রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়- জেনে নেওয়া ভালো

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় তা জানার জন্য এই আর্টিকেলটি পড়ুন। আজ আমি রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় তা বিস্তারিত আলোচনা করবো।

চলুন তাহলে সময় নষ্ট না করে রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় জেনে নেওয়া যাক।

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়:

রাসেল ভাইপার হচ্ছে একটি বিষধর সাপ । রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় তা জেনে রাখুন। এই সাপের কামড়ের কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্ষত স্থানে ফুলে যায়। এই সাপের বিষে আমাদের শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যেমন- নষ্ট হতে পারে ফুসফুস,কিডনি সহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

আরো পড়ুন: ডায়াবেটিসের আধুনিক চিকিৎসা কি কি সে সম্পর্কে জানুন 

বেশির ভাগ সাপ ডিম পারলেও গর্ভবতী হওয়ার পরে স্ত্রী ভাইপার সাপ সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ টি বাচ্চা দেয় ।বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার খবর আতঙ্ক হারে বাড়ছে। এইসব নিয়ে একেক জন একেক মন্তব্য করছেন।সোশ্যাল মিডিয়া বলছেন রাসেল ভাইপারে কামড় দিলে রোগী তাড়াতাড়ি মারা যাচ্ছে। 

কিন্তু অপরদিকে গবেষকরা বলছেন, রাসেল ভাইপার কামড় দিলেও রোগী মারা যায় না। তারা বলছেন এই সাপে কামড়ানোর কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টার আগে সহজে রোগী মারা যায় না ।গবেষকরা বলেন, গোখরা সাপে কামড়ালে ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপে কামড়ালে 18 ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিনদিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে,যদি কোন চিকিৎসা না নেওয়া হয়। 

এই চন্দ্রবোড়াই হচ্ছে রাসেল ভাইপার সাপ। গবেষকরা আরো বলেন,রাসেল ভাইপার দেশের সবচেয়ে বিষধর বা প্রাণঘাতী সাপ নয়। তাদের মতে এটি কোবরা সাপ কিংবা কেউটে সাপের চেয়ে বেশি বিষ ধর সাপ নয়।কিন্তু এই রাসেল ভাইবার এর বিষে বিভিন্ন ধরনের উপাদান বেশি। তাই চিকিৎসায় দেরী হলে শরীরে বহু ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। 

তখন আর অ্যান্টিভেনম দিয়ে আর কাজ হয় না। পর্যায়ক্রমে দেহের অনেক রক্তক্ষরণ সহ, ফুসফুস, কিডনি আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তখন শরীরে রক্ত দিলেও কাজ হয় না। আবার কেউ কেউ বলেন রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে ১০০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিলে ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। 

রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে সাপ টি ততক্ষণাত চলে যায় না। বলে সহজেই চিনতে পারা যায়। সেই কারণে চিকিৎসক দ্রুত অ্যান্টিভেনম রোগের শরীরে প্রয়োগ করতে পারেন। তাই আর ঝুঁকি থাকে না। রাসেল ভাইপার সাপ তেড়ে এসে মানুষকে কামড়ায় না। যারা বলছেন এটি তেড়ে এসে মানুষকে কামড়াচ্ছে। 

এই কথাটি সঠিক নয়। তাই শুধু রাসেল ভাইপার নয়, যেকোনো সাপে ছোবল মারার সাথে সাথে ক্ষতস্থানে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিলে সাপের বিষ পুরো শরীরে ছড়াতে পারে না। তখন দ্রুত গতিতে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে নইলে রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

রাসেল ভাইপার সাপের নাম হল যেভাবে: 

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এটা জানতে এই সাপের নাম রাসেল ভাইপার কেন হল তা আমাদের জানলে কোন ক্ষতি নেই। বর্তমানে এই সাপটি নিয়ে অনেক আতঙ্ক বিরাজ করছে। সারাদেশে বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে আরো বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে আমাদের সরকারের  নলেজেও রয়েছে। 

পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গেছে যে সোশ্যাল মিডিয়াতে এই সাপটি মেরে ফেলার প্রচারণা চলছে। কিন্তু সরকার বলছেন এটি মারার দরকার নাই ।তবে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যেন এই সাপে ছোবল মারতে না পারে। জানা গেছে স্কটল্যান্ডের প্রকৃতিবিদ প্যাট্রিক রাসেলের নাম থেকেই রাসেল ভাইপার নামকরণ হয়েছে ।

আরো পড়ুন: হাঁটু ব্যথার কারণ কি কি এবং এর প্রতিকার করার উপায় সমূহ জানুন

প্যাট্রিক রাসেল ১৭২৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি স্কটল্যান্ডের এডিন বার্গে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি 1950 সালে মেডিসিন বিভাগে ডাক্তারি পাস করেন। ১৭৮১ সালের পর প্যাট্রিক রাসেল ভারতে এসে প্রাকৃতিক ইতিহাস অধ্যয়ন শুরু করেন। সেই সময় কর্ণটেক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তারা সাপের কামোড়ের সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।

এবং তখন বিষ ধর সাপ সনাক্ত করার জন্য প্যাট্রিক রাসেলকে নিয়োজিত করেন।তিনি যে সাপ গুলো শনাক্ত করেছিলেন তার মধ্যে একটি হলো কাকুতা রেকুলা পোদা যা কোবরার পরের স্থানে প্রাণঘাতী হিসাবে স্থান পায়। এটিই বর্তমান সময়ের রাসেল ভাইপার সাপ। তিনি বিষধর এই সাপের উপর তার গবেষণার জন্যই এই প্রজাতের সাপের নাম রাসেল ভাইপার হয়। 

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এবং কোথায় পাওয়া যায় তা আরো জানুন রাসেল ভাইপার বর্তমানে ভারত, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশে পাওয়া যায়। এই সাপ টি ঘন ঘন অঞ্চল পরিবর্তন করে।এই সাপটি খোলা ঘাসযুক্ত বা ঝোপ- ঝাড় এলাকা ও কৃষি জমি ইত্যাদি স্থানে থাকে।

রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয়:

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় তা এতক্ষণ আলোচনা করেছি। এখন এই সাপে কামড়ালে কি করতে হবে বা কি করা উচিত তা আমাদের সবার জানা উচিত। বর্তমানে রাসেল ভাইপারের উপদ্রব বেড়েছে চরমভাবে। দেশের গ্রাম অঞ্চলে বেশ আতঙ্কের ঝড় বইছে। বিষধর এই সাপটির কামড়ে বিভিন্ন জায়গায় মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশের প্রায় ২৫ টি জেলায় এই সাপের উপদ্রব ছড়িয়ে পড়েছে। এবং প্রায় এসব এলাকায় সাপের কামড়ে মৃত্যুর খবর আসছে ।গ্রাম অঞ্চলে ধান ক্ষেত ,পাঠ ক্ষেত, ভুট্টা ক্ষেত আখ ক্ষেত,ঘাসের ক্ষেত, বনে জঙ্গলে,বিভিন্ন কৃষি জমিতে ইত্যাদি স্থানে এই সাপটি থাকছে। 

হঠাৎ তার উপর পা বা হাত পড়লে আক্রমণ করবে। তাই কাজ শুরু করার আগে সতর্ক হয়ে কাজে নামতে হবে। বিশেষ করে কাজ শুরুর আগে লম্বা বাঁশ দিয়ে কাজের জায়গাটি নাড়িয়ে নিতে হবে।তাহলে সেখানে যদি এই সাপ থাকে তাহলে পালিয়ে অন্যদিকে চলে যাবে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন জমিতে কাজে নামার আগে গামবুট পরে, মোটা কাপড়ের ট্রাউজার এবং জামা পরে কাজে নামতে হবে। এতে সব ধরনের সাপ অথবা যেকোনো পোকার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। রাজশাহী মেডিকেলের চিকিৎসক বলেন, রাসেল ভাইপারের দংশনে রোগীর কিডনি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। 

এবং শরীর জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি কামড়ের স্থানে পচন ধরে যায়। একই সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা না নিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তিনি আরো বলেন ২০১৫ সালের দিকে তারা রাসেল ভাইপার রোগী প্রথম পেয়েছিলেন কিন্তু ঐ রোগীর আক্রান্ত হাত এবং পা কেটে ফেললেও রোগীকে বাঁচানো যায়নি। 

তাই সচেতনতাই হচ্ছে এই সাপের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায়। যদি এই সাপে কামড়ায় তাহলে ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করতে হবে। তাহলে রক্ত চলাচল বন্ধ থাকলে বিষ সারা শরীরে ছড়াতে পারবে না। তখন দ্রুত গতিতে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় সাপের দংশন করলে গ্রাম অঞ্চলে কবিরাজ বা ওঝা দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। 

কিন্তু কোন অবস্থাতেই এটা ঠিক নয়।ওঝার ভরসায় না থেকে দ্রুত গতিতে দরকার হলে গাড়ি পেতে দেরি হলে মোটরসাইকেলে করে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে। কোন মতেই রোগীকে হাঁটা চলা করতে দেওয়া যাবে না কারণ হাঁটাচলা করলে সাপের বিষ রক্তের সঙ্গে প্রত্যেকটি অঙ্গে মিশে যেতে পারে। 

আর হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হলেই রক্তের সঙ্গে এই সাপের বিষ পুরো শরীরে মিশিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

রাসেল ভাইপার চেনার উপায়:

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় তা উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানলাম। এই সাপ টি চেনার উপায় আমাদের জানা দরকার। এই সাপের দেহ মোটাসোটা, লেজ চিকন ও ছোট হয়ে থাকে। মাথা চ্যাপ্টা তিন কণার মত, মাথার চেয়ে ঘাড় অনেক চিকন। রাসেল ভাইপার সাপের রং বাদামি কালার,হলদে বাদামি ,

কাঠ কালার হওয়ার কারণে শুকনো পাতা বা খড়ের মধ্যে এই সাপ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে। এই সাপটির জিহবার রং কালো ও বাদামি। সারা শরীরে বড় বড় গোল গোল বাদামি দাগ থাকে।গোল গোল দাগগুলো দেখতে অনেকটা চাঁদের মত। দাগ গুলোর চতুর পাশে কালো রঙের বর্ডার রয়েছে। 

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এবং এটি চেনার উপায় সম্পর্কে আরো জানুন। কালো রঙের বর্ডারের মধ্যে সাদা বা হলুদ রঙের ফোটা লক্ষ্য করা যায়। পেটের দিকটা সাদার মত রং। এদের বিষ দাগ বেশ বড় বা লম্বা হয়ে থাকে। এর দাঁত পৃথিবীতে সব সাপের দ্বিতীয় সবচেয়ে বৃহত্তম দাঁত। 

এই সাপের আক্রমণ প্রবল তুখোড় ।এরা প্রচুর জোরে জোরে ফস ফাঁস শব্দ করে থাকে।রাসেল ভাইপার সাপ শতকরা ৯৮ পারসেন্ট এরা বিষ প্রয়োগ করে থাকে। তাই আপনাকে বা কাউকে যদি এই সাপে কামড়ায় তাহলে কবিরাজ বা ওঝার কাছে না গিয়ে ১০০ মিনিটের মধ্যে অ্যান্টিভেনাম দিতে হবে।

এই সময়ের মধ্যে হাসপাতালে গিয়ে অ্যান্টিভেনাম প্রয়োগ করলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, তা নাহলে রোগীর তাড়াতাড়ি মৃত্যু হতে পারে। 

উপসংহার- রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়:

বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে এ কথা বলে শেষ করবো যে রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এবং এর করনীয় কি, কামড়ালে কি করতে হবে ,কিভাবে চিকিৎসা নিতে হবে, এবং রাসেল ভাইপার সাপের নামকরণ সহ এই সাপ চেনার উপায় কি কি। সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি পুরো পোস্টটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

আরো পড়ুন : মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ কি কি-কিভাবে তা রোধ করা সম্ভব

এবং অন্যান্যদের কেউ পড়ার জন্য উৎসাহিত করবেন। পোস্ট টি পড়লে ইনশাল্লাহ আপনি সাপের কামড়ের ব্যাপারে অনেক রেহাই সহ অনেক উপকার পাবেন।তাই পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url