আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি জেনে নেওয়া ভালো
প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানেন আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি ? যদি না জেনে থাকেন তাহলে পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। অনেক মানুষ জানে না যে, আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি ? তাই আজ আমি আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি:
আম হচ্ছে সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতীয় একটি ফল। আমকে আমরা ফলের রাজা বলে থাকি।আমে যেমন অনেক উপকার রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত আম খেলে যেসব ক্ষতি হবে তা আমাদের জানা দরকার। অতিরিক্ত আম খেলে আপনার ওজন বাড়তে পারে কারণ ১০০ গ্রাম আমে প্রায় ৬০ ক্যালোরি আছে এবং চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।অতিরিক্ত আম খেলে ডায়াবেটিস বেশি হয়।
আরো পড়ুন: রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি -কোথায় পাওয়া যায়
বর্তমানে আমে কৃত্রিম বা রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত করে আম পাকায় ।এ রাসায়নিক পদার্থ শরীরের অনেক ক্ষতি করে ।এইসব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার ফলে আমাদের ত্বকের ও সমস্যা দেখা দিতে পারে ।আবার অতিরিক্ত আম খেলে হজমের সমস্যা হয়। আমের আঠা শরীরে বা চোখে পড়লে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি হয়।
যাদের ত্বকে এলার্জি আছে তারা আম খেলে এলার্জি আরো বেশি হবে এবং চোখ জ্বালা পোড়া, হাঁচি কাশি পেটে ব্যথা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত আম খেলে এলার্জি বাড়ে:
অতিরিক্ত আম খেলে কি কি ক্ষতি হয় বা আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি সে সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। বেশি আম খেলে বাড়তে পারে এলার্জি কারণ আম এলার্জিতে অক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে যদি কেউ সিন্থেটিক উপাদানের প্রতি সংবেদনশীল হয়। কারণ আমের প্রোটিন ল্যাটেক্স এর মত উপাদান কারো জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
আম খেলে রক্তে শরকরা বৃদ্ধি হয়:
আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি এর মধ্যে অতিরিক্ত আম রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে ।এটি একটি খারাপ দিক। মিষ্টি ও সুস্বাদু এই ফলে উচ্চ প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে এটি দ্রুত চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার ব্যাধির ক্ষেত্রে সাধারণ চিনির মতোই কাজ করতে পারে। সুতরাং আম খাওয়ার সময় এর পরিমাণের দিকে অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
অতিরিক্ত আম খেলে ওজন বৃদ্ধি হয়:
আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি সে সম্পর্কে আরো জানুন।অতিরিক্ত আম খেলে আমাদের দেহের ওজন বেড়ে যাবে ।এটি একটি মারাত্মক ক্ষতি। একসাথে অনেকগুলো আম খেলে ওজন বাড়তে পারে। এর কারণ হলো অন্যান্য খাবারের তুলনায় আমে ফাইবার কম। প্রাকৃতিক সরকরার পরিমাণ বেশি এবং ক্যালরি বেশি যা ওজন বাড়াতে পারে ।
তাই আপনি যদি ওজন কমানোর চেষ্টা করে থাকেন তাহলে আম খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক হোন।কারণ বেশি আম খাওয়ার কারণে যদি ওজন বাড়ে তাহলে এই ওজন বাড়ার কারণে অন্যান্য অসুখ ও হতে পারে ।যেমন- শরীরের হাড়ের ক্ষয় ,শক্তি কম পাওয়া ইত্যাদি।
আমের মধ্যে ফাইবার কম:
আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি। সেগুলোর মধ্যে আমের ফাইবার কম থাকার কারণে অতিরিক্ত আম খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই হজম প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখতে আমের সাথে ফাইবার সমৃদ্ধ উপাদান যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সুতরাং আমাদের সকলের সঠিক পরিমান আম খাওয়া উচিত। নইলে অতিরিক্ত আম খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুন: চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি - চা খাওয়ার নিয়ম
বিভিন্ন জাতের আমের মধ্যে ফাইবার কম থাকে কারণ বীজ ও খোসার সর্বাধিক পরিমাণে ফাইবার থাকে যা আমরা খাই না।
অতিরিক্ত আমে পেটের সমস্যা:
অতিরিক্ত আমে যেসব ক্ষতি হবে তার মধ্যে পেটের সমস্যা একটি মারাত্মক সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত আম খেলে পেটে সমস্যার কারণ হতে পারে কারণ এতে গাজনযজ্ঞ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বাড়াতে পারে এবং পাচনতন্ত্র কে বিপর্যস্ত করতে পারে ।পেট ব্যথা, বদহজম, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি হতে পারে।
অনেকে আমরা আম চিবিয়ে না খেয়ে আমের জুস করে খাই কিন্তু এতে আমের মধ্যে অবস্থিত ফাইভারগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সেই ফাইবারের গুণ শরীরে কাজে লাগে না।উল্টো পেটে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও দিনের পর দিন অতিরিক্ত আম খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
তাই হজম ক্ষমতাকে ঠিক রাখতে চাইলে খুব বেশি আম খাওয়া থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
আম খাওয়ার পর যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়:
আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি তা উপরের অংশে আলোচনা হয়েছে। এখন আম খাওয়ার পর কি কি খাবার খেলে ক্ষতি হবে তা আমাদের জানা দরকার। আম খাওয়ার পর পরই পানি পান করা কখনোই উচিত নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আম খাওয়ার পরপরই পানি খেলে পেটে ব্যথা, বদ হজম, পেট ফাঁপা এবং এসিডিটির মত সমস্যা হতে পারে।
তাই আমাদের সকলের উচিত আম খাওয়ার কিছু সময় পর পানি পান করা । দই এবং আম একই সাথে কোনভাবেই খাওয়া উচিত নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আম হচ্ছে গরম আর দই হচ্ছে ঠান্ডা ।তাই এমন অবস্থায় উভয়ের মিশ্রনে স্বাস্থ্যের উপর উল্টো প্রভাব ফেলতে পারে ।আপনি যদি সুগারের রোগী হন তাহলে আম খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাবেন না।
এটি আপনার জন্য ভয়ানক ক্ষতি হতে পারে কারণ আম ও কোল ড্রিংকসে প্রচুর পরিমাণ চিনি পাওয়া যায় যা আপনার স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। আম খাওয়ার পর পরই করলা বা তেতো জাতীয় কোন কিছু খাবেন না ।বিশেষজ্ঞদের মতে, আম খাওয়ার পর করলা বা তেতো জাতীয় কিছু খেলে পেটে এসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে।
এমন অবস্থায় আপনার বমি অথবা বমি বমি ভাব এবং শ্বাসকষ্টের মতো জটিল সমস্যা হতে পারে। আপনার যদি ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে অতিরিক্ত তেল ও মসলা জাতীয় খাবারের সঙ্গে আম না খাওয়াই ভালো ।এটি পেটে তাপ বাড়ায় যা পরে আপনার মুখে ব্রণ দেখা দিতে পারে।
রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত আম:
আম খেলে বা আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি এর মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ বা ভেজাল মিশ্রিত আম খেলে শরীরে আরো অনেক বেশি ক্ষতি হয়। বেশি আম খেলে আবার আপনার নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।বেশি আম খেলে আমাশয়ের সমস্যা হতে পারে। বাজারে গেলেই বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায় তবে সেগুলি বেশিরভাগই গাছ পাকা বা সাধারণভাবে পাকানো নয়।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা আম পুষ্ট হওয়ার আগেই রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে বা কৃত্রিম জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করে সেগুলিতে পাকায়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয় আম পাকাতে ।এই রাসায়নিকগুলো ব্যবহারের ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।এর থেকে শরীরে ক্লান্তি, অবশ বোধ করা এবং ত্বকেরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুন: রাতে শসা খেলে কি হয় - শসা খাওয়ার নিয়ম
তারা আম বাড়তি বা রক্ত হওয়ার আগেই অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন কেমিক্যাল এর সাহায্যে আমের রং করে এবং তা বাজারজাত করে এসব আম খেতে স্বাদ তো লাগেই না বরং শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। তাই রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত আম আমাদের না খাওয়াই ভালো। খেলে শরীরের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উপসংহার-অতিরিক্ত আম খাওয়ার ক্ষতি:
প্রিয় পাঠক বন্ধু, অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের শরীরের পক্ষে খাওয়া ঠিক নয় ।আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বর্তমানে যেহেতু আমের সিজন প্রচন্ড গরম। তাই আমাদের সকলের সাবধানে বা নিয়ম অনুসারে আম খেতে হবে। অতিরিক্ত স্বাদ ও মিষ্টি, সুগন্ধে ভরা এই আম স্বাদের লালসায় যদি আমরা বেশি বেশি খেয়ে ফেলি তাহলে বাতের ব্যথা আরো বাড়তে পারে এবং শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিবে ।
তাই পুরো পোস্টটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়ুন ।পড়লে অনেক উপকৃত হবেন এবং আপনার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতি দের সঙ্গে শেয়ার করুন ।যাতে তারাও আম খাওয়ার যে ক্ষতিকর দিক রয়েছে তা জানতে পারে এবং উপকৃত হতে পারে ।যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url