শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় কি
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় কি ? সে সম্পর্কে পোস্ট লেখার জন্য আজকে হাজির হয়েছি।আপনি যদি শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় কি তা জানতে চান। তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।
চলুন তাহলে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে জেনে নেওয়া যাক শিশুদের ঘন ঘন হলে করণীয় কি।
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয়:
আসলে আমরা সবাই জানি চিকিৎসকের ভাষ্য অনুযায়ী জ্বর কোন রোগ নয়। জ্বর হচ্ছে একটি উপসর্গ। শীতের শেষ দিকে এবং প্রচন্ড গরমের সময় বিশেষ করে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ,আষাঢ় মাসে এই উপসর্গটি বেশি দেখা দেয়। বিভিন্ন কারণে শিশুদের বা বড় মানুষের শরীরে জ্বর হতে পারে।
আরো পড়ুন: পিরিয়ড হওয়ার জন্য ঔষধ
যেমন-বিভিন্ন ধরনের ব্যথা, দাঁতের ব্যথা, মাথার ব্যথা, হাতে পায়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, ফোঁড়ার ব্যথা, কেটে গেলে ব্যথা, কান পাকার ব্যথা ইত্যাদি ব্যথার কারণে আমাদের বা শিশুদের জ্বর হতে পারে। সিজোনাল আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেও জ্বর হতে পারে। প্রচুর পরিমাণ লিকুইড বা তরল জাতীয় খাবার শিশুর জ্বর হলে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
শিশুর জ্বর হলে কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিন। জ্বর হলে শিশুর কপালে হালকা গরম পানিতে ন্যাকড়া ভিজিয়ে বা গামছা অথবা তোয়ালো চিপে পানি ঝরিয়ে তারপর ভাপ বা সেঁক দিলে শিশুটি আরাম পাবে। এবং জ্বর কমতে পারে। জ্বর হলে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখতে হবে। শিশুর শরীর যদি বেশি গরম থাকে, যদি অস্বস্তিতে কান্নাকাটি করে তাহলে ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চললে সেই অসুখের অনেক উপকার হবে।
শিশুর শরীরে তাপমাত্রা যদি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয় ,তাপমাত্রা যদি না কমে তাহলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক শিশুটির অবস্থা দেখে বা জ্বর মেপে যে ধরনের ব্যবস্থা নিবেন সেইভাবে শিশুদের প্রতি যত্ন নিতে হবে বা যদি কোন ঔষধ দেন তাহলে তা সেবন করাতে হবে।
শিশুর জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়:
শিশুর প্রতি আমাদের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। অনেক গ্রাম অঞ্চলের শিশু আছে দেখা যায় বাবা মা তার কোন সঠিক মতো যত্ন নিতে পারেনা। শিশুটিকে বাড়ির উঠোনে বা বারান্দায় বসিয়ে রেখে মা এদিক সেদিক কাজ করেছেন। আর শিশুটি ধুলাবালি, ময়লা, আবর্জনা নাড়াচাড়া করছে এবং মুখেও দিচ্ছে। এমনকি সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করে এবং তা নাড়াচাড়া করে এমনকি না বুঝে নোংরা মুখেও দেয় । তাই শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে জানুন এবং
এই জাতীয় অভ্যাস মা-বাবাকে বাদ দিতে হবে।নইলে শিশুদের বড় ধরনের অসুবিধা বা অসুস্থ হতে পারে। শিশুর যদি জ্বর হয় তাহলে সম্পূর্ণ শিশুটিকে বিশ্রামে রাখুন এবং প্রয়োজনে আস্তে করে ফ্যান চালিয়ে রাখুন। সঠিকভাবে শিশুর যত্ন এবং পূর্ণ বিশ্রামে রাখলে শিশুটি অনেকখানি আরাম পাবে।
শিশুটিকে টাইট জামা কাপড় না পরিয়ে। লুজ বা ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরিয়ে দিন। তাহলে শিশুটি অস্বস্তি বোধ থেকে রক্ষা পাবে। শিশুর জ্বরের তাপমাত্রা যদি বেশি থাকে তাহলে হালকা কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিন। তাহলে জ্বর কমতে পারে। কিন্তু ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে জ্বর আরো বাড়তে পারে।
তাই ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না অথবা হালকা গরম পানিতে পরিষ্কার গামছা বা তোয়ালো ভিজিয়ে ভালো করে তোয়ালো চিপে পানি নিংড়ে নিয়ে শিশুর সমস্ত শরীর আলতোভাবে মুছে দিলে শিশুটি আরাম পাবে। সেই সাথে জ্বর কিছুটা কমে যেতে পারে। শিশুর জ্বর হলে তাকে স্বাভাবিক পরিমাণ লিকুইড বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।
কারণ জ্বর হলে শিশুটির শরীরের ভিতর থেকে পানি বা তরল জাতীয় পদার্থ কমে যেতে পারে। তাতে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তরল খাবারের মধ্যে চা বা কফি খাওয়ানো যাবে না। ফলের জুস শরবত, ডাবের পানি, স্যুপ, খাবার স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। শিশুর যদি সংক্রমিত জ্বর হয়ে থাকে তাহলে এমনিতেই ভালো হতে পারে।
দুই দিনের বেশি এই জ্বর থাকে না। তবে যদি চিকিৎসকের মতে এন্টিবায়োটিক দরকার হয় তাহলে পূর্ণ ডোজ শেষ করতে হবে। নইলে আবার জ্বর আসতে পারে। তার আগে মেন্থল তেল হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে চার থেকে পাঁচ বার ভাপ দিতে হবে এবং তার সাথে প্যারাসিটামল ঔষধ খাওয়াতে হবে।
দুই থেকে তিন দিনে জ্বর যদি না কমে তাহলে ডাক্তারের নিকট শরণাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসক রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করে ঔষধ দিবেন। তখন ওই ঔষধ ডাক্তারের নিয়ম অনুসারে শিশুটিকে সেবন করাতে হবে। সাধারণত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেও নানা ধরনের ভাইরাস , ব্যাকটেরিয়ার কারণে বাচ্চাদের জ্বর বেশি হয়ে থাকে।
তাই বাচ্চাদের বাইরে না বেরোনোই ভালো। টক জাতীয় ফলের জুস যেমন- জাম্বুরা, আমড়া ,কমলা, লেবু ইত্যাদি খাওয়ানো ভালো।
শিশুর জ্বর কত হলে সাপোজিটরি দরকার:
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় কি এ বিষয়ে জানতে পুরো পোস্টটি পড়ুন। উপরোক্ত বেসিক নিয়ম গুলো মেনে চলার পরও যদি শিশুর জ্বর না কমে। তাহলে তিন থেকে চার মাস বয়সী শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা দেওয়ার পর যদি জ্বর আসে তাহলে ৬০ মিলিগ্রাম সাপোজিটরি দেওয়া যেতে পারে।
সাপোজিটরি সম্পূর্ণ রূপে কাজ করতে ৫০ থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগতে পারে।ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বড়দের জন্য দিনে একটি 4g সাপোজিটরি ব্যবহার করা উচিত। চিকিৎসকদের মতে, শিশুর জ্বর যদি না কমে এবং কোনভাবেই মুখে খাওয়ানো সম্ভব না হয় তাহলে পায়ুপথে সাপোজিটরি প্রয়োগ করলে জ্বর দ্রুত কমে যাবে।
শিশুদের জ্বরের পাশাপাশি যা খেয়াল করবেন:
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় কি তা মোটামুটি ভাবে আলোচিত হয়েছে। তবে জ্বরের পাশাপাশি যেগুলো খেয়াল রাখা দরকার তা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: মেয়েদের বোচা নাক চিকন করার উপায় সমূহ জানুন
- শিশুর ঠিকমতো প্রস্রাব পায়খানা হচ্ছে কিনা। একটানা ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা প্রস্রাব বা পায়খানা না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং তলপেটে ব্যথা হচ্ছে কিনা ।প্রস্রাবের সময় শিশু কান্নাকাটি করছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
- শিশুর বমি, খিচুনি ,অজ্ঞান হয় কিনা তা ভালোমতো খেয়াল রাখতে হবে।
- শিশুর চঞ্চলতা কেমন আছে, নাকি চুপচাপ থাকে, নাকি চঞ্চল্যকর অবস্থায় থাকছে তা ফলোআপ করতে হবে।
- ঢোক গিলার সময় শিশুটি কষ্ট পাচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে।
- দেহের কোথাও ফুসকুড়ি বের হয়েছে কিনা তা চেক করতে হবে।
- শিশুটির নাক কান দিয়ে রক্ত বা পুজ বের হচ্ছে কিনা।
- শিশুর শরীর হলদে ভাব হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে।
- শিশুর চোখ, মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে কি না বা ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে।
- কিছুক্ষণ পর পর শিশুর সর্দি, কাশি, হাঁচি কেমন তা খেয়াল করতে হবে।
উল্লেখিত যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে চিন্তা বা দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে ঔষধ সেবন করাতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে।
যেসব ভাইরাসের সংক্রমনে শিশুদের জ্বর হয়:
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় কি তা আরো জানুন এবং সতর্ক থাকুন যে ভাইরাসের সংক্রমণের কারণেও শিশুদের মারাত্মক জ্বর হয়ে থাকে। যেমন- শিশুর জ্বরের অন্যতম কারণ গুলোর মধ্যে আছে টাইফয়েড, টনসিলে সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, হার্টের সংক্রমণ ইত্যাদি। এছাড়া ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে অনেক আলোচনা শোনা যায়।
এটি একটি মারাত্মক জ্বর । তাই আমাদের সকলের এ ধরনের জ্বর সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
উপসংহার- শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয়:
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আপনারা জানেন আজকের শিশু আগামী দিনের বিশাল ভবিষ্যৎ।তাই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জানুন শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় কি এবং সব সময় সতর্ক থাকুন। শিশুদের সবসময় যত্ন সহকারে রাখতে হবে এবং সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে তাদের কোন অসুখ বিশেষ করে জ্বর, ঠান্ডা ,কাশি, সর্দি পাতলা পায়খানা বা
আরো পড়ুন : মুখের উজ্জ্বলতা কিভাবে বাড়ানো যায়- উজ্জ্বলতা বাড়ানোর উপায়
ডায়রিয়া ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে কিনা তা সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। উপরোক্ত ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চললে আপনার শিশুর যদি জ্বরের কোন উন্নতি না হয়। তাহলে তাড়াতাড়ি দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে ।পোস্টটি পড়ে আপনার যদি কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অন্যান্য দেরকেও পড়ার জন্য শেয়ার করুন।
কারণ তারাও যেন শিশুদের এই সমস্যার জন্য উপকার পেতে পারে এবং মন্তব্য করুন। যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে কমেন্টেস বক্সে উল্লেখ করুন।
ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url