রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি -কোথায় পাওয়া যায়
আপনি জানেন কি রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি এবং কোথায় পাওয়া যায়।অনেকেই জানেনা যে রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি এবং কোথায় পাওয়া যায়।
চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি এবং কোথায় পাওয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
রাজশাহীতে কি ধরনের আম চাষ হয়
রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি এবং কোথায় পাওয়া যায় তা আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানা দরকার রাজশাহীতে কি ধরনের আম চাষ হয়।বাংলাদেশে অনেক জেলায় আমের চাষ হয়। তার মধ্যে রাজশাহী ও চাপাই নবাবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয়।
চাঁপাই নবাব গঞ্জকে আমরা সাধারণত আমের রাজধানী বলে থাকি। এই দুই জেলায় মিলে প্রায় 35 প্রকার আম পাওয়া যায়।এর মধ্যে ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি অন্যতম সেরা আম। যদিও চাপায় নবাবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয়। কিন্তু রাজশাহীর আম স্বাদে সেরা, সুস্বাদু ও মিষ্টি ।
তাছাড়া আশ্বিনা, লক্ষণ ভোগ, কালুয়া ,রানী প্রসাদ ,বারি-৪, হাড়িভাঙ্গা, কাঁচা মিঠা, মোহন ভোগ, আড়াজম্মা,বৃন্দাবন, আম্রপালি ইত্যাদি আম পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা সহ অন্যান্য জেলাতেও অনেক আমের চাষ হচ্ছে। আমকে আমরা সাধারণত ফলের রাজা বলে থাকি। আম পছন্দ নয় এমন মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে।
রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম হিমসাগর আম:
রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি এবং কোথায় পাওয়া যায় এবং এর বৈশিষ্ট্যসহ আলোচনা করবো। রাজশাহীতে কি ধরনের আম চাষ হয় তা জেনে নেওয়া ভালো। বাংলাদেশে অনেক জায়গায় আমের চাষ হয়।তার মধ্যে রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম হচ্ছে হিমসাগর আম।এই আমকে আমরা গ্রামের ভাষায় ক্ষীরসাপাত আম বলে থাকি।
এই আমের মিষ্টি, সুগন্ধ, ও স্বাদ পৃথিবীর অন্যান্য আমের চেয়ে ভিন্ন। তাই সারা পৃথিবীতে স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য হিমসাগর আম বাণিজ্যিকভাবে বহুল পরিমাণে চাষ করা হয়। বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র এই আমটি জি আই সনদপ্রাপ্ত আম। তাই এই আমটিকে রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম বলতে পারি।
হিমসাগর আম গাছে পাকা অথবা কাঁচা অবস্থায় রেখে পরে পাকলে ওই আম এমনিতেই খুবই ভালো লাগে এবং রুটির সাথে মিশিয়ে খেলেও খুবই ভালো লাগে।এই আমটির ফলন অনেক বেশি হয় এবং এই আমের দামও অন্যান্য আমের চেয়ে সব থেকে বেশি।
এই আমটি রাজশাহী জেলার বানেশ্বর, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট, বাঘা বাগমারা,মোহনপুর, পবা, তানোর,গোদাগাড়ী, নাটোর ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহ ইত্যাদি স্থানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
রাজশাহীর সেরা আম গোপাল ভোগ:
আমাদের দেশের উৎকৃষ্ট জাতের আম গুলোর মধ্যে গোপাল ভোগ আম রাজশাহীর সেরা আমের মধ্যে অন্যতম। এই আমটি অনেকটাই গোলাকার হয়ে থাকে। এর বোটা শক্ত পাকার সময় ভোটার আশেপাশে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
অন্য অংশে সবুজ কালচে থেকে যায়। এই আমের আঁশ নেই বললেই চলে। গোপাল ভোগ আম খেতে খুবই মিষ্টি হয়। তাই গোপাল ভোগ আমকেও আমরা রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম বলতে পারি। হিমসাগর আমের পরেই গোপালভোগ আমের স্থান হিসাবে আমরা চিহ্নিত করতে পারি।
এই আমটি যখন পাকে তখন খেতে অনেক সুস্বাদু ও মিষ্টি হয়।এই আমটি খালি মুখে খেতে অনেক ভালো লাগে এবং রুটির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অনেক মজা লাগে। চিড়া এবং গোপাল ভোগ আম তার সাথে একটু দুধ মিশিয়ে একসাথে মেখে খেলে অনেক মজা লাগে।
রাজশাহীর লক্ষণভোগ আম:
লক্ষণ ভোগ আম মিষ্টি কম হওয়ার কারণে আমরা কেউ কেউ ডায়াবেটিস আম বলে থাকি। এটি কে আমরা গ্রামীণ ভাষায় লকনা বলে থাকি। মিষ্টি কম হওয়ার কারণে এই আমটিকে ডায়াবেটিস রোগী ।
আরো পড়ুন: ঘামাচি পাউডার কোনটা ভালো
এবং যারা মিষ্টি কম পছন্দ করেন তারাও এটিকে বেছে নিতে পারেন ।আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হন এবং আপনি যদি মিষ্টি কম পছন্দ করেন তাহলে রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম লক্ষণভোগ আমকে আপনি বেছে নিতে পারেন।
অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত এই আমটি রাজশাহীর চারঘাট, পুঠিয়া, নাটোর, দুর্গাপুর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেশি পাওয়া যায়। এই আমটি যখন পাকে তখন দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সুগন্ধও বটে কিন্তু খেতে অতটা সুস্বাদু বা মিষ্টি নয়।
রাজশাহীর রানী প্রসাদ আম :
রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি এবং কোথায় পাওয়া যায়।সে সম্পর্কে আরো বর্ণনা করতে গিয়ে রানী প্রসাদ আমটির কথা আমার এখন মনে পড়ে গেল। রাজশাহীর বিখ্যাত আমের মধ্যে রানী প্রসাদ আম অতি অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমি একবার এই আমটি খেয়ে অনেক মজা পেয়েছিলাম।
এই আমটির গাছের চারা রোপন করার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সেটা আমার জায়গার অভাবে রোপন করা হয়নি। এই আমটির কথা আমি এখনো ভুলতে পারিনি কারণ এত স্বাদ, এত মিষ্টি, এত দেখতে সুন্দর।রানী প্রসাদ আম অন্যান্য আমের তুলনায় দেখতে খুবই সুন্দর ও খুবই মিষ্টি ও খুবই সুস্বাদু।
আপনি যদি বুঝতে চান যে রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি তাহলে আপনি এই রানী প্রসাদ আম একবার খেয়ে দেখতে পারেন। এই আমটি এই অঞ্চলে কম পাওয়া গেলেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বহুল পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
রাজশাহীর কাঁচা মিষ্টি আম :
রাজশাহীর সেরা আমের মধ্যে কাঁচা মিষ্টি আম একটি অন্যতম। এই আমটি পাকার আগেই খেতে মিষ্টি।তাই এই আমের নাম হয়েছে কাঁচা মিষ্টি আম। এই আমটি রাজশাহী , নবাবগঞ্জ সহ অন্যান্য স্থানে পাওয়া যায়।
এবং বর্তমানে কম পাওয়া গেলেও এটি অনেক আগের প্রচলিত আমের মধ্যে বেশ নাম ডাক ছিল ।কাঁচাকালেই যখন এই আম খেতে মিষ্টি তখন পাকলে তো আরোই মিষ্টি।তাই এই আম বর্তমানে কম পাওয়া গেলেও একসময় এই আম খুব প্রচলন ছিল।
অশ্বিনী আম রাজশাহীর টক জাতীয় আম:
রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আমের মধ্যে আশ্বিনি আম এক প্রকার টক জাতীয় আম। এই আম খুবই জনপ্রিয় একটি আম। এই আমটি সমস্ত আমের চালান যখন শেষ হয়ে যাবে সবার শেষে এই আমটি পাকে এবং বাজার জাত করন হয়। এই আমটি পৃথিবীর সমস্ত আমের মধ্যে কাঁচা আম খেতে সবচেয়ে বেশি টক জাতীয় একটি আম।
তবে এই আমটি সবার শেষে যখন পাকে তখন খেতে খুবই মিষ্টি এবং মজা লাগে। এই আমের আটি খুবই পাতলা হয়। এই আম কাঁচা খেতে অনেক টক লাগে এজন্য আমরা গ্রামের ভাষায় বলে থাকি "আসনে না পাকলে খাসনে"। আসনে আম দেশের সবচেয়ে টক ও নামলা আম।
এ আমের উৎপাদন অনেক দেরিতে হয় এবং তাই বাজার জাতকরণ করা হয় সবচেয়ে দেরিতে। উৎপাদিত শেষের আম হিসাবে এই আমটি যখন পাকে তখন খেতে খুবই সুগন্ধ ও খেতে খুবই মিষ্টি হয়।
রাজশাহীর ল্যাংড়া আম :
রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আমের মধ্যে ল্যাংড়া আম একটি অন্যতম সেরা ফল।দেশে যে কয়টি উৎকৃষ্ট জাতের আম গুলোর মধ্যে ল্যাংড়া সবচেয়ে এগিয়ে। এই আমের পাকার সময় সবুজ থেকে হলুদ রং ধারণ করে। অত্যন্ত রসালো এই আমটি মিষ্টতার পরিমাণ অনেক বেশি।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করে এবং সহজেই চিনতে পারে এবং এটি একটি অনেক পরিচিতি আম। এই আমটি রাজশাহী ,নাটোর ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বানেশ্বর, চারঘাট, বাঘা, বাঘমারা, মোহনপুর সহ বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পাওয়া যায়।
ফজলি রাজশাহী বিখ্যাত আম:
রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি এবং কোথায় পাওয়া যায় এইসবের মধ্যে ফজলি আম রাজশাহীর একটি অন্যতম প্রধান আম।এই আমটি অনেক বড়, লম্বা এবং মোটা হয় ।এই আমটি কাঁচা খেতে মোটামুটি যখন পুষ্ট হয় তখন অল্প অল্প মিষ্টি লাগে। বহুল প্রচলিত এই ফজলি আম রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আমগুলোর মধ্যে একটি।
এটি পাকার আগ মুহূর্তে কাঁচা খেলেও খুব একটা টক লাগে না। আর এই আমটি যখন গাছে পাকে তখন খেতে খুবই স্বাদ ও মিষ্টি ও সুগন্ধায় ভরে থাকে।এই আম অন্যান্য আমের তুলনায় বাজারে আসতে একটু দেরি হয়।
আম্রপালি রাজশাহীর সেরা আম:
বাণিজ্যিকভাবে সফল ও বাংলাদেশে বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় আম হচ্ছে আম্রপালি আম। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটির কারণে অন্যান্য আমের থেকে এই আমের ফলনও বেশ ভালো। সাধারণত অন্যান্য আম এক বছর ফলন দিলে পরের বছর ফলন খুব একটা হয় না, হলেও কম হয়।
আরো পড়ুন: রাতে শসা খেলে কি হয়- শসা খাওয়ার নিয়ম
কিন্তু আম্রপালি আম প্রতিবছরই অনেক বেশি ফলন হয়। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে বর্তমানে রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি তাহলে নির্দ্বিধায় আপনি বলতে পারেন আম্রপালি আমের নাম। কারণ এই আমটি আকারে গাছ ও আম ছোট হলেও অত্যন্ত সুস্বাদু, সুগন্ধি, রসালো এই আমটিতে কোন আঁশ নেই ।
এর আবরণ পাতলা ও আটি খুবই ছোট।আম্রপালি আম মসৃণ ত্বক ,খোসা পাতলা বিশিষ্ট এই ছোট আকৃতির আমটি দ্রুত সমূহে এদেশের মানুষের নিকট খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
উপসংহার- রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি এবং কোথায় পাওয়া যায়:
প্রিয় পাঠক বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে এ কথা বলে শেষ করবো যে রাজশাহীর সবচেয়ে সেরা আম কোনটি এবং কোথায় কোথায় পাওয়া যায় তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনি এবং আপনার সহপাঠীরা আমার এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। পড়লে ইনশাল্লাহ অনেক উপকৃত হতে পারেন ।
তাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমার এই পোস্টটি শেষ করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url