কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি- কাঁচা আম খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং কাঁচা আম খাওয়ার নিয়ম। যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমার এই পোস্টটি পড়তে তে পারেন।এই পোস্টে বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে যে কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং কাঁচা আম খাওয়ার নিয়ম।

তাহলে আসুন পাঠক বন্ধুরা, কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং এর নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই।

কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি:

পুষ্টিবিদরা বলেন, কাঁচা বা পাকা দুই ধরনের আমই শরীরের জন্য ভালো।আম কাঁচা বা পাকা যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন শরীরের জন্য এর কোন ক্ষতি নেই বললেই চলে। কাঁচা আমের মধ্যে পটাশিয়াম থাকায় প্রচন্ড গরমে তা শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। পুষ্টিবিদরা বলেন ১০০ গ্রাম কাঁচা আমের ৪৪ ক্যালোরি পটাশিয়াম থাকে, ৫৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। 

আরো পড়ুন: রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি-কোথায় পাওয়া যায়

কাঁচা আম ওজন কমাতে সহায়তা করে, অম্লতা দূর করে, বমি ভাব দূর করে, ঝিমুনি দূর করে ইত্যাদি ধরনের শরীরের উপকার করে এই কাঁচা আম। কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা পয়েন্ট আকারে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কাঁচা আম রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে: 

কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং কাঁচা আম খাওয়ার নিয়ম জানতে আমার এই পোস্টের সঙ্গেই থাকুন। বৈশাখ- জৈষ্ঠ মাসে আমের সময় প্রচন্ড গরম ও রোদের তাপ থাকে। এই গরমে বা রোদের তাপের মধ্যে কাঁচা আম খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। কাঁচা আমের পটাশিয়াম থাকার কারণে তা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

এই কারণে শরীরে ঘাম কম হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়।পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁচা আমের ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও একাধিক এন্টি অক্সিডেন্ট থাকার কারণে শ্বেত রক্ত কণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কাঁচা আম খেলে ডায়াবেটিসের মত সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। 

তাই আপনার যদি সুগার থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে খেতে পারেন কাঁচা আম। কয়েক টুকরো কাঁচা আম চিবালে পিত্ত রস বৃদ্ধি পায়। এতে যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং অন্ত্রের জীবাণু সংক্রমণ দূর করে।

কাঁচা আম শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে: 

অনেকেই জানতে চান কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং এর খাওয়ার নিয়ম কি? এর উত্তরে আমরা বলতে পারি  কাঁচা আম ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কাঁচা আম। পাকা মিষ্টি আমের চেয়ে কাঁচা আমের ক্যালোরি কম থাকার কারণে এটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

যারা ওজন কমাতে চান বা ওজন যাতে বৃদ্ধি না হয় সেজন্য আপনি কাঁচা আম খেতে পারেন। এ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজমের সমস্যা ইত্যাদি কমাতে সহায়তা করে কাঁচা আম। এ্যাসিডিটি ও বমি হওয়া ভাব দূর করতে আমরা কাঁচা আম চিবিয়ে খেয়ে থাকি।

কাঁচা আম চোখও মুখের জন্য উপকারী:

কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি তার মধ্যে আমাদের চোখ ও মুখের সমস্যায় এই আম সাহায্য করে। এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ চোখ ও মুখ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কাঁচা আমে থাকে লুটেইন ও জিয়াজ্যান্থেন। চোখের টেটিনার জন্য এই দুটি এন্টিঅক্সিডেন্ট খুবই উপযোগী। 

কাঁচা আমের ভিটামিন এ থাকার কারণে চোখের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।যেহেতু কাঁচা আমে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে তাই এটি মুখের নানা রকম মুখের ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাতের মত সমস্যায় কাজে আসতে পারে কাঁচা আম। মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের ক্ষয় রোধেও সহায়তা করে এই  কাঁচা আম।

কাঁচা আম ত্বক ও চুল ভালো রাখে: 

কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি সেগুলো জানার জন্য আর্টিকেলটি আরও পড়ুন। কাঁচা আম খাওয়ার আরেকটি উপকারিতা হলো এটি আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে কাজ করে। প্রচন্ড গরমে শরীর ঘামের কারণে আমাদের শরীর থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও লোহ বের হয়ে যায়। 

আরো পড়ুন: কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি- কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম

আপনি যদি কাঁচা আমের জুস তৈরি করে খান তাহলে তার মাধ্যমে এই ঘাটতি দূর করা সম্ভব হতে পারে। কাঁচা আমে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে ফলে এটি খেলে ত্বক ও চুল উজ্জ্বল রাখতে কাজ করে।

কাঁচা আম হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করে: 

কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আরো বলতে চাই যে কাঁচা আম হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে কিভাবে এটি আমাদের জানা দরকার। কাঁচা আমে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদান রক্ত প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এই পুষ্টি গুলি আমাদের রক্তনালী গুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। এবং রক্তচাপ কমায়। এই ফলটিতে রয়েছে ম্যাঙ্গিফেরিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হার্ট এর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ভালো।

কাঁচা আম হজমের উন্নতি করে:

কাঁচা আমে যেসব উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে হজমের উন্নতি করে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।কারণ যে কোন খাবার খাওয়ার পর আমাদের যদি হজম ঠিকমতো না হয় তাহলে খুবই শরীর খারাপ লাগে। কোন কাজে মন বসে না হজম না হলে। এছাড়া পেট ভারী হয়ে থাকে। কোন কিছু ভাল লাগেনা। 

কাঁচা আমে থাকে পাচক এনজাইম যা এমাইলেস নামে পরিচিত। বড় খাদ্যের অনুগুলিকে ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে। যাতে সেগুলি সহজেই শোষণ করা যায়। প্রচুর জল এবং খাদ্য তালিকাগত ফাইবারের কারণে কাঁচা আম কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মত হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

কাঁচা আমের শরবত খাওয়ার নিয়ম: 

প্রচন্ড গরমে শরীর বেশ ঘামে। সঠিক সময়ে পানি পান না করলে আমাদের দেহে তৈরি হচ্ছে পানি শূন্যতা। এই গ্রীষ্মে পানি শূন্যতা দূর করতে কাঁচা আমের শরবত বেশ উপকারী। বেলেন্ডার মেশিনে কাঁচা আম গুঁড়ো করে অল্প একটু পানির সাথে মিশিয়ে শরবত তৈরি করে খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীর ঘামা সহ অন্যান্য রোগের উপকার হয়।

কাঁচা আম ভিটামিন সি তে ভরপুর। এই ভিটামিন সি সর্দি লাগা,হাঁচি -কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া ,জ্বর ইত্যাদি ঠান্ডা গরম জনিত শরীর খারাপ লাগার বিরুদ্ধে কাজ করে।যাদের লিভারে চর্বি রয়েছে তাদের টক ফল বিশেষ করে কাঁচা আম ভীষণ উপকারী।

কাঁচা আম রান্না করে খাওয়ার নিয়ম: 

কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা আমরা জানলেও কাঁচা আম রান্না করে খাওয়ার নিয়ম বা কি ধরনের উপকার রয়েছে সেটাও আমাদের জানা উচিত। সকালে কিংবা দুপুরের খাবারের ভাতের সঙ্গে আমের টক ডাল হতে পারে এই সময়ের অন্যতম মেনু। মসুরের ডালের সঙ্গে আমের টক ডাল রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় না বরং পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। 

এই টক ডাল হজমের জন্য যেমনি সহায়ক তেমনি এটি সহজ প্রাচ্য। টক- ঝাল এই ডাল গরমে ক্লান্তি এবং মুখের অরুচি কাটাতে দারুন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া কাঁচা আম কুচি কুচি করে কেটে এর সাথে কিছু মসলা মিশিয়ে রান্না করলে খুবই খেতে মজা লাগে। সকালে কিংবা বিকালে এই রান্না করা আম রুটির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বেশ মজা লাগে। 

এবং শরীরের জন্য অনেক উপকার হয়। তাছাড়া এই রান্না করা কাঁচা আম রুটি বা ভাতের সঙ্গে ছাড়াও শুধু এমনিতেই দই এর মত করে খাওয়া যায়।

কাঁচা বা টক আমের আচার: 

আমাদের দেশে বা বিদেশে অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যারা কাঁচা আমের আচার তৈরি করে বাজারজাত করছে।এই আচার খেতে যেমন স্বাদের তেমনি উপকারও রয়েছে। এই সমস্ত কোম্পানিগুলোতে অনেক মানুষ কাজ করে জীবিকা অর্জন করছে। আমরা বাড়িতেও ম্যানুয়ালি কাঁচা আমের আচার তৈরি করে থাকি। 

আরো পড়ুন: রাতে শসা খেলে কি হয় -শসা খাওয়ার নিয়ম

এই আচারের মধ্যে নানা ধরনের উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী ।আম দিয়ে তৈরি আচার যেমন খাবারের গুণগত পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায় তেমনি খাবারের স্বাদও অনেক গুণ বেড়ে যায়। এছাড়া আমের আচারে আরও নানা ধরনের উপকার রয়েছে।

 যেমন-বমি ভাব কমায়, ওজন কমায়,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, দাঁতের মাড়ির রক্ত পড়া রোধ করে, শরীর ঠান্ডা রাখে, অম্লতা দূর করে, শরীরের ক্লান্তি দূর করে ইত্যাদি উপকার করে থাকে।

উপসংহার- কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি: 

পোষ্টের শেষ প্রান্তে এ কথা বলা যায় যে কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং কাঁচা আম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করছি পুরো পোস্টটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়বেন ।পড়লে ইনশাল্লাহ অনেক উপকৃত হবেন এবং অন্যদেরকেও পড়ার জন্য উৎসাহিত করবেন যেন তারাও জানতে পারে যে কাঁচা আম খেলে কি ধরনের উপকার হয় ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url