় তাহলে অলিভ অয়েল তেল ৩ থেকে ৪ ফোটা আপনার কানে দিনে দুই তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারে আপনার কানের ব্যথা দূর করতে সক্ষম হবে। পেঁয়াজের রস হালকা কুসুম কুসুম গরম করে দুই থেকে তিন ফোঁটা কানের ভিতর দিলে অনেক ব্যথা কমে যাবে।
গরম পানির বোতল কানে ব্যথা হলে কানের পিঠে বা উপরে বোতলের সেঁক দিলে ব্যথা কমে যায়। পিপারমেন্ট অথবা পুদিনা পাতার রস ডপারে করে নিয়ে কানে দুই থেকে তিন ফোঁটা দিলে ব্যথা কমে যাবে। এছাড়া কানে অল্প স্বল্প ব্যথা হলে আপনি কানে ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন এবং যদি ব্যথা না কমে আরো বেড়ে যায়
আরো পড়ুন: রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় জেনে নেওয়া ভালো
তাহলে নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট গিয়ে ভালোমতো চিকিৎসা করলে আপনার কানের ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
শেষ কথা- কানে ভালো না শুনলে কি করা উচিত:
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আশা করছি আমার এই আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং পড়ার জন্য অন্যদেরকেও সহযোগিতা করবেন। এই আর্টিকেলের মধ্যে কান সম্পর্কে অনেক তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আপনি পোস্টটি পড়লে অনেক উপকৃত হতে পারবেন এবং অন্যরাও যাতে উপকৃত হতে পারে সেই জন্য শেয়ার এবং কমেন্ট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url