লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আপনি কি লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমি এই পোস্টে লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিব।

চলুন তাহলে শুরু করা যাক লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

লিচু খাওয়ার উপকারিতা কি কি :

লিচু হচ্ছে আমাদের দেশে উৎপাদিত একটি মিষ্টি ও সুস্বাদু ফল।এই ফল যখন গাছে পাকে তখন দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন এই ছোট ফলটি খুব কম সময়ের জন্য বাজারে আসে বা গাছে থাকে। লিচু শুধু স্বাদেই ভরা নয়, এর ভিতরে অনেক পুষ্টিগুণও রয়েছে। যেমন-লিচু কিডনি ভালো রাখার জন্য উপকারী,

আরো পড়ুন: কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি -কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম

লিচু হাড় ভালো রাখে, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ইত্যাদি ভিটামিন থাকে লিচুতে। লিচু শরীরের ব্যথা রোধ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ওজন কমাতে সাহায্য করে, হার্ট ভালো রাখে ইত্যাদি।১০০ গ্রাম লিচুতে আছে fat 0.4 গ্রাম,carbs-16.5grams, protein-0.8grams,sugar-15.2grams,calories-66 । 

উচ্চ রক্তচাপ, লিভার ভালো রাখে, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার জনিত সমস্যার জন্য উপকারী।

লিচু খেলে হাড় ভালো থাকে: 

লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমার এই আর্টিকেলের সঙ্গেই থাকুন। লিচুতে রয়েছে নানা ধরনের পুস্টি উপাদান যেমন- ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ এবং কপার। এই উপাদান গুলি হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে, লিচু খেলে হাড়ের ভঙ্গুরতা কমে। 

সেই সাথে হ্রাস পায় অস্টিওপোরোসিস ও ফ্যাকচারের সম্ভাবনাও। সুতরাং হাড় ভালো রাখতে আমাদের লিচু খাওয়া উচিত। একজন মানুষের হাড় যদি ঠিক না থাকে তাহলে অনেক মুশকিলের ব্যাপার হয়।অনেকেই আমরা হাড়ের সমস্যায় ভুগে থাকি। তাই হাড়ের যত্ন নেয়া বা হাড় ঠিকঠাক মত রাখতে আপনি নিয়ম অনুসারে প্রতিদিন লিচু খেতে পারেন।

কিডনি ভালো রাখতে লিচুর উপকারিতা কতটুকু: 

লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি। সেগুলোর মধ্যে লিচু মানুষের কিডনি ভালো রাখে এটি হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ লিচু হচ্ছে মানুষের শরীরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । যদি দুটি কিডনিই আমাদের যত্নের অভাবে নষ্ট হয় তাহলে মানুষ তাড়াতাড়ি মৃত্যুবরণ করতে পারে। 

তাই কিডনি ভালো রাখতে খাবারের দিকে খেয়াল রাখা আমাদের খুবই জরুরী । লিচুতে প্রচুর পরিমাণ পানি এবং পটাশিয়াম রয়েছে। তাই লিচু খেলে পেটের মধ্যে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা বের করে দিতে সহায়তা করে। এছাড়া এই ফল ইউরিক এ্যাসিডের ঘনত্ব কমিয়ে দেওয়ার কারণে কিডনির ক্ষতি অনেকটাই কম হয়।

তাই আপনি কিডনিকে সুস্থ রাখতে প্রচুর পরিমাণ পানি ও নিয়ম অনুসারে লিচু খেতে পারেন।

লিচু শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে: 

লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি তা অনেকেই জানতে চান। লিচু খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরের ওজন কমে যাওয়া একটি বিশেষ ধরনের উপকার। তুলনামূলকভাবে মানুষের শরীরের যদি ওজন বেড়ে যায় তাহলে হাড়ের ক্ষয় হতে পারে বা হাড়ের যেকোনো ধরনের অসুবিধা হতে পারে। 

লিচুতে কম ক্যালোরি থাকার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে, লিচু খেলে মানুষের ওজন বাড়ে না বরং ওজন কমে এবং আপনি যদি রোগা হতে চান তাহলে খাবারের ফলের তালিকায় রাখতে পারেন লিচু। লিচুতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে আর অন্যদিকে ফ্যাট 

ও ক্যালোরির মাত্রা কম থাকার কারণে ওজন বাড়ে না বরং ওজন কমে ।তাই আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে এই গরমে দৈনিক খাবারের ফলের তালিকায় রাখতে পারেন এই লিচু।

লিচু খেলে হার্ট ভালো থাকে: 

লিচু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে উপরের অংশে মোটামুটি ভাবে আলোচিত হয়েছে। আশা করছি এতক্ষণে আপনি হয়তো কিছুটা হলেও লিচু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আঁচ পেয়েছেন বা উপকৃত হবেন। লিচু খেলে হার্ট ভালো থাকে এটিও অনেকেই হয়তো জানে না। লিচুতে আছে অলিগোনল যা নাইট্রিক অক্সাইড বানাতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুন: আম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি জেনে নেওয়া ভালো

আমাদের শরীরের রক্ত স্বাভাবিকভাবে সঞ্চালন করতে সহায়তা করে এই নাইট্রিক অক্সাইড। লিচুতে আছে ফ্ল্যাভোনয়েড যা ভাস্কুলার কার্যপ্রণালী ফাংশন ঠিক রাখে। সেই জন্য হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়। গবেষকদের মতে, নিয়ম অনুসারে লিচু খেলে অধিকাংশে হার্টের অসুখের ঝুঁকি  কমে যায়। 

সুতরাং লিচু আপনার শরীরের হার্টের উপকার যেহেতু করে থাকে তাই আপনি লিচু খেতে ভুলবেন না।

লিচু শরীরের ব্যথা দূর করে: 

লিচু হচ্ছে স্বাদ ও মিষ্টিতে ভরপুর। এটি দেখতে যেমনি সুন্দর তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। লিচুর মধ্যে যে উপকার গুলো রয়েছে তার মধ্যে আমাদের শরীরে ব্যথা দূর করা একটি অন্যতম উপকার। কারণ আমাদের শরীরে যখন কোন ব্যথা লাগে তখন খুবই অস্বস্তিকর লাগে। 

পুষ্টিবিদদের মতে শরীরের বিভিন্ন রকমের ব্যথা দূর করে এই সৌন্দর্যমন্ডিত লিচু। এই ফল মানুষের ব্যথা-নাশক হিসাবে কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। লিচু খেতে অনেক সুস্বাদু হলেও এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ শরীরের ব্যথা দূর করলেও এই ফল ইচ্ছামতো খাওয়ার কোন সুযোগ নাই। 

বয়স, শরীরের অবস্থা, শরীরের অসুখ ইত্যাদি বিবেচনায় দিনে 10 থেকে 12 টি লিচু খাওয়া যেতে পারে।

ক্যান্সারের জন্য লিচুর উপকারিতা:

লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি সে সম্পর্কে আরো জানতে আমার আর্টিকেলের সঙ্গেই থাকুন। এই ফল মানব দেহের সবচেয়ে বড় রোগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আমরা ভালো করেই জানি যে ক্যান্সার হলে বেশিরভাগই মানুষ বাঁচতে পারে না। 

এই সুমিষ্ট লিচু ফলে রয়েছে ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। এই ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন আপনি নিয়ম অনুসারে 10 থেকে 12 টি লিচু খেলে আপনার ক্যান্সার নিরাময়ে কিছুটা হলেও কাজে লাগাতে পারে। 

লিচু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: 

লিচু এমন একটি সুস্বাদু ফল যা আমাদের শরীরের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হলে সব রকমের ভাইরাস আক্রান্ত  হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানগুলো রক্তের শ্বেত কণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

তাই গরমের এই অল্প সময়ের জন্য পাওয়া এই লিচু খেলে সর্দি ও ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচা যায়। এছাড়া লিচু আমাদের হজমে সাহায্য করে। তবে বেশি খেলে আবার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও এই ফল সহায়তা করে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ্যাজমা বা হাঁপানি প্রতিরোধেও সহায়তা করে গ্রীষ্মকাল এই ফলটি।

লিচু ত্বকের জন্য কাজ করে:

লিচু মানব দেহের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এর মধ্যে মানুষের শরীরের ত্বক বা চামড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। লিচু ফল এই ত্বকের বলিরেখা দূর করে মানুষের বয়সের ছাপ পড়া থেকে কমিয়ে দিতে পারে। ত্বক উজ্জ্বল রাখতে লিচু বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া লিচুতে আছে ভিটামিন বি৬। 

গ্রীষ্মের এই গরমে নিয়মিত লিচু খেলে শরীরের লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করে এবং তার সাথে প্রদাহ জনিত রোগ থেকে রক্ষা করে।

লিচু খাওয়ার অপকারিতা বা ক্ষতিকর প্রভাব:

লিচু খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা উপরের অংশে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।এখন লিচু খেলে  যেসব ক্ষতি হবে অথবা লিচু খাওয়ার অপকারিতা কি কি সে সম্পর্কে আপনাদেরকে ধারণা দেবো। আসলে কোন কিছুই অতিরিক্ত বা বেশি বেশি খাওয়া আমাদের শরীরের পক্ষে কোন উপকার হয় না।

বরং অতিরিক্ত খেলে শরীরের আরও ক্ষতি হয়।আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে লিচু খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আপনি যদি ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে লিচু খাওয়া উচিত।কারণ ওষুধ এমনিতেই রক্তে গ্লুকোজ কমায় তার সঙ্গে লিচু যদি একই কাজ করে তাহলে বিপদ হতে পারে।


 ছোট বাচ্চারা খালি পেটে লিচু খাওয়া উচিত নয়।অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট, বুক ধড় পড়,মাথা ঘোরানো, বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে।লিচু গরম ফল হওয়াতে বেশি খেলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ঠিক থাকে না। ফলে গলা ব্যথা ,মুখে ক্ষত হওয়া, নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। 

অপারেশন রোগী অথবা সার্জারির রোগীদের অতিরিক্ত লিচু খাওয়া ঠিক নয়। তাই আমাদের সবার উচিত অতিরিক্ত লিচু না খেয়ে দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২টি লিচু খাওয়া আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো। এছাড়া যত্রতত্রভাবে লিচু খাওয়া যাবে না। কারণ লিচুর বোটা যখন শুকিয়ে যায় তখন বোটার মধ্যে পোকা থাকে। 

আরো পড়ুন: চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি- চা খাওয়ার নিয়ম

যা খেলে শরীরে ঘৃণাত্মক ভাব আসে অথবা মুখে অরুচি আসতে পারে। সেই কারণে ভালো করে দেখে বোটা ছিলে খেতে হবে এবং দেখতে হবে যে লিচুর বোটাতে কোন পোকা আছে কিনা। 

শেষ কথা-লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন 

প্রিয় পাঠক, লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনি আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পুরোপুরি পড়ছেন অথবা পড়বেন এবং অন্যদেরকেও পড়ার জন্য উৎসাহিত করবেন। কারণ লিচুর মধ্যে যে উপকার রয়েছে বা কিভাবে লিচু খেলে শরীরের উপকার হবে, কখন লিচু খাওয়া যাবে না ,লিচু কখন বেশি খেলে শরীরের আরো ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে আপনি অথবা আপনার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতরা জানতে পারবেন। 

যেহেতু লিচু অল্প সময়ের জন্য বাজারে আসে অথবা গাছে অল্প সময়ের জন্য থাকে সেজন্য আমাদের সবারই অল্প পরিমানে হলেও লিচু খাওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে অতিরিক্ত লিচু না খেয়ে দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২টি লিচু খেলে শরীরের কোন ক্ষতি হবে না বরং উপকার হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url