পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে জানুন

পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে তা আপনি যদি জানতে চান তাহলে সঠিক আর্টিকেলটি পড়ছেন। বেশিরভাগ মানুষই জানে না যে পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে। 

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে। 

পেয়ারার মধ্যে যেসব গুণাবলী রয়েছে: 

পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে তা এখন আলোচনা করব। আশা করছি আপনি আমার এই আর্টিকেলের সঙ্গেই থাকবেন। পেয়ারা হচ্ছে আমাদের দেশের পুষ্টিগুণে ভরপুর ফলের মধ্যে একটি অন্যতম সেরা ফল ।পুষ্টিবিদদের মতে, একটি পেয়ারার মধ্যে চারটি কমলা ও চারটি আপেলের সমান পুষ্টিগুণ, ভিটামিন সি রয়েছে। 

আরো পড়ুন: লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

পেটের সমস্যা,উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ক্যান্সার প্রতিরোধ, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পেয়ারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যান্য ফলের চেয়ে পেয়ারার মধ্যে অনেক বেশি ভিটামিন থাকে। স্বাস্থ্যের জন্য এই পেয়ারা খুবই উপকারী একটি ফল। 

এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি, ভিটামিন সি ,ভিটামিন বি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম ,ক্যালসিয়াম ,প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ,ফাইবার ইত্যাদি। ভিটামিন সি আমাদের দাঁত ও দাঁতের মাড়িকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ১০০ গ্রাম পেয়ারার মধ্যে আছে 0.21 মিলিগ্রাম ভিটামিন বি1 এবং 0.09 মিলিগ্রাম 

বি-২, আবার প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারার মধ্যে ৭৬ ক্যালোরি, 1.4 গ্রাম প্রোটিন, 1.1 গ্রাম স্নেহ থাকে। এছাড়া পেয়ারার মধ্যে বিভিন্ন রকমের খনিজ উপাদান রয়েছে। যেমন ০.৬ গ্রাম মিনারেল, 0.0 3 মিলিগ্রাম থায়ামিন, ২৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, থাকে প্রতি একশ গ্রাম পেয়ারের মধ্যে। 

পেয়ারা ফলের মধ্যে এত বেশি গুনাগুন রয়েছে তা হয়তো আপনি আর্টিকেলটি না পড়লে বুঝতে পারবেন না।

পেয়ারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে অনেকেই জানতে চায়। যেহেতু পেয়ারার মধ্যে নানা ধরনের পুষ্টি রয়েছে সেই পুষ্টি আমাদের শরীরের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। 

আমাদের শরীরের কোথাও কেটে গেলে কাটা স্থান শুকানোর জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই বহুগুণ বিশিষ্ট ফলটি আপনি খেতে পারেন। যেহেতু পেয়ারা বছরের প্রায় সব সময় পাওয়া যায় হাতের নাগালের মধ্যেই এবং দামেও সস্তা।

পেয়ারা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে: 

পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে সেই গুণাবলীর মধ্যে মানব দেহের সবচেয়ে বড় রোগ ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে এই পেয়ারা ফল। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ গুণ কারণ আমরা জানি সাধারণত ক্যান্সার হলে বেশিরভাগ মানুষই বাঁচে না বা বাঁচতে পারে না। তাই এই সবচেয়ে মারাত্মক রোগ ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য আপনি প্রতিদিন পেয়ারা খেতে পারেন। 

বর্তমানে প্রায় সারা বছরই পেয়ারা পাওয়া যায় এবং দামও হাতের নাগালের মধ্যে। ক্যান্সার প্রতিরোধে এই পেয়ারা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে পেয়ারা অনেক উপকারী। পেয়ারাতে আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। 

আরো পড়ুন: কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি -কাঁচা আম খাওয়ার নিয়ম

গবেষকদের মতে পেয়ারার ত্বকের রস ও পাতার রস ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি আটকাতে সাহায্য করে। এমনকি এই কাজের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের চেয়েও প্রায় চার গুণ বেশি ক্ষমতা রয়েছে এই পেয়ারার মধ্যে। এছাড়া নিয়মিত পেয়ারা খেলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন- স্তন ক্যান্সার, মুখের ,ত্বকের, পাকস্থলীর, অন্ত্রের এবং ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে  ব্যাপক সাহায্য করে।

পেয়ারা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে:

পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে তা জানতে পুরো পোস্টটি পড়ুন এবং ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আপনি প্রতিদিন পেয়ারা খেতে পারেন। পেয়ারার মধ্যে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস মেলিটাসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। এছাড়া পেয়ারার পাতাও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। 

পেয়ারা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খেলে ব্লাড সুগার কমে যায়। তাই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পেয়ারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকদের মতে, পেয়ারা খেতে মিষ্টি হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ফল বিশেষ উপকারী।পেয়ারা ফাইবারের একটি ভালো উৎস এবং এর গ্লাইসেমিক সূচক কম। 

যার কারণে ডায়াবেটিস রোগীরাও এটি খেতে পারেন।পেয়ারাতে আছে গ্লুকোজ বিরোধী প্রভাব যা রক্তে শর্করা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে একইসঙ্গে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

পেয়ারা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে কাজ করে:

পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে বা যেসব গুণাবলী রয়েছে সেগুলোর মধ্যে এই ফল পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এটি একটি অন্যতম গুণ। পিরিয়ডের সময় পেটে অনেক ব্যথা হয়। এই সময় পেয়ারার পাতা বা রস  খেলে ওই পিরিয়ডের ব্যথা দ্রুত কমে যায়। তাই পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে বা  ব্যথা রোধ করতে আপনি পেয়ারার পাতার রস খেতে পারেন।

পেটের সমস্যায় পেয়ারার কার্যকারিতা:

বহু ভিটামিন বেষ্টিত এই পেয়ারা ফলটি পেটের গোলযোগ নিবারণের কাজ করে। এই ফলের রস কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয় ইত্যাদি পেটের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। সুতরাং আপনি যদি পেটের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিঃসন্দেহে চিকিৎসার পাশাপাশি পেয়ারা খেতে ভুলবেন না কারণ পেয়ারা শুধু পেটের সমস্যার সমাধান করে না অন্যান্য বহু রকমের শরীরে অসুখ-বিসুখের জন্য উপকারী।

পেয়ারা ঠান্ডা জনিত ত্বক ও চুলের কাজ করে: 

পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে তা আপনি হয়তো কিছুটা জেনে ফেলেছেন ।বছরে প্রায় সব সময় এই ফলটি পাওয়ার কারণে এবং দামে কম হওয়ার কারণে অনেকেই পেয়ারার উপর গুরুত্ব কম দেয়। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে একটি পেয়ারার ভিটামিন একটি আপেল অথবা একটি কমলার চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি রয়েছে। 

শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা লাগা, সর্দি কাশি, ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেয়ারা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকার কারণে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে ত্বকের রুক্ষতা দূর করে এবং শীতে হাত-পা ফাটা রোধ করে। এছাড়া চুলের পুষ্টি ও চুলকে মজবুত করতে সহায়তা করে।

চোখের সমস্যায় চেহারার গুণ :

কাঁচা পেয়ারার মধ্যে ভিটামিন এ থাকে। এই ভিটামিন এ চোখের কর্নিয়া কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং প্রতিদিনের ফলের খাদ্য তালিকায় অন্যান্য ফলের চেয়ে পেয়ারা রাখা খুবই দরকার। চোখ হলো আমাদের শরীরের দুটি মূল্যবান অঙ্গ। 

চোখ ছাড়া আমরা কোন কিছুই দেখতে বা চলতে-খেতে পারি না। তাই চোখের যত্নে বছরের এই সব সময় পাওয়া ফলটি দামে সস্তা আপনি খেতে পারেন। দামে সস্তা বলে এবং বছরের সব সময় পাওয়া যায় বলে আপনি এই ফলটিকে অবহেলা করবেন না।

পেয়ারা শরীরের পেশি ও স্নায়ু শীতল রাখে: 

পেয়ারা শরীরে পেশি ও স্নায়ু কিভাবে ঠিক রাখে তা আমাদের জানা দরকার। ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ এই ফল খাদ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান শোষণ করে শরীরের সকল খাবারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।এছাড়া এটি একটি ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ ফল যা আমাদের স্নায়ু শিথিল করতে সাহায্য করে। 

সুতরাং হাড় ভাঙ্গার মত কঠিন কাজ করার পর একটি পেয়ারা খেলে আমাদের শরীরের পেশি শিথিল হয় এবং কঠিন কাজে শক্তির সঞ্চার ঘটায়।

পেয়ারা খেলে কি কি ক্ষতি হয়: 

পেয়ারা ফলের মধ্যে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে বা পেয়ারা খাওয়ায় কি কি উপকারিতা রয়েছে তা আপনি উপরে আলোচনার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।এখন পেয়ারা খেলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা আমাদের জানা দরকার ।বহুল পরিমাণ ভিটামিন থাকা সত্ত্বেও এই পেয়ারার মধ্যে নানা ধরনের অপকারিতা বা শরীরের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এই ফলে।


 অতিরিক্ত পেয়ারা খেলে পেট ফুলে যেতে পারে। এই ফলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি থাকে। অতিরিক্ত এই ফল খেলে পেট ফোলা ভাব ও গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত পেয়ারা খেলে আপনার হজম সিস্টেমে খারাপ প্রভাব ফেলে হজম শক্তিকে দুর্বল করতে পারে। 

ডায়াবেটিস রোগীরা পাকা পেয়ারা থেকে বিরত থাকতে পারেন। তবে আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দিনে কতটুক পরিমাণ পেয়ারা খেতে পারবেন তা জেনে নেওয়া ভালো। আপনি যদি কোন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেন তাহলে এটি এড়িয়ে চলাই ভালো। এর মধ্যে পটাশিয়াম ও ফাইবার থাকে।

 আপনি ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন । গর্ভবতী এবং দুগ্ধ দানকারী মহিলাদের এই ফল অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে এর ফাইবার বৃদ্ধি পায় ফলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পেয়ারা ভালো নাকি আপেল ভালো: 

আগেই আলোচনা করেছি পেয়ারার মধ্যে প্রায় ৪ গুণ বেশি ভিটামিন থাকে আপেলের চেয়ে।পেয়ারার মধ্যে ভিটামিনের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা পেয়ারা খেলে ডায়াবেটিসের কোন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু আপেল ডায়াবেটিস রোগীরা খেলে আরো সমস্যা হতে পারে। 

আরো পড়ুন:কাঁঠাল খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কি কি -কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম

পেয়ারা বছরের সব সময় হাতের নাগালেই বা নিজেদের গাছে পাওয়া যায় এবং দামে সস্তা। কিন্তু আপেল বাসা বাড়িতে বা আপেলের গাছ না থাকার কারণে হাতের নাগালে আপেল পাওয়া যায় না। তাই আপেলের দাম বেশি। সুতরাং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বা আমাদের শরীরের জন্য দুটি ফলেই বেশি উপকারী ।তবে তুলনামূলকভাবে পেয়ারাই  আমাদের জন্য বেশি ভালো।

উপসংহার:

বক্তব্যের শেষ প্রান্তে আমি একথা বলে শেষ করব যে পেয়ারা মধ্যে কি কি গুনাগুন রয়েছে বা পেয়ারার মধ্যে কি কি উপকারিতা রয়েছে এবং পেয়ারা খেলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা মোটামুটি ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি পুরো পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন

 তাহলে আপনি জানতে পারবেন যে পেয়ারার গুনাগুন কি কি রয়েছে। আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি কোন উপকার পেয়ে থাকেন তাহলে কমেন্টস বক্সে আপনি কমেন্টস করতে পারেন ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url