কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি -কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানেন জাতীয় ফল কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি ? যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। আজ আমি কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি এবং কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।
চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি এবং কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করি।
কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা:
কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি- কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করছি আপনি আমার এই পোষ্টের সঙ্গেই থাকবেন।কাঁঠাল হচ্ছে পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি বড় আকারের জাতীয় ফল। কাঁঠালে আছে থায়ামিন,ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ,আয়রন সোডিয়াম এবং জিংক সহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি।
আরো পড়ুন: রাতে শশা খেলে কি হয় -শসা খাওয়ার নিয়ম
অন্যদিকে কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আমিষ ,শর্করা ও ভিটামিন থাকায় মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও আমাদের সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কাঁঠালের চর্বির পরিমাণ সামান্য। এই কারণে মানবদেহের ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম।
কাঁঠালে পটাশিয়াম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ আছে যা খেলে চোখের জন্য ভালো এবং রাত কানা রোগ প্রতিরোধ করে ।কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। প্রকৃতভাবে মানবদেহে ভিটামিন সি তৈরি হয় না।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে এই ভিটামিন সি।
কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণ খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ যা রক্ত শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই বৃহৎ ফলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম যা মানব দেহের হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালী করণে ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসা শাস্ত্রের মতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলারা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়ে যায়।
দুগ্ধ দানকারী মা তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কাঁঠালের বিচির প্রোটিন অত্যন্ত উপকারী। মাছ-মাংস কম খাওয়া মানুষের আমিসের চাহিদা মেটাতে কাঁঠালের বিচি উৎকৃষ্ট খাবার। তাই নিয়মমাফিক কাঁঠাল খেলে শরীরের অনেক ধরনের উপকার হয়।
পাকা কাঁঠালের স্বাদ-কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা:
কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি- কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আরো জানুন।পাকা কাঁঠালের স্বাদ ও সুগন্ধ খুবই ভালো লাগে। কিন্তু অনেকের কাছে কাঁঠাল খুব একটা ভালো লাগে না। মানব দেহে যেসব পুষ্টির প্রয়োজন তার সবই আছে এই কাঁঠালের মধ্যে। তবে পাকা ও মিষ্টি কাঁঠাল খুঁজে বের করা কঠিন।
স্বাদ, গুণ ও গন্ধের কারণে এটি আমাদের জাতীয় ফল। গাছ পাকা কাঁঠাল খেতে খুবই সুস্বাদের হয়। তবে বাজারে খুব একটা ভালো কাঁঠাল পাওয়া যায় না। কারণ ব্যবসায়ীরা কাঁচা অবস্থাতেই কেটে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করে। ভালো কাঠাল কিনতে চাইলে আপনি এর গন্ধ প্রথমে পরীক্ষা করে দেখুন।
যদি কাঁঠাল পাকা হয় তাহলে মিষ্টি জাতীয় একটি সুগন্ধ পাওয়া যাবে। এবং হাত দিয়ে হালকা চাপ দিলে নরম লাগবে। গাছ পাকা কাঁঠাল সকালে রুটির সঙ্গে খেলে অনেক সুন্দর স্বাদ ও মজা পাওয়া যায়। কাঁঠালের বিচি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এই বিচি তরকারি রান্না করে খাওয়া যায় এবং আলাদা ভাবে ভেজে শুকনো ভাবেও খেতে অনেক মজা লাগে।
কাঁঠালের চামড়া গরু ,মহিষ এবং ছাগলে খেতে পছন্দ করে। এবং কাঁঠালের পাতা ছাগলের জন্য প্রিয় একটি খাবার। কাঁঠালের গাছের কাঠ অনেক আমাদের উপকারে আসে। এই কাঠ দিয়ে নানা ধরনের ফার্নিচার তৈরি করতে পারি। এছাড়া কাঁঠালের তরকারি খেতে অনেক মজা লাগে।
আরো পড়ুন: ময়মনসিংহ জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম
গরুর মাংস অথবা মুরগির মাংস দিয়ে কাঁচা কাঁঠাল রান্না করলে খেতে সুস্বাদু লাগবে এবং অনেক উপকার রয়েছে।
কাঁঠালের অপকারিতা -কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম:
কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি- কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আরো জানতে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আসলে অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য উপকার নয়। তাই কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া আমাদের ঠিক নয়। জাতীয় ফল কাঁঠাল এমন একটি ফল ।
এর মধ্যে অনেক উপকার, পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও এই ফলের মধ্যে অনেক অপকারও রয়েছে। যদি এটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাওয়া হয় তাহলে আমাদের শরীরের নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। কাঁঠালের বিচিতে আঁশ থাকে। তাই বেশি খেলে সমস্যা হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের পাকা কাঁঠাল খাওয়া খানিকটা বেঁধে নিষেধ আছে।
যাদের কিডনির সমস্যা আছে তারা কাঁঠাল না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে পেট ফাঁপা সহ বদহজম, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি হতে পারে। কাঁঠালের ভরা মৌসুম হচ্ছে পুরোপুরি গরমের মৌসুম। এই প্রচন্ড গরমে বেশি পরিমাণ কাঁঠাল খেলে পেট ভারী হয়ে শরীরে অস্বস্তি লাগতে পারে।
কাঁঠাল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অথবা কাঁঠাল খাওয়ার পর পরই দুধ, মধু ,পাকা পেঁপে ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা। এগুলো খেলে শরীরে অনেক অসুবিধা হতে পারে।তাই চিকিৎসকরা দুধের সঙ্গে এগুলো না খাওয়ার পরামর্শ দেন।
জাতীয় ফল কাঁঠালের মর্যাদা ও অপকারিতা:
কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি তা আলোচনা করা হয়েছে।পৃথিবীতে জাতীয় ফলের মধ্যে কাঁঠালই সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগ্য।শতভাগ খাবার উপযোগী হলেও আমাদের নিকট এই ফলের সম্মান অনেকাংশে কম।কারণ অনেকেই আছেন কাঁঠাল পছন্দ করেন না।
অবশ্য অন্যান্য দেশ গুলোতেও কাঁঠালের ভাগ্য এইরকম। কিছু লোক কাঁঠালের তীব্র গন্ধ, স্বাদ ,আঠা ও অস্বস্তিকর প্রতিক্রিয়ার কারণে খেতে পারেনা। কাঁঠাল খেলে কারো কারো আবার এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাঁঠালে উচ্চমাত্রার সালফার যোগ রয়েছে। এটা কিছু লোকের হজম করা কঠিন হতে পারে।
কিছু মানুষ কাঁঠালের প্রতি নাক উঁচু ভাব দেখালেও সংখ্যার বিচারে এ জাতীয় ফল কাঁঠালের এখনো জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রতি বছর জৈষ্ঠের শেষে, আষাঢ় শ্রাবণ মাসে গাজীপুর, সিলেট অঞ্চলে বড় বড় কাঠালের আড়তের দেখা পাওয়া যায়। এখনো রাজধানী ঢাকাতেও বিক্রি হয় মটকার মতো বিশাল বিশাল কাঁঠাল। তার মানে কাঁঠালের অতটা মর্যাদা হানি এখনো হয়নি।
বারোমাসি কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা:
কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি।তা উপরের অংশে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি ।এখন ১২ মাস কাঁঠালের উৎপাদন নিয়ে কিছু আলোচনা করব।বারোমাসি কাঁঠাল বর্তমানে দেশের কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে। বারোমাসি কাঁঠাল খেলে অনেক মজা লাগবে।
বারোমাসি কাঁঠাল যেহেতু অন্য সময় অর্থাৎ প্রচন্ড গরম ছাড়াও শীতকালে বা অল্প শীতে কাঁঠাল খেলে কোন ক্ষতি নেই বরং কাঁঠালের যে অরিজিনাল সিজন সেই সিজন ছাড়াও অন্যান্য সময় কাঁঠাল খেতে অনেক স্বাদ লাগবে। এবং অনেক উপকার আছে। বারোমাসি কাঁঠাল সাধারণত গাজীপুরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে বারোমাসি কাঁঠাল উদ্ভাবন করেন।
আরো পড়ুন: মহিলাদের হাঁটু ব্যথার কারণ কি কি এবং এর প্রতিকার সমূহ জানুন
কাঁঠালের চারা রোপনের মাত্র দেড় বছরেই পাওয়া যাবে ফল। বছরের ১২ মাসেই ধরবে কাঁঠাল ।এমন কি এই কাঁঠালে আঠাও থাকে না। এমন নতুন কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন হয় গাজীপুরে। এই নতুন জাতগুলোর মধ্যে বারি-৬ মাঠ পর্যায়ে ভালো সাঁড়া পাওয়া গেছে। নতুন জাতের কাঁঠাল খেতে সুস্বাদু,মিষ্টি এবং ঘ্রাণ ভালো।
জানা গেছে বারি-৬ এই জাতটি নতুন জাত হলেও অন্যান্য বারোমাসি কাঁঠালের চেয়ে ফলন হয় বেশি।
কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি- কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম:
অনেকেই পাকা কাঁঠাল মিষ্টি বলে খেতে চায় না ।তারা মনে করে যদি ওজন বেড়ে যায় তাহলে মুশকিল হয়ে যাবে। আসলে কি কাঁঠাল খেলে ওজন বাড়ে? স্বাস্থ্যকর পুষ্টিগুনে ভরপুর কাঁঠালের পুষ্টিমান বলতে গেলে প্রতি 100 গ্রাম কাঁঠালে খাদ্য আঁশ থাকে দুই গ্রাম, শর্করা ২৪ গ্রাম, চর্বি দশমিক তিন মিলিগ্রাম,
পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম। আর কাঁঠালের কোলেস্টেরলের পরিমাণ শূন্য ।তাই কাঁঠাল স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। যে কোন বয়সের মানুষ এটা খেতে পারে। কাঁঠাল শক্তির ভালো উৎস। এতে আছে মূলত শর্করা ও চর্বির পরিমাণ খুবই কম হওয়ার কারণে কাঁঠাল স্বাভাবিক পরিমাণ খেলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না।
বরং শরীরের স্বাস্থ্যের পক্ষে আরো উপকার হয়। তবে কাঁঠাল নিয়ম অনুসারে অল্প পরিমাণে খেতে হবে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে কাঁঠাল খাওয়া যেতে পারে।
কাঁঠাল কেন আমাদের জাতীয় ফল:
যেকোন দেশের জাতীয় পশু,পাখি, ফল, ফুল ইত্যাদি বাছাই করার আগে সাধারণত দুটি বিষয় খুব ভালো করে দেখা হয়। প্রথমটি হল যে দেশের জিনিসটির নাম জাতীয় হবে সেই দেশে ওই জিনিসটি প্রচুর পরিমাণ আছে কিনা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সবাই ওই জিনিসটি চেনে কিনা।
কাঁঠাল বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ উৎপাদিত হয় এবং সবাই এটাকে ভালো করে চেনে। এবং এই ফলের প্রচুর উপকার থাকার কারণে কাঁঠালকে বাংলাদেশের জাতীয় ফল বলা হয়। কাঁঠাল এবং কাঁঠালের গাছের প্রতিটি অংশই ব্যবহারযোগ্য। এজন্য কাঁঠালকে বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার:
কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি -কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ।আশা করছি পুরো পোস্টটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। পড়লে অনেক উপকৃত হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।তাই নিজে পড়ুন এবং অন্যদেরকেও পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন সেই সাথে মন্তব্য ও শেয়ার করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url