ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক আপনি কি ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। আজ আমি ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
চলুন তাহলে বন্ধুরা দেরি না করে শুরু করা যাক ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় :
মানুষের চুলই হচ্ছে মাথার প্রধান সৌন্দর্য।সুন্দর চুল মানে সুন্দর মাথা এবং চুল যদি সুন্দর হয় সে সাথে মানুষের পুরো শরীরটা দেখতে হ্যান্ডসাম লাগে। মাথার চুল পড়ে যাওয়া এবং পাতলা হওয়া এই সমস্যাটা অনেক মানুষের মধ্যে রয়েছে। এই চুল ঝরে যাওয়া বা পাতলা হওয়ার জন্য মূলত দুটি কাজ করলে মাথার চুল ঠিক হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: মেয়েদের বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয়- মেয়েদের বুকে ব্যথা কেন হয়
কারো চুল অল্প বয়সে পড়ে যায় ।আবার কারো চুল অনেক বৃদ্ধ বয়সেও পড়েনা।সুতরাং ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে জানতে আমার এই পোস্টের সঙ্গে থাকুন। মাথার চুল ঝরে যাওয়া ও নতুনভাবে মাথার চুল গজানো দুইটি প্রধানত কাজ করতে পারলে মাথার চুল নিয়ে আপনার আর কোন চিন্তা থাকবে না।
তাহলে আসুন বন্ধুরা নতুন চুল গজানোর উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক।সাধারণত আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে বা বয়স বৃদ্ধির কারণে অথবা বংশগত কারণে বা পরিবেশের তারতম্যের কারণে চুল যখন ঝরে ফাঁকা হয়ে যায়। তখন মন খুবই খারাপ হয়ে যায়। তখন মনে হয় শৈশবের মতো যদি মাথায় চুল থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো!
ম্যাসাজ করা-নিয়মিত মাথার চুল ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।এক টেবিল ভিটামিন ই নিয়ে চুলে নিয়মিত ম্যাসাজ করলে চুলের জন্য নিউট্রিশনের যোগান দেয়।যদি ভিটামিন ই এর সাথে চায়ের নির্যাস ভালোভাবে মিশিয়ে হাতের সাহায্যে বা আঙ্গুলের সাহায্যে পুরো মাথার চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগিয়ে নিন ।
তারপর তিন থেকে চার মিনিট চুলে ম্যাসাজ করার পর মোটা দাঁত বা মোটা পাশের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন।প্রতিদিন নিয়মিত তিনবার এইভাবে ব্যবহার করলে নতুনভাবে চুল গজাতে সাহায্য করবে।তবে দিনে একবার সাধারণত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। বারবার শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি হতে পারে।
ভাইব্রেটিং ম্যাসাজ- ভাইব্রেটিং ম্যাসাজ করলে নতুনভাবে চুল গজাতে সহায়তা করে। বাজারে ভাইব্রেটিং ম্যাসাজার কিনতে পাওয়া যায়। এই ভাইয়েরাটিং ম্যাসাজার দিয়ে আপনি স্ক্যাল্পে ঘুরিয়ে মাথায় ভাইব্রেটিং ম্যাসাজ করতে পারেন।চুলের গোড়ায় ফলিকল থাকায় এ ধরনের ম্যাসাজের মাধ্যমে ফলিকল কে উদ্দীপিত করতে পারলে নতুন চুল গজাবে।
তবে যেখানে চুল বেশি পড়ে গেছে সেই জায়গায় বেশি করে ম্যাসাজ করুন।এভাবে প্রতিদিন নিয়মিত তিনবার করে ৭ থেকে ৮ মিনিট স্ক্যাল্পে ভাইব্রেট করলে নতুন ভাবে চুল গজানোর ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
শ্যাম্পু ব্যবহার-নতুন করে চুল গজানোর জন্য আর একটি উপায় হচ্ছে শ্যামপুর সঠিক ব্যবহার।একটি ভালো শ্যাম্পু অল্প পরিমাণ মাথায় প্রতিদিন একবার করে লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাহলে আপনার স্ক্যাল্পের মৃত কোষগুলো ঝরে যেতে সাহায্য করবে। এই মৃত কোষগুলো স্ক্যাল্পের ফলিকল ব্লক করে নতুন চুল গজানো বন্ধ থাকে।
তাই এইভাবে শ্যাম্পু ব্যবহার করলে নতুন চুল গজানো বন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
নতুন চুল গজানোর যেসব খাবার ও উপাদান:
ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় গুলোর মধ্যে কিছু কিছু খাবার খেলে ও কিছু কিছু উপাদান ব্যবহার করলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। সেগুলো এখন নিম্নে আলোচনা করবো ।আশা করছি আপনি আমার এই পোষ্টের সঙ্গেই থাকবেন।
প্রোটিন জাতীয় খাবার: নতুনভাবে চুল গজানোর ক্ষেত্রে প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। মাছ ,মাংস, দুধ, ডিম, পনির, সয়াবিন ,মটরশুটি,কলা, বাদাম ইত্যাদিতে প্রোটিন থাকে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত খাবারের তালিকা নতুন ভাবে চুল গজানোর জন্য এই প্রোটিন যুক্ত খাবার গুলোর একটি রাখতে পারেন।
আয়রন আর জিঙ্ক- আয়রন আপনার মাথার কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করবে আর নতুন টিস্যু তৈরি এবং ক্ষয় রোধে সাহায্য করবে। আয়রন আর জিংক নতুন ভাবে ও তাড়াতাড়ি চুল গজানোর ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা রাখে। বাদাম, মাংস, কলিজা, দুধ,মটরশুঁটি ইত্যাদির মধ্যে জিংক আর আয়রন রয়েছে।
ভিটামিন সি- চুলের যত্নে ভিটামিন সি ব্যাপক ভূমিকা রাখে। পেয়ারা, কলা, আমড়া ,আনারস ,লেবু, কামরাঙ্গা, কাঁচা মরিচ ইত্যাদির মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। চুলকে তাড়াতাড়ি বড় করতে এবং নতুন ভাবে গজাতে এই সমস্ত খাবারগুলো ব্যাপক সহায়তা করে।
কালোজিরা- কালোজিরা নতুন ভাবে চুল গজানোর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায় ও অন্যান্যভাবেও খাওয়া যায়। এছাড়া কালোজিরার তেল মাথায় ব্যবহার করলে নতুনভাবে চুল গজাতে এবং অন্যান্য উপকার পাওয়া যাবে।
পেঁয়াজ- পেঁয়াজের রস আপনার চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে তারপর 10 থেকে 15 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন নিয়মিত ব্যবহারে নতুন চুল গজাতে পেঁয়াজ সাহায্য করে।
আলুর হেয়ার প্যাক-আপনার বয়স যদি কম হয়ে থাকে। তাহলে আলুর হেয়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করলে নতুন ভাবে চুল গজাবে। সপ্তাহে একদিন আলুর হেয়ার প্যাক তৈরি করে মাথায় লাগালে নতুন করে চুল গজাতে পারে।
আরো পড়ুন : সামনের দাঁত ফাঁকা থাকলে কি হয়
নিমপাতা-আমরা সবাই জানি নিম পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুন হয়েছে ।এই পাতা আমাদের শরীরে নানা ধরনের রোগ নিরাময়ে কাজে লাগে ।আপনার মাথায় যদি নতুনভাবে চুল গজাতে চান তাহলে এক মুঠো নিমের পাতা পানিতে ফুটিয়ে তারপর সেই পানি ঠান্ডা করে বোতলে সংরক্ষণ করুন।
তারপর চুলে শ্যাম্পু করার পর নিমের পাতার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। যদি মাথায় খুশকি থাকে তাহলে তা দূর হয়ে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করবে। সপ্তাহে একদিন এইভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
রসুন- আপনি যদি নতুন করে আপনার মাথার চুল গজাতে চান। তাহলে আপনি রসুন ব্যবহার করতে পারেন। পেঁয়াজের মতো করে রসুন ব্যবহার করলে নতুন ভাবে চুল বাড়াতে সাহায্য করবে।
মেহেদী- চুলের যত্নে মেহেদী পাতা দারুন ভাবে কাজ করে। মেহেদি পাতা বেটে শ্যাম্পুর মতো করে নিয়মিত মাথায় ব্যবহার করলে নতুনভাবে চুল গজাতে শুরু হবে।
চুল পরিষ্কার- মাথার চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। তুলে খুশকি ও ময়লা থাকলে চুলের অনেক ক্ষতি হয়। তাই নিয়মিত চুলের যত্ন করুন এবং মোটা দাঁতওয়ালা চিরুনি দিয়ে আঁচড়ান কিন্তু অতিরিক্ত আঁচড়ালে চুলের ক্ষতি হতে পারে।
মেথি ব্যবহার- চুলের যত্নে মেথি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার মাথায় যদি নতুন চুল গজাতে চান তাহলে পরিষ্কার পানিতে মেথি সাধারণত ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সকালে উঠে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন ।এবার এই মিশ্রণটি মাথার চুলে ব্যবহার করুন। তারপর শুকিয়ে গেলে তা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ভিটামিন বি, ই-ভিটামিন ই জাতীয় খাবার খেলে চুল গজানোর ক্ষেত্রে অনেক উপকার হয়। ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে জানতে এবং নতুন চুল গজাতে ভিটামিন বি এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খেতে হবে কারণ তা থেকে ক্যারোটিন পাওয়া যায়।
ভিটামিন ই এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ক্যাল্পের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আপনার পছন্দ হতে পারে এমন তেলের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করতে পারেন।
ফলিক এ্যাসিড- আপনার খাদ্য তালিকায় ফলিক অ্যাসিড রাখুন কারণ ফলিক এ্যাসিড স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলিক এ্যাসিড লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে ও সেগুলোর কার্যকারিতা বজায় রাখতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
নতুন ভাবে চুল গজানোর তেলের নাম:
ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তেল শুধু আমাদের মাথার নতুন ভাবে চুল গজাতেই সাহায্য করে না, মাথা ঠান্ডা রাখতে এবং ত্বক ভালো রাখতে তেল দারুন ভূমিকা পালন করে।আপনি যদি নতুন করে চুল গজানোর তেলের নাম জানতে চান। তাহলে আমার এই পোষ্টের সঙ্গেই থাকতে পারেন।
কাস্টর অয়েল- অনেকেই হয়তো এই তেলের নাম নাও শুনতে পারেন। নতুনভাবে চুল গজানোর জন্য এই তেল দারুনভাবে কাজ করে। আপনার মাথার চুল যদি কম থাকে এবং নতুন ভাবে চুল গজাতে চান।তাহলে কাস্টর অয়েল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এবং এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল গজানোর ক্ষেত্রে আরো বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
কাস্টর অয়েল তেল এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল সচল রাখতে সহায়তা করে।এই তেল রাতে ব্যবহার করে সকালে উঠে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন করে চুল গজানো শুরু হয়ে গেছে ।
আর যদি আপনার মাথায় টাক পড়তে শুরু করেছে তখন অবশ্যই এই তেল ব্যবহার করা শুরু করুন।তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
নারকেল তেল- নারকেল তেলে রয়েছে পটাশিয়াম। যা আপনার স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং নতুন চুল গজানোর হার বাড়িয়ে দেয়। তাই এক্সট্রা ভার্জন নারকেল তেল অথবা খাঁটি সরিষার তেল বা ভালো মানের অলিভ অয়েল তেল নতুন চুল গজানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন।অনেকেই বলেন নারকেল তেল মাথায় মেখে সারারাত রেখে পরদিন ধুয়ে ফেললে নতুন চুল গজানোর হার বাড়ে।
কাঠ বাদামের তেল- কাঠ বাদামের তেলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই ,ডি এর মত উপকারী উপাদান।নতুন চুল গজাতে দারুন ভাবে সাহায্য করে এই কাঠ বাদামের তেল। আপনার যদি অনেক বেশি পরিমাণ চুল পড়ে যেতে থাকে তাহলে কাঠ বাদামের তেল দেরি না করে আপনি ব্যবহার করলে চুল পড়া রোধে অনেক উপকার পাবেন।
ল্যাভেন্ডার অয়েল- চুল পড়া রোধে আরেকটি তেলের নাম হচ্ছে ল্যাভেন্ডার অয়েল। এই তেলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা চুল ঝরার সমস্যা কমায়।
অলিভ অয়েল-ভিটামিন ই এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ এই তেল নতুনভাবে চুল গজাতে সাহায্য করে। টাক পড়ার সমস্যা দেখা দিলে এই তেলের উপর ভরসা রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন: এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় সমূহ জেনে নিন
প্যারাসুট নারকেল তেল(Parachute Coconut oil)-অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং অত্যন্ত বেশি ব্যবহৃত এই প্যারাসুট নারকেল তেল চুল পড়া বন্ধ করে এবং আপনার চুল শক্ত করতে সাহায্য করবে। যদি আপনি চুল বৃদ্ধি করতে চান এবং নতুন ভাবে চুল গজাতে চান তাহলে এই তেলটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
এই তেলের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ই যা চুলকে মজবুত ও দ্রুত লম্বা করতে সাহায্য করে।
শেষ কথা-ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায়:
বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে আমি এ কথা বলে শেষ করব যে ছেলেদের নতুন চুল গজানোর উপায় গুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যুক্ত খাবার, বিভিন্ন ভিটামিনযুক্ত উপাদান,চুল গজানোর তেলের নাম এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টটি আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে ছেলেদের নতুন ভাবে চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারবেন।
তাই নিজে পড়ুন এবং অন্যদেরকেও পড়ার জন্য কমেন্টস ও শেয়ার করুন। যাতে অন্যান্য ব্যক্তিরাও উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে উপকৃত হতে পারেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url