চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আপনি জানেন কি চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত বা কি করলে চোখে ভালো দেখা যাবে। তা জানার জন্য এই আর্টিকেলটি পড়ুন।আপনি যদি না জেনে থাকেন যে চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত।
তাহলে আমার এই আর্টিকেলের সঙ্গেই থাকুন।চলুন তাহলে পাঠক বন্ধু দেরি না করে শুরু করা যাক চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত তা জেনে নিই।
চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত তার বর্ণনা:
চোখ এমন একটি সেন্সেটিভ অঙ্গ যা একটু অসুবিধা হলেই আমাদের অনেক যন্ত্রনা পোহাতে হয়। হঠাৎ করে চোখে পোকা পড়ে, ময়লা আবর্জনা বাতাসে উড়ে এসে পড়ে, তখন আমাদের চোখে ব্যথা বা অস্বস্তি হয় এবং এই কারণে চোখে ঝাপসা দেখা যায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে শুরু করে।
আরো পড়ুন : শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় কি
এমনকি অল্প বয়সের বাচ্চারাও চোখে কম দেখে বা ঝাপসা দেখছে। চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত এবং চোখে কম দেখলে কি করা যেতে পারে অথবা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে আপনি যা যা করবেন তা আলোচনা করা হলো -
- চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে চিকিৎসার পাশাপাশি যষ্টিমধু, ত্রিফলার পানি খাওয়া যেতে পারে।
- চোখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ঝাপটা দিয়ে দুই চোখ খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। দিনে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত বার চোখ ধুতে পারলে খুবই উপকার হবে। যতই আমাদের কাজ থাকুক বা যতই ব্যস্ত থাকি না কেন। ব্যস্ততার মাঝে মাঝেই এটা আমাদের করা উচিত।
- চোখে মেডিকেটেড কাজল ব্যবহার করলে চোখ ভালো থাকে। দৃষ্টিশক্তি আরও শক্তিশালী হয়।
- প্রতিদিন ২০ এম এল করে আমলকির জুস নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
- গোল মরিচ গুড়া করে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ে।
- গরুর দুধের সঙ্গে এক চা চামচ যষ্টিমধুর গুঁড়ো মিশিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার খেলে দৃষ্টিশক্তি অনেকটাই ফিরে পাবেন। ঘি এর সঙ্গেও এইভাবে খেতে পারেন।
- আমের মধ্যে ভিটামিন এ থাকে।তাই প্রচুর পরিমাণে আম খেলে চোখের জন্য খুবই ভালো উপকার পাওয়া যাবে এবং চোখ ভালো থাকবে। তবে ডায়াবেটিস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আম খেতে হবে।
- চোখ ভালো রাখার আরেকটি উপায় হচ্ছে গোলাপের পাপড়ির জুস খাওয়া। গোলাপের তাজা পাপড়ির নির্যাস বের করে জুস করে খেলে চোখের অনেক উপকার হবে।
- অথবা বাজারে গোলাপ জল কিনতে পাওয়া যায়। সেই গোলাপ জলও চোখে ব্যবহার করতে পারেন। করলে চোখের জন্য ভালো হবে।
- ভালো দৃষ্টি শক্তির জন্য সরিষার তেল বা ঘি দিয়ে পায়ের পাতা প্রতিদিন মালিশ করতে হবে। এতে চোখের দৃষ্টিশক্তির জন্য খুবই ভালো কাজ করে।
- চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবারের জুড়ে নেই। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খেলে চোখ ভালো থাকে। লাল ,হলুদ, কমলা রঙের শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে।
- তাছাড়া পালং শাকের মধ্যেও ভিটামিন এ থাকে। তাই এই ধরনের শাকসবজি বা ফলমূল প্রচুর পরিমাণে প্রতিদিন খেলে চোখের বেশ উপকার হবে।
- চিকিৎসকরা বলেন, সূর্যের u v রশ্নি চোখে পড়লে ছানি পড়ার মতো অন্যান্য ক্ষতি হয়। তাই বাহিরে বেরোলে রোদ প্রতিরোধের চশমা ব্যবহার করা উচিত।
- চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত বা চোখে কম দেখলে তার জন্য নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করতে হবে। আপনার চোখের যদি কোন সমস্যা না থাকে তারপরেও চিকিৎসকের নিকট গিয়ে চোখ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
- ভিটামিন এ জাতীয় আরো খাবার রয়েছে। যেমন- পেঁপে ,কাঁঠাল, কুমড়া, কচু শাক, লাউ শাক, পাট শাক, গাজর, মিষ্টি আলু, ছোট মাছ, ডিম, ধনিয়া পাতা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে এবং চোখ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
- সূর্যের তীর্যক রোশনী ,মোবাইল ,কম্পিউটার, টিভি, ল্যাপটপ এর ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মি থেকে চোখ কে দূরে রাখতে পারলে ভালো হয়।
- চোখের জ্যোতির জন্য সুগার, প্রক্রিয়াজাত ময়দা ও ধূমপান বা যেকোনো মদ্যপান, অ্যালকোহল বা যেকোনো নেশা থেকে বিরত থাকুন।
- এছাড়া এ্যারোবিক ব্যায়াম চোখের জ্যোতির জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
চোখ ভালো রাখতে চিকিৎসা:
চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত বা চোখে কম দেখলে কি করতে হবে।এর মধ্যে চোখের চিকিৎসা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। অনেক ছোট ছোট বাচ্চারাও চোখে ঝাপসা দেখে বা কম দেখে এবং বড়রা 35 বছর হলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের পাওয়ার কমতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে চক্ষু ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বর হলে মানুষ কি মারা যায়
চক্ষু চিকিৎসক প্রয়োজনে চক্ষু পরীক্ষা করে ঔষধ দিলে সেই মোতাবেক ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। চোখের চিকিৎসক যদি কোন চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে বলেন তাহলে সেটি ব্যবহার করতে হবে।এছাড়া যদি পাওয়ার ওয়ালা চশমার প্রয়োজন হয় ।ডাক্তার তা কত পাওয়ার চশমা দরকার তা উল্লেখ করে দিবেন ।
এবং সেই পাওয়ার ওয়ালা চশমা ব্যবহার করবেন। চোখের সমস্যার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা করবেন। কিছু ক্ষেত্রে ড্রপ, মলম এ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ দিতে পারেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে চোখের কর্নিয়ার সংক্রমনের জন্য অনুজীবের ধরন নিশ্চিত করার জন্য কর্নিয়ার স্কার্পিং বিশেষ গুরুত্ব হতে পারে।
এই কর্নিয়ার সংক্রমণ সময়মতো চিকিৎসা করতে হবে। নইলে চোখের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। চোখের পানি পড়া,ছানি পড়া চোখের ব্যথা, লাল হওয়া ইত্যাদি কারণে চিকিৎসক অপারেশন করতে পারেন। যদি পরীক্ষা করে অস্ত্রপ্রচার বা অপারেশন দরকার পড়ে তখন তা চিকিৎসক সেটা করবেন। সার্জারি করে চোখের ছানি অপসারণ বা কর্ণিয়াকে মেরামত করা যায়।
চোখে ঝাপসা বা কম দেখার কারণ:
চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত তা উপরের অংশে আলোচনা করেছি। এখন চোখে কম দেখা বা ঝাপসা দেখার কারণ কি তা আমাদের জানা দরকার।তাই চোখে ঝাপসা দেখার কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- চোখের বিভিন্ন ধরনের রোগ রয়েছে যেমন- পানি পড়া, গ্লুকোমা ঘর্ষণে চোখের রক্তক্ষরণ, চোখে ব্যথা ,চোখ লাল হওয়া, চোখ চুলকানো,চোখে ঝাপসা বা কম দেখার কারণ হতে পারে।
- চিকিৎসকরা বলেন চোখে ঝাপসা দেখার পিছনে অনেক কারণ থাকে। যেমন- চোখের রেটিনাতে কোন সমস্যা থাকলে চোখে ঝাপসা দেখা যায়।
- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নিম্ন রক্তচাপ থাকার কারণে চোখে ঝাপসা দেখা যায় বা কম দেখা যায়।
- একটু বেশি বয়সে বা কম বয়সেও ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগ থাকলে চোখের ছানি পড়তে পারে। এতে করে চোখে ঝাপসা দেখা দিতে পারে।
- বাহিরে চলাফেরার সময় চোখে ধুলা, বালি কনা, ময়লা, আবর্জনা চোখে পড়লে চোখের ক্ষতি হয়। তখন ঝাপসা দেখা যায়।
- বর্তমানে চোখে কম দেখার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, টিভি এর তীর্যক আলোক রোশ্নি চোখের অনেক ক্ষতি করে এবং এই কারণে চোখে ঝাপসা দেখা যায়।
- এছাড়া সূর্যের আলোক রোশ্নি চোখে হিট লাগে। তখন চোখের ক্ষতি হলে ঝাপসা দেখা যায়।
- অনেক সময় কোন দুর্ঘটনা বা কোনো আঘাত জনিত কারণেও চোখের ক্ষতি হলে ঝাপসা দেখা যেতে পারে।
- মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, বয়স জনিত কারণে চোখে রেটিনার সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং এর কারণে চোখে ঝাপসা দেখা যায়।
- গর্ভাবস্থায় শরীরের পরিবর্তনের সাথে সাথে চোখেরও পরিবর্তন হয়।গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের চোখে অস্পষ্ট বা ঝাপসা দেখার সমস্যা হয়।এ সমস্যাটি বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত থাকতে পারে।
রাতকানা রোগ প্রতিরোধে করণীয়:
চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত বা চোখে কম দেখলে কি ধরনের চিকিৎসা বা কি করা উচিত, করণীয় কি সে সম্পর্কে আমরা জানলাম। এখন রাতকানা রোগের প্রতিরোধ কিভাবে করা যায় বা এর প্রতিরোধের উপায় সমূহ সম্পর্কে জানা উচিত। রাতকানা প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য
যেমন সবুজ শাকসবজি, কলিজা, রঙিন ফল, যেমন- আম, কলা ,কমলা ও শাকসবজি, মিষ্টি কুমড়া ,গাজর, মলা মাছ, ছোট মাছ, মাছের যকৃতের তেল ইত্যাদি খেলে রাতকানা রোগের উন্নতি হতে পারে। চিকিৎসকের মতে রাতকানা রোগের 8 থেকে 9 টি পর্যায় রয়েছে। এর শেষ পর্যায়ে হচ্ছে চোখের কর্নিয়া একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।
এবং রোগী পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারায় আর এই রোগের প্রথম পর্যায় হচ্ছে রাতকানা রোগ। ভিটামিন এ এর অভাবে বর্তমানে শিশুরা বেশি রাতকানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মায়ের সাল দুধে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে। তাই জন্মের পর থেকে শিশুকে তার মায়ের বুকের শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
শিশুকে নয় মাস বয়সে হামের টিকার সঙ্গে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। ছোটবেলা থেকেই শিশুকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। উল্লেখিত উপায় গুলো মেইনটেন করার পরেও যদি রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। তাহলে চিকিৎসকের নিকট গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রয়োজনে ডাক্তার সাহেব তার চোখের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার চিকিৎসা করবেন। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকা লাগতে পারে।
শেষ কথা- চোখে ঝাপসা দেখলে কি করা উচিত:
চোখে ঝাপসা দেখলে বা কম দেখলে কি করতে হবে, কি কি খেতে হবে, কিভাবে চলতে হবে, কখন চিকিৎসা করতে হবে তা মোটামুটি আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।পড়লে ইনশাআল্লাহ চোখের সমস্যা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
আরো পড়ুন: পিরিয়ড হওয়ার জন্য ঔষধ
তাই আমার এই আর্টিকেলটি নিজে পড়ুন এবং অন্যদেরকেও পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন। মনে রাখবেন নিজে জানার মধ্যে সার্থকতা অনেক কম থাকলেও, অন্যদেরকে জানানোর মধ্যে অনেক সার্থকতা বেশি থাকে। তাই নিজে জানুন ও অপরকে জানান তাহলে আপনি অনেক তৃপ্তি পাবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url