ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা সবারই তা জানা উচিত
প্রিয় পাঠক বন্ধু,আপনি জানেন কি ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা? অনেকেই জানতে চায় ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না। আপনি যদি না জেনে থাকেন যে ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
আজ আমি এই পোস্টে আলোচনা করব ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা তার বিস্তারিত। চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ।
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা:
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা ১০০% কোনোক্রমেই ভালো হয় না।এই রোগের যত প্রকার উন্নত চিকিৎসা রয়েছে সেই উন্নত চিকিৎসা প্রয়োগ করলেও ডায়াবেটিস পুরোপুরি ভালো হয় না। এবং এর এখন পর্যন্ত কোন ঔষধও আবিষ্কার হয়নি ।তাই ডায়াবেটিস হলে এটি কে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে নিয়ন্ত্রণ রাখা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস প্রত্যেকটা মানুষের শরীরে আছে। তবে কারো কম, আবার কারো বেশি, কারো নর্মাল বা স্বাভাবিক। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে যেসব উপকরণ বা যে সব জিনিস খাওয়াই যাবেনা বা খাওয়া উচিত নয় তা হল মিষ্টি, সাদা চালের ভাত, সাদা রুটি, পাস্তা ,কাঁচা লবণ, চিনিসহ চা ,কফি, চিনি দিয়ে তৈরি যে কোন খাবার,
খেজুরের রস, আখের রস, মধু, ডিমের কুসুম, কোল্ড ড্রিঙ্কস, মিষ্টি জাতীয় ফল যেমন- পাকা কলা, পাকা আম, পাকা পেঁপে,চাইনিজ খাবার,দোকানের ফলের রস,গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস,অ্যালকোহল ,আলু, মাখন, ঘি, দুধ, মিষ্টি দই, চকলেট, ভাজাপোড়া খাবার, কেক, আঙ্গুর, আনারস সবেদা পাকা কাঁঠাল, বাটার ইত্যাদি।
এখন আমি কি কি খেলে ডায়াবেটিস বাড়বে না তা পয়েন্ট আকারে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি আপনি আমার এই আর্টিকেল এর সঙ্গেই থাকবেন।
ডায়াবেটিস হলে চিনি থেকে দূরে থাকুন:
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা তার প্রথম ধাপ হচ্ছে তিনি বা মিষ্টি জাতীয় কোন কিছুই খাওয়া যাবে না। এমনকি চিনি দিয়ে তৈরি কোন কিছুই খাওয়া উচিত নয় কারণ মিষ্টি কোলেস্ট্রোরেলের মাত্রা অনেক গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। মিষ্টি জাতীয় যত খাবার আছে বা তিনি দিয়ে তৈরি যত খাবার আছে তা ডায়াবেটিস রোগীদের সবগুলোই পরিহার করতে হবে।
প্রোটিন ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকর:
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা এই তালিকার মধ্যে প্রোটিন জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।আমাদের শরীরে প্রোটিন জাতীয় খাবার খুবই উপকারী হলেও আপনার যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন- গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস ইত্যাদিতে উচ্চমাত্রার প্রোটিন রয়েছে।
তাই উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে এই জাতীয় প্রোটিনযুক্ত খাবার না খেয়ে শীম ,বাদাম ইত্যাদি প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়ে প্রোটিন গ্রহণ করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর সাদা ভাত ও সাদা রুটি থেকে বিরত:
যেসব খাবার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় তার মধ্যে সাদা চালের ভাত ও সাদা আটার রুটি বা পাউরুটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সাদা চালের ভাত ও সাদা আটার রুটি ডায়াবেটিস রোগীদের বিশাল মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কারণ সাদা-আটার রুটি বা সাদা ভাতের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার শ্বেতসার ।তবে লাল চালের ভাত ও লাল আটার রুটি বা পাউরুটি খাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিস হলে ফল বা ফলের জুস খাওয়া নিষেধ:
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা সেই তালিকার মধ্যে ফল বা ফলের জুস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ফলের রস বা ফলের মধ্যে উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক চিনি থাকে ও ফাইবার কম থাকে যা শর্করার মাত্রা তাড়াতাড়ি বাড়াতে সক্ষম হয়। যেমন পাকা আমের জুস বা শুধু পাকা আম, কমলার জুস ইত্যাদি।
এছাড়া পাকা কলা ,পাকা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ।খেজুরের রস, আখের রস ,মধু ইত্যাদি খাবার ডায়াবেটিস ধরা পড়লে না খাওয়াই উত্তম।
ডায়াবেটিস হলে দই থেকে বিরত থাকুন :
ডায়েট করা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মিষ্টি দই একটি চরম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি ভুল খাবার কারণে আপনার ডায়াবেটিসের পয়েন্ট বা মাত্রা আরো বেশি হতে পারে ।তাই আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে মিষ্টি দই খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এইসব মিষ্টি দইয়ের মধ্যে থাকে প্রিজারভেটিভ ও চিনি যা রক্তে কোলেস্ট্ররেলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।
সুতরাং মিষ্টি দই এড়িয়ে চলুন। তবে টক দই খেলে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বাড়বে না বরং উপকার হতে পারে।
কার্বোহাইড্রেট খাবার ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়ায়:
আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তাহলে কার্বোহাইড্রেট খাবার থেকে দূরে থাকাই ভালো।এসব খাবারে থাকা তিনি আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। কার্বোহাইড্রেট খাবার যেমন প্যানকেক, মাখন, ম্যাপেল সিরাপ, চিনি, সাদা ভাত, পাউরুটি, দুধ, দই,পনির ,আলু, কলা, আপেল আঙ্গুর, কমলা, তরমুজ, স্ট্রবেরি, গম, মসুর ডাল, ছোলা, চিনা বাদাম ইত্যাদি।
মাংস এবং আলু ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতি:
আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস এবং আলু খাওয়া আপনার উচিত হবে না।কারণ এইসব মাংসতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন যা আপনার রক্তে কোলেস্ট্রলেলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।এছাড়া আলুতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার শ্বেতসার ও গ্লাইসেমিক উপাদান।
এই সব উপাদান ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সক্ষম করে। কাজেই গরুর মাংস, আলু ,মিষ্টি আলু ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলতে হবে।
এনার্জি ড্রিংকস ও কিসমিস ডায়াবেটিসের ক্ষতি:
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা এই তালিকায় কোল্ড ড্রিংকস ও কিসমিসও রয়েছে। এনার্জি ড্রিংক ও কিসমিস খেলে ডায়াবেটিসের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। কৃত্রিম মিষ্টি দ্রব্য থাকার কারণে আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে এনার্জি ড্রিংকস খাওয়া বাদ দিন।
কিসমিসের মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি ও ক্যালরি রয়েছে। তাই কি কিসমিস এবং এই ধরনের শুকনো খাবার না খাওয়াই উচিত।
ভূট্টা ও ডিম ডায়াবেটিস হলে খাওয়া যাবেনা:
ভূট্টাতে রয়েছে ভিটামিন ,মিনারেল ও আঁশ ।এটি খেলে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই ভুট্টা খাওয়া বা ভুট্টা দিয়ে যেকোনো জিনিস তৈরি খাবার না খাওয়ায় ভালো ।ডায়াবেটিস রোগীরা ও হৃদরোগ রা ডিম এড়িয়ে চলাই ভালো কারণ এতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকে।
তবে ডিমের কুসুম না খেয়ে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যেতে পারে। তারপরেও আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডিম খাওয়া উচিত
ডায়াবেটিসের জন্য চাইনিজ খাবার:
আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে চাইনিজ খাবার পরিহার করুন। কারণ এতে রয়েছে যথেষ্ট চিনি জাতীয় উপাদান যা রক্তে সুগারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এই খাবার যথেষ্ট সুস্বাদু ও মুখরুচো হলেও ডায়াবেটিস ধরা পড়লে চাইনিজ খাবার খাওয়া থেকে অনেক দূরে থাকতে হবে। চাইনিজ খাবার
যেমন--ড্রাগন চিকেন, চাইনিজ নুডুলস, স্প্রিং রোল, ভেজিটেবল ফ্রাইড রাইস,চিকেন ফ্রাইড রাইস, মুন কেক, এগ ফ্রাইড রাইস,চাইনিজ বিফ উইথ ভেজিটেবল, চাইনিজ স্যুপ ,চিকেন মাশরুম,চিকেন চিলি, চাইনিজ স্যুপ, গ্রীক সালাদ, মিক্সড ফ্রাইড রাইস,চিকেন ফ্রাইড রাইস ইত্যাদি খেলে ডায়াবেটিসের পয়েন্ট আরো বাড়তে পারে। এছাড়া বেশি ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
ডায়াবেটিসের জন্য অ্যালকোহল ক্ষতি নাকি উপকার:
আসলে ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা অল্প বয়স থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ সবারই ডায়াবেটিস হতে পারে অনেকেই মনে করেন অ্যালকোহল বা মদ পান থেকেও আপনার শরীরে ডায়াবেটিস দেখা যেতে পারে তাই ডায়াবেটিস থাকুক বা না থাকুক অ্যালকোহল বা যেকোন মাদক সেবন থেকে বিরত থাকাই ভালো।
মদ্যপান করলে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ডায়াবেটিস যাদের নিয়ন্ত্রণে নেই তাদের জন্য অ্যালকোহল বা মধ্যপান শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত মধ্যপানে অথবা অতিরিক্ত সময় ধরে মধ্যপানে নানা ধরনের বিপদ ঘটতে পারে।
যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হাট ,লিভারের ক্ষতি, ক্যান্সার এবং সুগারের রোগীদেরও আরো সুগার বাড়তে পারে। সুতরাং আপনার ডায়াবেটিস থাকুক বা না থাকুক বা আপনার শরীর সুস্থ থাকলেও অ্যালকোহল থেকে অনেক দূরে থাকতে পরামর্শ দিচ্ছি ।
ডায়াবেটিস কত হলে চিকিৎসা বা ইনসুলিন দরকার:
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা তা উপরের অংশে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বা ইনসুলিন বিষয়ে আমাদের জানা দরকার। সিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ যদি খালি পেটে ৪.৭ হলো নরমাল।
আর ভরা পেটে 8 থেকে 9 হলো নরমাল। ভাড়া পেটে ৯ পয়েন্টের বেশি হলে ডায়াবেটিস ধরা হয় আর খালি পেটে ৭ পয়েন্টের বেশি হলে ডায়াবেটিস ধরা হয়। এখন প্রশ্ন হলো ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন দরকার।আপনার যদি গ্লুকোজের পরিমাণ ১৬.৭ মিলিমোল বা ৩০০ গ্রাম/ ডেসিলি এর বেশি হয় তাহলে ইনসুলিন দেওয়া উচিত।
আবার গড়ে যদি গ্লুকোজের পরিমান এইচবিএ১সি ১০% এর বেশি হয় তাহলে ইনসুলিন দেওয়া দরকার। বিশ্বে কোথাও ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বা ঔষধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি যা চিরতরে ডায়াবেটিস ভালো হয়ে যাবে। আসলে ডায়াবেটিস পুরোপুরি ভালো হয় না। এটাকে বিভিন্ন ধরনের কায়দা কৌশল ,খাওয়া দাওয়া বা ডায়েট, ব্যায়াম ,চিকিৎসকদের কাছ থেকে পরামর্শ, নিয়ম কানুন এর মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
তবে অধিক পরিমাণ আপনার যদি ডায়াবেটিস পয়েন্ট হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুতভাবে।ডায়াবেটিসের পয়েন্ট যদি 16.7 মিলিমোল এর বেশি হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ইনসুলিন ব্যবহার করা উচিত এবং নিয়ন্ত্রণের যে নিয়ম কানুন বা তালিকা রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
লেখক এর শেষ কথা- ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা:
প্রিয় পাঠক বন্ধু ডায়াবেটিস ধরা পড়লে যে সমস্ত খাবার খাওয়া উচিত নয় সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আপনি যদি আমার এই পোস্টটি পুরোপুরি পড়ে থাকেন তাহলে ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা আপনি জানতে পারবেন।আশা করছি পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।তাই আর বেশি না লিখে এখানেই শেষ করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url