ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন সেগুলো সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। এখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে যে, ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন। আপনি মনোযোগ দিয়ে লেখাটি পড়ুন এবং জেনে নিন- ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন।

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - সেই কাজগুলো এখানে বর্ণনা করা হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক্, ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন।

পেজ সূচি:

ভূমিকা:

বর্তমান সময়টাতে অধিকাংশ মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগছে। ভয়াবহ বিষয় হলো, অনেকে জানেই না যে তারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন। যদি তদের প্রশ্ন করা হয় যে, ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - এটা সম্পর্কে কতটুকু জানে তারা? হয়তো তারা সঠিক জবাব দিতে পারবে না। এই রোগের প্রভাব বেশ মারাত্মক। 

তাই আগাম প্রতিকার স্বরুপ ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - এগুলো সম্পর্কে আগেই জেনে রাখা উচিৎ।

চিন্তা এবং ডিপ্রেশন কি একই জিনিস?

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - সেগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আগেই মাথায় রাখতে হবে। চিন্তা এবং ডিপ্রেশন - দুটো এক জিনিস নয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই দুটোকে একই জিনিস ভেবে মারাত্মক ভুল করে। 

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন, এটা সম্পর্কে জানার আগে ডিপ্রেশনকে সঠিকভাবে চিনতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ চিন্তা ভাবনাকে ডিপ্রেশন বলে না। এটার জন্য কোনো চিকিৎসার দরকার নেই। কিন্তু 'ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন' বলে একটা গুরুত্বপূর্ণ টার্ম রয়েছে, এটার জন্য অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে।

মনোবিজ্ঞান ডিপ্রেশন নিয়ে কি বলে?

মনোবিজ্ঞান হলো মানুষের অন্তর জগতের বিজ্ঞান। এটা মানুষের মন ও চিন্তা নিয়ে গবেষণা করে ও কাজ করে। তাই মনোবিজ্ঞান ডিপ্রেশনকে খুব সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করেছে। ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন, সেগুলো সম্পর্কে মনোবিজ্ঞান চমৎকার সব সমাধান দিয়েছে।

আরো পড়ুন: ওসিডি রোগ থেকে মুক্তির উপায়

অসংখ্য মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন সময় বলে দিয়েছেন যে, ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড, কার্ল জং, জিন পিয়াগেট সহ আরো অনেকে তাদের বিখ্যাত কিছু বইতে ডিপ্রেশন নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের প্রত্যেকের লেখার সারাংশ এটাই দাঁড়ায়- 

ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার হাতিয়ার মানুষের নিজের কাছেই রয়েছে। শুধু সেই হাতিয়ারকে ব্যবহার করতে জানতে হবে।

নারী ও পুরুষের ডিপ্রেশনের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?

সত্যি বলতে, ডিপ্রেশনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে ডিপ্রেশনের লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - এটা সম্পর্কে জানার আগে এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলো জানা খুব দরকার। কারণ অধিকাংশ মানুষ মনে করে, ডিপ্রেশন মানেই বুঝি সেই ব্যক্তি হাত-পা কামড়াবে, বিছানার চাদর ছিড়বে, কাঁচের জিনিসপত্র ভাঙচুর করবে।

একদমই তা নয়। বরং বেশিরভাগ সময় ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষটিকে বাহির থেকে দেখলে বোঝাই যায় না যে, মানুষটি ডিপ্রেশনে ভুগছে। হয়তো সে নিজেও জানে না। তাই ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - এটা সম্পর্কেও সে ওয়াকিবহাল থাকে না।

সাধারণত নারীরা ডিপ্রেশনে ভুগলে কাঁদে। কিন্তু পুরুষ কারো সামনে কাঁদে না। কারণ আমাদের সমাজ শিখিয়ে দিয়েছে যে, পুরুষের কাঁদতে নেই। তাই পুরুষ তাঁর ডিপ্রেশনকে প্রকাশ করে রাগের মাধ্যমে, নেশা করে, অথবা কোনো বড় সিন ক্রিয়েট করে।

অবশ্য সবার ক্ষেত্রেই যে এই কথাগুলো সঠিক হবে তা কিন্তু নয়। যাই হোক্। আমাদের আজকের মূল টপিক- ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন, এটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

ডিপ্রেশনের লক্ষণসমূহ:

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - সেগুলো সহজ ভাষায় তুলে ধরা হবে। তবে এর আগে ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো জানা আপনাদের জন্য অপরিহার্য। কারণ আগে লক্ষণ দেখে ডিপ্রেশন শনাক্ত করবেন, তারপর তো এটার চিকিৎসা হবে।

আরো পড়ুন: ঘ্রাণশক্তি কমে গেলে করণীয় 

দ্য ডেইলি স্টার মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান সাইকোলজিক্যাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস ক্লিনিকের সঙ্গে (পিএইচডবনরিউসি) একটি যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে ডিপ্রেশনের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন, সেগুলো সম্পর্কে জানার আগে লক্ষণগুলো জেনে নিন-

  • কমপক্ষে টানা দুই সপ্তাহ বিষণ্ণ থাকা।
  • পছন্দের কাজগুলোতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
  • সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে দেয়া।
  • ঘুমের সমস্যা ও চরম ক্লান্তি।
  • ঘন ঘন মুডসুইং হওয়া।
  • হঠাৎ রেগে যাওয়া।
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়েট, খুব ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া অথবা পুরোপুরি হ্রাস পাওয়া।

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন :

এবার তবে জেনে নেয়া যাক, ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন। খুব মনোযোগ সহকারে জেনে নিন এবং ফলো করার চেষ্টা করুন:

১. জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা করা:

আমরা অধিকাংশ মানুষ নিজেদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা জীবন সম্পর্কে বেশিরভাগ সময় নেতিবাচক চিন্তা করি। এটা ডিপ্রেশনের অনেক বড় একটি কারণ। তাই সহজ হোন, ইতিবাচক চিন্তা করুন।

২. সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা:

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - সেই করণীয় কাজগুলোর মধ্যে সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সোস্যাল মিডিয়া হলো ডিপ্রেশনের এক আখড়া। সোস্যাল মিডিয়াতে অন্যদের জীবনের ফেইক ও মিথ্যা সুখ - আনন্দ দেখে নিজেকে বঞ্চিত ভাবা, নিজেকে হতভাগা মনে করা- এগুলো সব ডিপ্রেশনের কারণ। 

যে যতো সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকবে, তাঁর ডিপ্রেশন হবার সম্ভাবনা প্রায় ৭০% কমে যাবে।

৩. নিয়মিত যোগব্যায়াম করা:

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে নিয়মিত যোগব্যায়াম করা উচিৎ। প্রতিদিন ভোরে মেডিটেশন, ব্যায়াম ডিপ্রেশন থেকে অনেক দূরে রাখে।

আরো পড়ুন: সকালে ব্যায়াম করার ১০টি উপকারিতা 

৪. মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকা:

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন, সেই কাগুলোর মধ্যে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট। অধিকাংশ মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ে মাদকদ্রব্য সেবন করে। অথচ এটা তাঁর ডিপ্রেশনকে আরো বৃদ্ধি করে। তাই ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকুন।

৫. সঠিক ডায়েট ফলো করা:

সঠিকভাবে ডায়েট করতে না পারলে আপনার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আর শরীর ভালো না থাকলে মন ভালো থাকে না। ক্রমেই সেটা ডিপ্রেশনের পর্যায় চলে যায়। তাই আপনার শরীরের ধরন বুঝে সঠিক ডায়েট মেইনটেইন করুন। প্রয়োজনে কোনো ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নিন।

৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া:

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - সেই করণীয় কাজগুলোর মধ্যে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ডিপ্রেশনকে রোগ হিসেবে মানতে নারাজ। শরীরে রোগ হলে যেমন চিকিৎসা নিতে হয়, ঠিক তেমনি মনের রোগ হলেও সুস্থ হতে চিকিৎসা দরকার। 

তাই ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো সাইকোলোজিস্টের পরামর্শ নিন।

শেষ কথা:

ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন, সেগুলো জানলেন। এছাড়াও ডিপ্রেশন রিলেটেড আরো কিছু তথ্য তুলে ধরলাম। আশা করি, আপনার কাজ লাগবে। ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন - সেগুলো ভালো করে জেনে নিন, নিজেকে সুস্থ রাখুন। (25957)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url