চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি - চা খাওয়ার নিয়ম
আপনি কি জানেন চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং চা খাওয়ার নিয়ম? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য।অনেকেই জানে না চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং চা খাওয়ার নিয়ম কি।
তাই আজ আমি এই আর্টিকেলে চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং চা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি:
জেনে নেয়া ভালো স্বাস্থ্য রক্ষায় চা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চায়ের মধ্যে পুষ্টিগুণ সামান্য হলেও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি? তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।যেহেতু চা আমাদের নিত্য দিনের ব্যস্ত সংগী সেহেতু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতখানি উপকারী তা আমরা জানবো। আজ আসুন চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি ? তা আমরা জেনে নেই।
স্বাস্থ্য রক্ষায় চা এর উপকারিতা:
স্বাস্থ্য রক্ষায় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চায়ের মধ্যে রয়েছে নানাবিধ পুষ্টিগুণ। এতে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেমন-পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ক্যাঠেচিন। পলিফেনলস এবং ক্যাঠেচিন ফ্রি রেডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেয় এবং কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে বাধাগ্রস্থ করে।
আরো পড়ুন: রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি-কোথায় পাওয়া যায়
এই কারণে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । চায়ে উপস্থিত পলিফেনলসের পরিমাণ 25% এরও বেশি। যা দেহের অভ্যন্তরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চায়ের মধ্যে ৭% থিওফাইলিন ও থিওব্রোমিন থাকায় শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির জন্য অনেক উপকারী।
গ্রিন টি বা সবুজ চা এর উপকারিতা:
চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং চা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে আমরা জানবো গ্রিন টি বা সবুজ চা খাওয়ার উপকারিতা কি। স্বাস্থ্য সুন্দর, সবল ও হ্যান্ডসাম রাখার জন্য অনেকেই আমরা গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের প্রতি বেশি ঝুকছি। গবেষকরা বলেন, যারা দিনে দুই কাপ গ্রিন টি বা সবুজ চা পান করে।
তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি ফিট থাকে। সবুজ চায়ে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা প্রতিটি মানুষের শরীরেই প্রয়োজন। নিয়মিত গ্রিন টি বা সবুজ চা পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কিছুটা কমে যায়। এছাড়া কিডনি রোগ, হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকিও কমায় এবং ডায়াবেটিস রোগীর জন্য গ্রিনটি ভীষণ উপকারী।
আদা চা খাওয়ার উপকারিতা :
আদা চা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। মাথাব্যথা, সর্দি কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি গরম আদা চা পান করলে এই সমস্ত অসুখ অনেক কমে যায়। আদার প্রাকৃতিক শীতল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ঘাম কে উদ্দীপিত করে। ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে। আদা চা হজমে সাহায্য করে এবং পেট ফাঁপা, বদহজম, গ্যাস ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।
আমাদের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে বের করে দিতে সাহায্য করে ।এটি ত্বককে পরিষ্কার করে।
লাল চা বা রং চা খাওয়ার উপকারিতা:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় লাল চা। ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রমণ ও অন্ত্রের প্রদাহ থেকে প্রতিরোধ করে দেহকে সুরক্ষা করে। নিয়মিত লাল চা খেলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে।এছাড়া লাল চায়ের মধ্যে থাকা ফ্লোরাইড যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ক্যান্সার ও দাঁতের ক্ষয় তৈরি কারি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে।
তাই এ সমস্ত রোগ প্রতিরোধের জন্য আমাদের রং চা বা লাল চা খাওয়া উচিত।
দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা:
দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা নেই বললেই চলে।চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং চা খাওয়ার নিয়ম এর মধ্যে দুধ চা হচ্ছে একটি জনপ্রিয় চা। এখন আমরা জানবো দু চা খাওয়ার উপকারিতা কি। ক্লান্তি দূরীকরনে দুধ চা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।নিয়মিত দুধ ছাড়া চা ও কফি পানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
চা বা কফি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় অনেকটাই কমিয়ে দেয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অনেকেই আছে দুধ চা পছন্দ করে কিন্তু অন্যান্য চায়ের চেয়ে দুধ চায়ে উপকারিতা কম। বরং অপকারিতাই বেশি। পুষ্টিবিদরা জানান চায়ের সঙ্গে দুধ- চিনি মেশালে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে অথবা অন্যান্য রোগ আছে তাদের জন্য দুধ চা খাওয়া খুবই ক্ষতিকর।
দুধ চা খেলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন-ওজন বেড়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য,অনিদ্রা, হজমে সমস্যা, রক্তে চাপ বৃদ্ধি, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।তাই দুধ চায়ের চেয়ে আদা চা, লাল চা, লেবু চা, সবুজ চা খাওয়ার উপকারিতা বেশি। দুধ চাইয়ে পুষ্টি গুনাগুন খুব একটা থাকে না। তাই দুধ চা না খাওয়াই আমাদের উচিত।
লেবু চা খাওয়ার উপকারিতা:
চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি। এর মধ্যে লেবু চা হচ্ছে একটি জনপ্রিয় অন্যতম চা। চা স্টলে বেশিরভাগ দেখা যায় লেবু চায়ের প্রতি মানুষের আকৃষ্ট বেশি। গলা ব্যথা, মুখের ঘা,টনসিলের সংক্রমণ রোধে লেবু চা দারুন কাজ করে। ভিটামিন সি আর পটাশিয়ামযুক্ত লেবু চা রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদপিন্ডের কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
লেবু চা দাঁতের ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে লেবু চা সাহায্য করে। লেবু চা পান করলে ত্বকে কোলাজনের মাত্রা বেড়ে যায় ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। এছাড়া লেবুর রসের ভিটামিন সি দূর করে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা। তাই আপনার যদি এ সমস্ত অসুখ থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত লেবু চা পান করতে পারেন।
চা খাওয়ার নিয়ম:
চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা এতক্ষণ উপরে আলোচনার মাধ্যমে আপনি হয়তো কিছুটা হলেও জানতে পেরেছেন। এ পর্যায়ে চা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আলোচনা করার দরকার। খালি পেটে চা খাওয়ার কোন উপকারিতা আছে কি ? খালি পেটে চা না খাওয়াই ভালো ।খালি পেটে দুধ চা খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি।
তবে খালি পেটে সবুজ চা খেলে খুব একটা ক্ষতি নেই বরং উপকার হতে পারে। খালি পেটে তা না খেয়ে হালকা কিছু খেয়ে চা খেলে উপকার হতে পারে। একবারেই খালি পেটে না খেয়ে একটি বিস্কুট, কলা বা অল্প মুড়ি খেয়ে চা পান করলে কোন ক্ষতি নেই ।খালি পেটে দুধ চা খেলে ক্ষতি হয় কারণ গ্যাস হতে পারে, বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে।
তাই আপনি যদি চা খেতে চান তাহলে খালি পেটে না খেয়ে হালকা কিছু নাস্তা করে হলেও চা খাবেন।
চা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আরো জানুন:
ভরা পেটে বা খাবারের পরে চা খাওয়ার কোন উপকারিতা আছে কি?সাধারণত ভরা পেটে বা খাবারের ঘন্টাখানেক পরে চা খেলে কেমন ক্ষতি হয় না। ভরা পেটে চা খেলে তা সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের পাচনতন্ত্রের উপর। যার ফলে খাবার ভালো করে হজম হয় না।
গ্যাস্টিকের সমস্যা লেগেই থাকে ভারী খাবারের পর ঘুমানো, ধূমপান করা, গোসল করা, ফল খাওয়া ও চা পান করা এই কয়টি জিনিস হতে নিষেধ করেছেন গবেষকরা। ভারী খাবারের ঘন্টা খানেক আগে বা ঘন্টাখানেক পরে চা খেলে কোন ক্ষতি হয় না।আমরা সারাদিন যা খাই সেখান থেকেই আমাদের শরীর পুষ্টি গ্রহণ করে কিন্তু আপনি যদি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বা ভরা পেটে চা পান করেন তবে তা পুষ্টির উপর প্রভাব ফেলবে।
সেই সাথে খাবার ঠিকমত হজম নাও হতে পারে। প্রতিদিন ভরা পেটে চা খাওয়ার কারণে আপনার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। তাই আমাদের এই ধরনের অভ্যাস বাদ দেওয়াই ভালো।
কখন চা খাওয়া উচিত:
চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি বা কখন চা খাওয়া উচিত। সে সম্পর্কে আরো জানুন ।খাবার খাওয়ার অন্তত আধা ঘন্টা আগে বা খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা পরে আমাদের চা পান করা উচিত। শত বছরের বেশি সময় ধরে উপমহাদেশে পানীয় হিসাবে চা খুব জনপ্রিয়।কিন্তু চা কি সব সময় পান করা উচিত ?
অনেক পুষ্টিবিদরা মনে করেন সকালের দিকে চা পান করা সবচেয়ে ভালো। কারণ এই পানীয়তে আছে ক্যাফিন। ক্যাফিন শরীর সতেজ করে ,কাজের শক্তি যোগায় ফলে কাজ শুরুর আগে এক কাপ চা শরীরের অনেকটাই কার্যকর হতে পারে। দুই বেলার খাবারের মাঝখানে চা পান করা ভালো।
এমনটিও মনে করেন অনেক পুষ্টিবিদরা। অন্যদিকে রাতে যাদের চায়ের অভ্যাস তাদের ঘুমের সমস্যা ঘটাতে পারে ক্যাফিন। ফলে ঘুমের আগে চা পান থেকে বিরত থাকাই ভালো।
সারাদিনে কত কাপ চা খাওয়া উচিত:
প্রচন্ড গরমের সময় গরম চা না খাওয়াই ভালো। গরম চা না খাওয়াই গরমের সময় বুদ্ধিমানের কাজ। সাধারণত গরমের সময় দুপুর টাইমে বা দুপুরের পরে বা দুপুরের আগ মুহূর্তে প্রচন্ড শরীরে গরম লাগে। প্রচন্ড গরমের মধ্যে চা খেলে শরীরে আরো গরম ধরে যাবে। এমনকি পেটের সমস্যাও বাড়তে পারে।
আরো পড়ুন: রাতে শসা খেলে কি হয়- শসা খাওয়ার নিয়ম
তাই প্রচন্ড গরমের সময় যদি চা খেতে চান তাহলে সকালেই চা খাওয়া ভালো ।সকালে চা খেলে কর্মব্যস্ততায় শরীর চাঙ্গা থাকে। সাধারণত কফির মধ্যে আছে ৬০ থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ।এবং অন্যদিকে চায়ের মধ্যে আছে ৩০ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ।সেই হিসাবে সারা দিনে দুই থেকে পাঁচ কাপের বেশি কফি খাওয়া আমাদের উচিত নয়।
এবং অপরদিকে পাঁচ থেকে সাত কাপের বেশি চা খাওয়া আমাদের উচিত নয়। অতিরিক্ত যেকোনো কিছু খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর ।তাই প্রত্যেকটা খাবার আমাদের নিয়ম অনুসারে যতটুকু খাওয়ার প্রয়োজন ঠিক ততটুকু খাওয়া উচিত।
উপসংহার-চা খাওয়ার উপকারিতা কি কি চা খাওয়ার নিয়ম:
প্রিয় পাঠক, চায়ের মধ্যে বা চা খাওয়ার মধ্যে কি ধরনের উপকার পাবেন এবং চা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কখন চা খাওয়া উচিত, কত কাপ খেতে হবে, কি কি চা খেলে শরীরের জন্য উপকার হবে, তা বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
আশা করছি আপনি এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়বেন এবং অন্যদেরকেও পড়ার জন্য শেয়ার করবেন ।তাই পোস্টটি যদি আপনার বিন্দুমাত্র উপকার হয়ে থাকে তাহলে আমি লেখক হিসাবে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url